বৃহস্পতিবার 6 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 7 নভেম্বর 2024
বাংলা

স্বামী ফজরের নামাযের সময় উঠতে পারবে না, ঘুমিয়ে থাকবে বিধায় স্ত্রী তাকে সহবাস করতে বাধা দেয়া কি ঠিক হবে?

137791

প্রকাশকাল : 04-05-2015

পঠিত : 58688

প্রশ্ন

প্রশ্ন: আমি একজন বিবাহিত নারী। একজন দ্বীনদার মানুষের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। আলহামদু লিল্লাহ তার অনেক ভাল গুণ রয়েছে। সমস্যা হচ্ছে- তার ঘুম খুব ভারী। ঘুমালে ফজরের নামাযের জন্য সহজে উঠতে পারে না। অধিকাং সময় সে যদি জুনুবি অবস্থায় (নাপাক অবস্থায়) থাকে সে ঘুম থেকে উঠতে পারে না। এতে কি আমার গুনাহ হবে? আমি নিশ্চিতভাবে জানি যে, আমি যত চেষ্টা করি না কেন সে নামাযের জন্য উঠতে পারবে না। বিশেষতঃ সে যখন সফর থেকে আসে অথবা ক্লান্ত থাকে। তাই তার নামাযের কারণে আমি কি (সহবাস) থেকে বিরত থাকতে পারি?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

যখন কোন স্বামী তার স্ত্রীকে বিছানায় ডাকবে তখন সে ডাকে সাড়া দেয়া ফরজ। দলিল হচ্ছে সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম এ আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদিস: “যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে বিছানায় ডাকে কিন্তু স্ত্রী ডাকে সাড়া না দেয় ফলে স্বামী রাগ করে থাকে তখন ভোর হওয়া পর্যন্ত ফেরেশতারা তার উপর লানত করতে থাকে।”

শাইখুল ইসলাম (রহঃ) বলেন:

যখনি স্বামী স্ত্রীকে বিছানায় ডাকবে তখনি ডাকে সাড়া দেয়া স্ত্রীর উপর ফরজ...। যদি ডাকে সাড়া না দেয় তাহলে স্ত্রী গুনাহগার ও অবাধ্য হবে। যেমনটি আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না।”[আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা (৩/১৪৫-১৪৬) থেকে সংকলিত]

সহবাসের পর স্বামী যদি ঘুমিয়ে থাকে তাহলে স্ত্রীর দায়িত্ব ফজরের নামাযের জন্য স্বামীকে জাগিয়ে দেয়া। যদি স্বামী অবহেলা করে না জাগে তাহলে স্বামীর গুনাহ হবে। স্ত্রীর কোন গুনাহ হবে না। সুতরাং স্ত্রীর উচিত তার দায়িত্ব পালন করা। স্বামীর নামাযের দায়িত্ব ও অবহেলার দায় তার উপর, যদি সে অবহেলা করে।

ফিকাহবিদগণ স্বামীর বদলে স্ত্রী সংক্রান্ত একটি মাসয়লার হুকুম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন সেটি এখানে উল্লেখ করলে বিষয়টি পরিস্কার হবে:

রমলি (রহঃ) বলেন: যদি স্বামী জানেন যে, যদি রাতে সহবাস করেন তাহলে স্ত্রী ফজরের নামাযের সময় গোসল করবে না; এতে করে তার নামায ছুটে যাবে, ইবনে আব্দুস সালাম বলেন: এ প্রেক্ষিতে স্বামীর উপর সহবাস করা হারাম হবে না। নামাযের সময় স্ত্রীকে গোসল করার নির্দেশ দিবে। ফাতাওয়াল আহনাফ গ্রন্থেও এমন একটি ফতোয়া রয়েছে।[হাসিয়াতুহু আলা আসনাল মাতালিব (৩/৪৩০) থেকে সংকলিত]

নাওয়াযিলিল বারযালি গ্রন্থে আছে:

ইয্যুদ্দিনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: যে ব্যক্তি রাতে ছাড়া স্ত্রী সহবাসের সুযোগ পান না। রাতে যদি স্ত্রী সহবাস করেন তাহলে স্ত্রী গোসল করতে অলসতা করে; এতে তার নামায ছুটে যায়। এমতাবস্থায় স্বামীর জন্য কি সহবাস করা জায়েয হবে, এতে করে স্ত্রীর নামাযের অসুবিধা হোক বা না-হোক?

তিনি উত্তরে বলেন: স্বামীর জন্য রাতে স্ত্রী সহবাস করা জায়েয হবে। স্বামী স্ত্রীকে ফজরের সময় নামায পড়ার নির্দেশ দিবে। যদি স্ত্রী নামায পড়ে তাহলে তো ভাল। আর যদি না পড়ে স্বামী তার দায়িত্ব পালন করেছে।[ফাতাওয়াল বারযালি (১/২০২) থেকে সংকলিত]

সারকথা হচ্ছে- আপনার জন্য স্বামীকে সহবাস করতে বাধা দেয়া জায়েয হবে না। আপনি নামাযের জন্য তাকে জাগিয়ে দিবেন। সে যদি অবহেলা করে নামায দেরি করে পড়ে তাহলে তার গুনাহ হবে।

আল্লাহই ভাল জানেন।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব