বৃহস্পতিবার 18 রমজান 1445 - 28 মার্চ 2024
বাংলা

রমযান মাসে একজন মুসলিম

প্রশ্ন

রমযান মাসের আগমন উপলক্ষে আপনারা মুসলমানদের উদ্দেশ্যে কি কোন উপদেশ পেশ করবেন?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসে (স্বগৃহে) উপস্থিত থাকবে, সে যেন এ মাসটি রোযা থাকে। আর কেউ অসুস্থ থাকলে কিংবা সফরে থাকলে সে অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজতা চান; কাঠিন্য চান না। তিনি চান– তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি যে তোমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন সে জন্য তাকবির উচ্চারণ কর (আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর)। আর যাতে তোমরা শোকর কর।”[সূরা বাকারা ২: ১৮৫] এ মহান মাসটি কল্যাণ ও বরকতের মৌসুম, ইবাদত ও আনুগত্যের মৌসুম।

এটি একটি মহান মাস ও সম্মানিত মৌসুম। এমন এক মাস যাতে সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি করা হয়, পাপকেও জঘন্য ধরা হয়, জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে রাখা হয়। যে মাসে আল্লাহ্‌ পাপী-তাপীদের তওবা কবুল করে নেন।

আল্লাহ্‌ আপনাদেরকে কল্যাণ ও বরকতের যে মৌসুমগুলো দিয়েছেন এবং অনুগ্রহ ও অবারিত নেয়ামতের যে উপকরণগুলো আপনাদেরকে বিশেষভাবে দিয়েছেন এর জন্য তাঁর শুকরিয়া আদায় করুন। মহান সময়গুলো ও সম্মানিত মৌসুমগুলোকে আনুগত্যের মাধ্যমে এবং গুনাহ্‌র কাজ ছেড়ে দেয়ার মাধ্যমে কাজে লাগান; ফলে আপনারা দুনিয়ায় উত্তম জীবন ও আখিরাতে সুখ লাভ করবেন।

প্রকৃত মুমিনের কাছে সারা বছরই ইবাদতের মৌসুম। সারা জীবনই নেকীর মৌসুম। কিন্তু, রমযান মাসে তার নেক আমল করার হিম্মত বহুগুণ বেড়ে যায়। তার অন্তর ইবাদতের প্রতি বেশি তৎপর হয় ও আল্লাহ্‌ অভিমুখী হয়। আমাদের মহান প্রতিপালক তাঁর রহম ও করম রোযাদার মুমিন বান্দাদের উপর ঢেলে দেন। এ মহান ক্ষণে তিনি তাদের সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি করার এবং নেককাজের বদলায় উপঢৌকন ও পুরস্কার অবারিত করার ঘোষণা দিয়েছেন।

গতকালের সাথে আজকের কতই না মিল!!

দিনগুলো খুব দ্রুত চলে যাচ্ছে; যেন কিছু মুহূর্তমাত্র। আমরা এক রমযানকে স্বাগত জানালাম, এরপর বিদায় দিলাম। এই তো সামান্য কিছুদিনের ব্যবধানে পুনরায় রমযানকে স্বাগত জানাতে যাচ্ছি। আমাদের কর্তব্য এই মহান মাসে নেক কাজে অগ্রণী হওয়া। আল্লাহ্‌ যা কিছুতে সন্তুষ্ট হন এবং তাঁর সাথে সাক্ষাতের দিন যা কিছু আমাদেরকে আনন্দিত করবে সেসব আমল দিয়ে এই মাসকে ভরপুর করা।

আমরা রমযানের জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নিব?

রমযানের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে, দুই সাক্ষ্যবাণীর বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে, ফরয আমলগুলো পালন করার ক্ষেত্রে, কু-প্রবৃত্তি বা সংশয়মূলক হারাম আমলগুলো পরিত্যাগ করার ক্ষেত্রে নিজেদের ঘাটতিকে সমালোচনা করার মাধ্যমে।

ব্যক্তি নিজেই নিজের আচরণকে মূল্যায়ন করবে যাতে করে মাহে রমযান ঈমানের উচ্চ স্তরে অবস্থান করতে পারে। কারণ ঈমান বাড়ে ও কমে। নেককাজের মাধ্যমে বাড়ে। বদ কাজের মাধ্যমে কমে। তাই বান্দার সর্বপ্রথম যে নেককাজটি বাস্তবায়ন করা কর্তব্য সেটা হচ্ছে– ‘ইবাদত বা উপাসনা শুধু আল্লাহ্‌র জন্য’ এটি বাস্তবায়ন করা এবং মনে মনে এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, আল্লাহ্‌ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। সব ধরণের ইবাদত বা উপাসনা কেবল আল্লাহ্‌র জন্য নিবেদন করবে; এতে অন্য কাউকে তাঁর সাথে অংশীদার বানাবে না। এ দৃঢ় বিশ্বাস রাখবে যে, সে যেটা পেয়েছে (যেটার শিকার হয়েছে) সেটা কিছুতেই ছুটে যেত না। এবং সে যেটা পায়নি (যেটার শিকার হয়নি) সেটা সে কিছুতেই পেত না (শিকার হত না)। সবকিছু তাকদীর অনুযায়ী ঘটে।

এ দুই সাক্ষ্যবাণীর বাস্তবায়ন করার সাথে যা কিছু সাংঘর্ষিক আমরা সেগুলো থেকে বিরত থাকব। আর তা অর্জিত হবে বিদআত ও দ্বীনি ক্ষেত্রে অভিনব প্রচলন করা থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে এবং ‘মিত্রতা ও বৈরিতা’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। অর্থাৎ আমরা ঈমানদারদের সাথে মিত্রতা রাখব এবং কাফের ও মুনাফিকদের থেকে বৈরিতা রক্ষা করব। শত্রুর বিরুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়ে আমরা খুশি হব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাথীবর্গের অনুসরণ করব। তাঁর সুন্নত ও তাঁর পরবর্তী সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীন-এর সুন্নতের অনুকরণ করব। সুন্নতকে ভালবাসব এবং যারা সুন্নতকে আঁকড়ে ধরে, সুন্নতের পক্ষে কথা বলে তাদের দেশ, বর্ণ বা নাগরিকত্ব যেখানের হোক না কেন আমরা তাদেরকে ভালবাসব।

এরপর নেককাজ পালন করার ক্ষেত্রে আমাদের যে কসুর বা ঘাটতি রয়েছে সে ব্যাপারে নিজেরা আত্মসমালোচনা করব। যেমন- জামাতে নামায আদায় করা, আল্লাহ্‌র যিকির পালন করা, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন ও অন্য মুসলিমের হক আদায় করা, সালামের প্রচলন করা, সৎকাজের আদেশ দান, অসৎ কাজের নিষেধ করা, পরস্পর পরস্পরকে হকের উপর থাকা, এর উপর ধৈর্য ধারণ করা, গুনার কাজ না করা, ভাল কাজ করার ব্যাপারে ও তাকদীরের উপর ধৈর্য ধারণ করার ব্যাপারে উপদেশ দেয়া।

এরপর পাপ কাজ ও কু-প্রবৃত্তির অনুসরণে লিপ্ত থাকার ব্যাপারে নিজেদের আত্মসমালোচনা করতে হবে; এগুলোর উপর চলতে থাকা থেকে নিজেদেরকে প্রতিহত করার মাধ্যমে। সেটা ছোট পাপ হোক কিংবা বড় পাপ হোক। সেটা আল্লাহ্‌ কর্তৃক নিষিদ্ধ কিছুর দিকে নজর দেয়ার মাধ্যমে দৃষ্টির পাপ হোক, মিউজিক শুনার মাধ্যমে শ্রুতির পাপ হোক, আল্লাহ্‌ যাতে সন্তুষ্ট নন এমন কোন ক্ষেত্রে পদচারণের পাপ হোক, আল্লাহ্‌ যাতে সন্তুষ্ট নন এমন কিছু ধরার পাপ হোক, আল্লাহ্‌ যা ভক্ষণ করা হারাম করেছেন যেমন- সুদ, ঘুষ কিংবা অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ইত্যাদি ভক্ষণ করার পাপ হোক।

আমাদের সামনে যেন থাকে, আল্লাহ্‌ তাআলা দিনের বেলায় তাঁর হস্ত প্রসারিত করে রাখেন যাতে করে রাতে পাপকারী তওবা করতে পারে এবং তিনি রাতে হস্ত প্রসারিত করে রাখেন যাতে করে দিনে পাপকারী তওবা করতে পারে। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “আর তোমরা ছুটে আস তোমাদের রবের ক্ষমার দিকে ও জান্নাতের দিকে; যার বিস্তৃতি আসমানসমূহ ও যমীনের মত, যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য। যারা সুদিনে ও দুর্দিনে ব্যয় করে, যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল। আল্লাহ মুহ্‌সিনদেরকে ভালবাসেন। আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে বা নিজেদের প্রতি যুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া পাপ ক্ষমা করার কে আছে? এবং তারা যা করে ফেলে, জেনে-বুঝে তারা তা উপর্যুপরি করতে থাকে না। তাদের পুরস্কার হলো তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং জান্নাতসমূহ; যেগুলোর পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত; সেখানে তারা স্থায়ী হবে। সৎকর্মশীলদের পুরস্কার কতইনা উত্তম!”[সূরা আলে ইমরান ৩: ১৩৩-১৩৬] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন: “বলুন, ‘হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছ– আল্লাহর অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[সূরা যুমার ৩৯: ৫৩] আল্লাহ্‌ আরও বলেন: “আর যে কেউ কোন মন্দ কাজ করে কিংবা নিজের প্রতি যুলুম করে; এরপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে সে আল্লাহকে সে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু পাবে।”[সূরা নিসা ৪: ১১০]

আমাদের কর্তব্য এ ধরণের আত্মসমালোচনা, তওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে রমযান মাসকে স্বাগত জানানো। কারণ “বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে নিজের সমালোচনা করে এবং মৃত্যুর পরের জন্য আমল করে। আর অক্ষম হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে নিজের কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং আল্লাহ্‌র কাছে অনেক অনেক আশা করে”।

রমযান মাস হচ্ছে অর্জন করা ও লাভ করার মাস। বুদ্ধিমান ব্যবসায়ী বেশি লাভ করার জন্য মৌসুমগুলোকে কাজে লাগায়। সুতরাং আপনারা এ মাসে ইবাদত পালন, বেশি বেশি নামায আদায়, কুরআন তেলাওয়াত করা, মানুষকে ক্ষমা করে দেওয়া, অন্যের প্রতি ইহসান করা, দরিদ্রদেরকে দান করা ইত্যাদি সুযোগকে কাজে লাগান।

রমযান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে রাখা হয়, শয়তানগুলোকে বন্দি করা হয় এবং প্রতি রাতে একজন আহ্বানকারী ডেকে বলে: ওহে পুণ্যকামী, অগ্রসর হও; ওহে পাপকামী, তফাৎ যাও।

সুতরাং আপনাদের পূর্বসূরিদের অনুকরণ করে, আপনাদের নবীর সুন্নাহ্‌র অনুসরণ করে আল্লাহ্‌র পুণ্যকামী বান্দা হোন; যাতে করে আমরা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে, মকবুল আমল নিয়ে রমযানকে বিদায় জানাতে পারি।

জেনে রাখুন, রমযান মাস নেকীর মাস:

ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন: “এর মধ্যে রয়েছে (অর্থাৎ আল্লাহ্‌র সৃষ্টির মাঝে মর্যাদার তারতম্যের মধ্যে রয়েছে) রমযান মাসকে অন্য মাসগুলোর উপর মর্যাদা দেয়া এবং রমযান মাসের শেষ দশরাত্রিকে অন্য রাত্রিগুলোর মর্যাদা দেয়া।”[যাদুল মাআদ (১/৫৬)]

এ মাসকে অন্য মাসের উপর চারটি কারণে মর্যাদা দেয়া হয়েছে:

এক.

এ মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যে রাত বছরের অন্য রাতগুলোর চেয়ে উত্তম। সেটি হচ্ছে- লাইলাতুল ক্বদর বা ক্বদরের রাত। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “নিশ্চয় আমরা এটি (কুরআন) নাযিল করেছি লাইলাতুল কদরে; আর আপনাকে কিসে জানাবে ‘লাইলাতুল-ক্বদর’ কী? লাইলাতুল-ক্বদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। সে রাতে ফিরিশতাগণ ও রূহ (জিব্রাইল আঃ) নাযিল হয় তাদের রবের নির্দেশক্রমে সকল বিষয় নিয়ে। শান্তিময় সে রাত, ফজরের আবির্ভাব পর্যন্ত।”[সূরা ক্বাদর ৯৭: ১-৫]

তাই এ রাতে ইবাদত করা সহস্র রাত ইবাদত করার চেয়ে উত্তম।

দুই.

