Islam QA ওয়েবসাইটের জন্য দান করুন

আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্‌ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।

বন্দি লোকের নামায কসর করা ও একত্রে আদায় করা কি জায়েয?

04-01-2021

প্রশ্ন 222814

আমার এক ছেলে ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। এক শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করার অভিযোগে তাকে (পাঁচ বছর) ধরে জেলে রাখা হয়েছে। সে তার এলাকা থেকে ১০০ কিঃমিঃ দূরে জেলে বন্দি আছে। প্রশ্ন হচ্ছে: জেলখানার এই পরিস্থিতিতে তাদের জন্য নামায কসর করা ও একত্রে আদায় করা কি বৈধ হবে? বিশেষতঃ তাদেরকে জুমার নামায পড়তে দেয়া হয় না। দশমাস যাবত তারা জুমার নামায পড়েনি।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

যদি আটককৃত ব্যক্তিকে তার এলাকার বাইরে কসর পরিমাণ দূরে অবস্থিত কোন জেলখানায় রাখা হয় তাহলে তার হুকুম মুসাফিরের হুকুম।

যদি সে ব্যক্তি না জানে যে, কখন সে জেলখানা থেকে বের হবে তাহলে সে নামায কসর করবেন এবং প্রয়োজন হলে দুই ওয়াক্তের নামায একত্রে আদায় করবেন; মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত কিংবা এ তথ্য জানা পর্যন্ত যে, তাকে চারদিনের বেশি সময় জেলখানাতে থাকতে হবে।

আর যদি সে ব্যক্তি জানে যে, তাকে চারদিনের বেশি সময় জেলে থাকতে হবে; উদাহরণস্বরূপ যে ব্যক্তির এর চেয়ে বেশি সময় জেলে থাকার রায় হয়েছে—অধিকাংশ ফিকাহবিদ আলেমগণের মতে, সে ব্যক্তি সফরের সুযোগগুলো গ্রহণ করবে না।

সফরের সুযোগগুলো গ্রহণের দূরত্ব অধিকাংশ ফিকাহবিদ আলেমের মতে, প্রায় ৮০ কিঃমিঃ। যে ব্যক্তি এ পরিমাণ দূরত্ব বা এর চেয়ে বেশি দূরত্ব সফর করবেন তিনি সফরের সুযোগগুলো নিতে পারেন, যেমন— তিনদিন তিনরাত মোজার ওপর মাসেহ করা, নামাযগুলো একত্রে আদায় করা ও কসর করা এবং রমযান মাসে রোযা না-রাখা।

আর যে মুসাফির কোন এক শহরে অবস্থান করছেন কিন্তু সে জানে না কখন তার কাজ শেষ হবে এবং সে সেখানে অবস্থান করার জন্য কোন সময় নির্দিষ্ট করেনি—এমন ব্যক্তি সফরের সুযোগগুলো গ্রহণ করতে পারেন; এমনকি তার অবস্থানকাল অনেক দীর্ঘ হলেও।

ইবনে কুদামা (রহঃ) 'আল-মুগনি' গ্রন্থে (২/২১৫) বলেন:

যে ব্যক্তি ২১ ওয়াক্ত নামাযের চেয়ে বেশি সময় অবস্থানের মনস্থির করেনি সে ব্যক্তি কসর করতে পারেন। এমনকি তিনি যদি কোন কাজ শেষ করার তাগিদে কিংবা শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে কিংবা শাসক তাকে আটক রাখার কারণে কিংবা অসুস্থতার কারণে বছরের পর বছর থেকে যান তবুও। কসরের সময়ের চেয়েও কম সময়ের মধ্যে কাজটি নিষ্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকার পর যদি স্বল্প সময়ে কিংবা বেশি সময়ে কাজটি নিষ্পন্ন হওয়ার প্রবল ধারণা হয় তবুও হুকুমে হেরফের হবে না।

ইবনুল মুনযির (রহঃ) বলেন: আলেমগণ ইজমা করেছেন যে, মুসাফির যদি মুকীম হওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নেয় তাহলে সে যদি বছর বছর থেকে যায় তবুও সে মুসাফির।[সমাপ্ত] দেখুন: 105844 নং প্রশ্নোত্তর।

দুই:

জেলের সেলে আটক ব্যক্তিদের উপর জুমার নামায আদায় করা ফরয নয়। যদি জেলের ভেতরে জুমার নামায আদায় করার সুযোগ থাকে তাহলে তাদের উপর ওয়াজিব হবে। প্রত্যেক সেলের বন্দিরা নিজ নিজ সেলে পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামায়াতের সাথে আদায় করবে; যদি জেলখানার মসজিদে গিয়ে নামায পড়া তাদের পক্ষে সম্ভবপর না হয়।

শাইখ বিন বায (রহঃ) বলেন:

"উচ্চ-উলামা-পরিষদ জেলখানার বিভিন্ন সেলে অবস্থানরত বন্দিদেরকে মাইক্রোফোনের মাধ্যমে একই ইমামের অধীনে জামাতে নামায ও জুমার নামাযে একত্রিত করার ব্যাপারে অসম্মতি প্রকাশ করে ফতোয়া দিয়েছেন। যেহেতু জুমার নামায তাদের উপর ফরয নয়। যেহেতু তাদের পক্ষে জুমার নামাযের উদ্দেশ্যে ছুটে যাওয়া সম্ভবপর নয় এবং আরও অন্যান্য কারণে।

প্রত্যেক সেলের বন্দিগণ তাদের নিজ নিজ সেলের ভেতরে জামাত করে নামায আদায় করবে; যদি তাদের সকলকে এক মসজিদে বা একস্থানে একত্রিত করা না যায়।"[মাজমুউ ফাতাওয়া বিন বায (১২/১৫৫-১৫৬)]

স্থায়ী কমিটির আলেমগণ বলেন:

"যদি জেলেখানার ভেতরে জুমার নামায আদায়ের ব্যবস্থা করা হয় এবং সে –অর্থাৎ বন্দি ব্যক্তি- যদি সেটা আদায় করার সাধ্য রাখে তাহলে তার উপর জুমার নামায পড়া ফরয হবে। আর যদি আদায় করার সাধ্য না রাখে তাহলে সে যোহরের নামায আদায় করবে।"[ফাতাওয়াল লাজনা আদ্‌-দায়িমা (৮/১৮৪) থেকে সমাপ্ত]

আর জেলে আটক ব্যক্তিগণের বিরুদ্ধে যদি রায় হয়ে যায় এবং এ রায় যে জেলখানায় বাস্তবায়িত হবে সেখানে তাদের অবস্থান করা স্থিতিশীল হয়ে যায় তখন তাদের হুকুম মুকীম ব্যক্তির হুকুম; তারা নামায কসর করা, নামাযগুলো একত্রে আদায় করা কিংবা রমযান মাসে রোযা না-রাখা ইত্যাদি সুযোগ গ্রহণ করতে পারবেন না। প্রত্যেক সেলের বন্দিগণ নিজ নিজ সেলে জামাতের সাথে নামায আদায় করবেন। তাদের উপর জুমার নামায ফরয নয়; তবে যদি জেল কর্তৃপক্ষ জেলখানার মসজিদে নামায আদায় করার অনুমতি দেয় তাহলে ফরয হবে।

আর যদি তাদের অবস্থা এমন হয় যে, তারা জানে না আগামীকাল তারা কোথায় থাকবে এবং জেল কর্তৃপক্ষ প্রথা অনুযায়ী তাদেরকে এক জেল থেকে অপর জেলে স্থানান্তর করে থাকেন তাহলে এমন বন্দিগণ সফরের সুযোগগুলো গ্রহণ করতে পারবেন। অর্থাৎ তাদের জন্য নামায কসর করা ও একত্রে আদায় করা জায়েয হবে।

আমরা আল্লাহ্‌র তাআলার কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন মজলুম বন্দিদেরকে মুক্ত করে দেন, বিপদগ্রস্ত মুসলমানদের বিপদ দূর করে দেন।

আরও জানতে পড়ুন: 81421 নং প্রশ্নোত্তর।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

মুসাফিরের নামায
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব ওয়েবসাইটে দেখান