আলহামদু লিল্লাহ।.
আপনার আত্মীয়ের উচিত এই মহাপাপ থেকে আল্লাহ্র কাছে তাওবা করা, বেশি বেশি ইস্তিগফার করা ও অনুতপ্ত হওয়া এবং বেশি বেশি নেক আমল করা। আশা করি আল্লাহ্ তার তাওবা কবুল করবেন। কেননা ব্যভিচার কবিরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত। এই গুনাহের জঘন্যতার কারণে আল্লাহ্ তাআলা এর শরয়ি শাস্তি আবশ্যক করেছেন। শাস্তিটি হলো বেত্রাঘাত কিংবা পাথর নিক্ষেপে হত্যা।
কিন্তু আল্লাহ্ তাআলার রহমত যে, তিনি খালিস তাওবাকে পূর্বের সকল গুনাহ মোচনকারী বানিয়েছেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্যকে ডাকে না, আল্লাহ যে প্রাণকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যে এসব করবে সে আযাবপ্রাপ্ত হবে। কিয়ামতের দিন তার আযাব বর্ধিত করা হবে এবং সেখানে সে অপমানিত অবস্থায় স্থায়ী হবে। তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে পরিণামে আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পূণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[সূরা ফুরক্বান, আয়াত: ৬৮-৭০]
আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেন: “আর যে তাওবা করে, ঈমান রাখে, সৎকাজ করে অতঃপর সঠিক পথে অটল থাকে, তার প্রতি আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল।[সূরা ত্বহা, আয়াত: ৮২]
ব্যভিচারকারী যার সাথে ব্যভিচার করেছে তাকে বিয়ে করা তার উপর আবশ্যক নয়। এটি তার তাওবার জন্য শর্তও নয়। কিন্তু যদি তারা উভয়ে তাওবা করে এবং উভয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে তাহলে এতে কোন অসুবিধা নাই।
এ জন্য আপনার আত্মীয়ের উচিত সেই মেয়ের অবস্থা ও তার পরিবারের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা। যদি দেখে যে, তার জন্য উপযুক্ত এবং জানে যে, সেই মেয়ে তাওবা করেছে ও দ্বীনের উপর স্থির হয়েছে তাহলে সে আল্লাহ্ তাআলার কাছে ইস্তিখারা করার পর সেই মেয়েকে বিয়ে করতে পারে। এটি সেই মেয়ের প্রতি অনুগ্রহ এবং আপনার আত্মীয় সেই মেয়ের প্রতি ইহসান করার সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি। কেননা যদি সেই মেয়ে খারাপ কিছু করে থাকে ও গুনাহ করে থাকে তাহলে সেও তো এক্ষেত্রে তার সাথে সবকিছুতে অংশীদার ছিল। হতে পারে সেইই এই গুনাহর দিকে মেয়েটিকে আহ্বান করেছে ও ফুসলিয়েছে। তাই তার উচিত সেই মেয়ের সাথে এর কিছুটা বহন করা; যাতে তারা উভয়ে অংশীদার ছিল। বরং সে যদি তার সাথে অংশীদার নাও থাকত, তারপরও যদি জানতে পারে যে, মেয়েটি তাওবা করেছে এবং তার তাওবাতে সে বিশ্বস্ত এবং সে যদি এই মেয়েকে বিয়ে করে তার ইজ্জত রক্ষা করতে চায় তাহলে সেটাও একটি মহৎ উদ্দেশ্য; যার জন্য ব্যক্তি সওয়াব পাবেন; ইনশাআল্লাহ্। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “একজন মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার প্রতি জুলুম করবে না। তাকে (জুলুমের মধ্যে) ছেড়ে দিবে না। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করবে আল্লাহ্ তার প্রয়োজন পূরণ করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দুঃশ্চিন্তা দূর করবে আল্লাহ্ কিয়ামতের দিন তার দুঃশ্চিন্তা দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ ঢেকে রাখবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন।”[সহিহ বুখারী (২৪৪২) ও সহিহ মুসলিম (২৫৮০)]
হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন, হাদিসের বাণী: “তাকে ছেড়ে দিবে না” এর মানে তাকে এমন ব্যক্তির সাথে রেখে যাবে না যে তাকে নির্যাতন করবে কিংবা এমন কিছুর মধ্যে রেখে যাবে না যাতে সে কষ্ট পাবে। বরং তাকে সাহায্য করবে এবং তার পক্ষে প্রতিরোধ করবে। এটি জুলুম বর্জন করার চেয়েও অধিক বিশেষায়িত। এটি পরিস্থিতি অনুপাতে কখনও ওয়াজিব, কখনও মুস্তাহাব হতে পারে।
হাদিসের বাণী: “যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করবে”: আবু হুরায়রা (রাঃ) এর হাদিসে এসেছে: “বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে ততক্ষণ আল্লাহ্র তার সাহায্য থাকেন।”[সহিহ মুসলিম]
হাদিসের বাণী: “যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দুঃশ্চিন্তা দূর করে”: অর্থাৎ দুর্ভাবনা যা মানুষেরর মনকে আক্রান্ত করে।[ফাতহুল বারী থেকে সমাপ্ত]
যদি কোন নারী ব্যভিচার থেকে তাওবা করেন তাহলে যে ছেলে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে এগিয়ে আসে তাকে তার সতীচ্ছদ সম্পর্কে জানানো আবশ্যকীয় নয়; এমনকি যদি তাকে জিজ্ঞেস করে তবুও নয়। কেননা সে নিজের দোষ ঢেকে রাখতে আদিষ্ট। সতীচ্ছদ কেবল ব্যভিচারের মাধ্যমে অপসারিত হয় না। বরং অতিরিক্ত ঋতুস্রাব, লাফ দেয়া ইত্যাদির মাধ্যমেও অপসারিত হতে পারে।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।