এ রাতে সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর উপর সর্বোত্তম কিতাব নাযিল হয়েছে। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “রমজান মাস এমন মাস যে মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে;  মানবজাতির জন্য হিদায়েতের উৎস, হিদায়াত ও সত্য মিথ্যার মাঝে পার্থক্যকারী সুস্পষ্ট নিদর্শন হিসেবে।”[সূরা আল-বাক্বারা ২: ১৮৫] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন: “নিশ্চয় আমি এটাকে (কুরআনকে) এক মুবারকময় রাতে নাযিল করেছি; আর নিশ্চয় আমরা সতর্ককারী। সে রাতে প্রত্যেক চূড়ান্ত নির্দেশ স্থিরকৃত হয়। আমাদের পক্ষ থেকে নির্দেশ; আর নিশ্চয় আমরা (রাসূলগণকে) প্রেরণকারী। ” [সূরা আদ-দুখান ৪৪: ৩-৫]

ওসেলা বিন আসকা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের সহিফাগুলো (গ্রন্থগুলো) রমযানের মাসের প্রথম রাতে নাযিল হয়েছে। রমযানের মাসের ষষ্ঠ দিনে তওরাত নাযিল হয়েছে। রমযান মাসের ১৩ তম দিনে ইঞ্জিল নাযিল হয়েছে। রমযান মাসের ১৮ তম দিনে যাবুর নাযিল হয়েছে। রমযান মাসের ২৪ তম দিনে কুরআন নাযিল হয়েছে।”[তাবারানির ‘আল-মুজামুল কাবির’, মুসনাদে আহমাদ, আলবানি ‘সিলসিলা সহিহা’ (১৫৭৫) গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন]

তিন.

এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানগুলোকে বন্দি করা হয়: আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যখন রমযান মাস আগমন করে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানগুলোকে বন্দি করা হয়।”[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম]

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “যখন রমযান মাস আগমন করে তখন রহমতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানগুলোকে শিকল বন্দি করা হয়।”[সুনানে নাসাঈ, আলবানি ‘সহিহুল জামি’ (৪৭১) গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

সুনানে তিরমিযি, সুনানে ইবনে মাজাহ ও সহিহ ইবনে খুযাইমা-র এক রেওয়ায়েতে এসেছে যে, “রমযানের প্রথম রাত্রিতে শয়তানগুলো ও উদ্যত জিনগুলোকে বন্দি করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়; একটি দরজাও খোলা রাখা হয় না। জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, একটি দরজাও বন্ধ রাখা হয় না। এবং একজন আহ্বানকারী ডেকে বলেন: ওহে পুণ্যকামী, অগ্রসর হও। ওহে পাপকামী, তফাৎ যাও। রমযানের প্রতি রাত্রে আল্লাহ্‌ অনেককে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেন।”[আলবানি ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে (৭৫৯) হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন]

যদি কেউ বলেন যে, আমরা রমযান মাসেও অনেক খারাপ কাজ ও গুনাহর কর্ম ঘটতে দেখি। যদি শয়তানগুলোকে বন্দি করা হত তাহলে তো এসব ঘটত না?

জবাব হচ্ছে: যে ব্যক্তি সিয়ামের শর্তাবলি ও আদবগুলো রক্ষা করে তার ক্ষেত্রে গুনাহ কমে হয়।

কিংবা হাদিসে উদ্দেশ্য হচ্ছে- কিছু শয়তানকে বন্দি করা হয়। তারা হচ্ছে উদ্যত শয়তানগুলো।

কিংবা হাদিসে উদ্দেশ্য হচ্ছে- খারাপ কাজ কম হওয়া। এটি প্রত্যক্ষ বিষয়। রমযান মাসে খারাপ কাজ অন্য সময়ের চেয়ে কম হয়। আর সকল শয়তানকে বন্দি করা হলেও খারাপ কাজ বা পাপ কাজ একেবারে না ঘটা অনিবার্য নয়। কেননা শয়তান ছাড়াও অন্যান্য কারণেও পাপ কাজ ঘটে। যেমন- কলুষিত অন্তরগুলোর কারণে,  খারাপ অভ্যাসের কারণে এবং মানুষরূপী শয়তানগুলোর কারণে।[ফাতহুল বারী (৪/১৪৫)]

চার.

এ মাসে অনেক ইবাদত রয়েছে। এর মধ্যে কিছু কিছু ইবাদত এমন রয়েছে যেগুলো অন্য সময়ে নেই। যেমন: রোযা রাখা, কিয়ামুল লাইল আদায় করা, খাবার খাওয়ানো, ইতিকাফ করা, সদকা করা ও কুরআন তেলাওয়াত করা।

আমরা মহান আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আমাদের সকলকে তাওফিক দেন, আমাদেরকে সিয়াম পালন, কিয়াম আদায়, নেক আমল করা ও বদ আমল বর্জনে সাহায্য করেন।

সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহ্‌র জন্য।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব