রবিবার 21 জুমাদাল ছানী 1446 - 22 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

কোন অমুসলিমকে কুরআন শিক্ষা দেয়ার হুকুম

প্রশ্ন

আমার একজন গার্ল ফ্রেন্ড আছে। সে লেখাপড়া শেষ করার পর ইসলাম গ্রহণ করার ইচ্ছা পোষণ করে। সে ইসলামের ব্যাপারে খুবই আগ্রহী। আমি তাকে কিছু আয়াত শিক্ষা দিয়েছি। যেমন- সূরাতুল ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি। সে তার ইচ্ছায় এগুলো শিখেছে ও মুখস্থ করেছে। এটা কি জায়েয হয়েছে, যেহেতু বর্তমানে সে অমুসলিম?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

আলহামদুলিল্লাহ।

এক:

কোন অমুসলিমের কুরআন শিখতে কোন অসুবিধা নেই; যদি তার ইসলাম গ্রহণের ও এ শিক্ষার মাধ্যমে উপকৃত হওয়ার আশা করা যায়।

ইমাম নববী (রহঃ) বলেন:

আমাদের মাযহাবের আলেমগণ বলেন: কোন কাফেরকে কুরআন শুনা থেকে ও মুসহাফ স্পর্শ করা থেকে বাধা দেওয়া যাবে না। কিন্তু, তাকে কি কুরআন শিক্ষা দেওয়া জায়েয হবে? এ ক্ষেত্রে দেখতে হবে; যদি তার ইসলাম গ্রহণের আশা না থাকে তাহলে জায়েয হবে না। যদি আশা থাকে তাহলে দুই অভিমতের মধ্যে অধিকতর সঠিক অভিমত হচ্ছে- জায়েয হবে। কাযী হোসাইন অকাট্যভাবে এ মত ব্যক্ত করেছেন, বাগাভী ও অন্যান্য আলেম এ মতকে অগ্রগণ্যতা দিয়েছেন।[সমাপ্ত]

[আল-মাজমু (২/৮৫)]

ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন:

এ মাসয়ালায় সলফে সালেহীনগণ মতভেদ করেছেন: ইমাম মালেক (রহঃ) কাফেরকে কুরআন শিক্ষা দিতে বারণ করেন। ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) অবকাশ দেন। ইমাম শাফেয়ির বক্তব্য বিপরীতমুখী। এ ব্যাপারে যা অগ্রগণ্য অভিমত হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে সেটা হল এটি ব্যাখ্যামূলক। যার ইসলাম সম্পর্কে ও ইসলামে  প্রবেশ করার আগ্রহ রয়েছে; সাথে তার ব্যাপারে এই নিশ্চয়তা পাওয়া যায় যে, সে এর মাধ্যমে কুরআনের উপর অপবাদ আরোপ করবে না এই ব্যক্তি এবং যার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এটি তার মাঝে প্রভাব বিস্তার করবে কি, করবে না কিংবা ধারণা হয় যে, সে এর মাধ্যমে ইসলামের উপর অপবাদ আরোপ করবে– এই দুইজনের মধ্যে পার্থক্য করতে হবে। আল্লাহই সর্বজ্ঞ। এছাড়া পরিমাণে কম ও বেশি এ দুই দিক থেকে পার্থক্য করতে হবে।[সমাপ্ত]

[ফাতহুল বারী (৬/১০৭)]

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “আর মুশরিকদের মধ্যে কেউ আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে আপনি তাকে আশ্রয় দিন; যাতে সে আল্লাহ্‌র বাণী শুনতে পায়। তারপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌঁছিয়ে দিন। কারণ তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা জানে না।”[সূরা তওবা, আয়াত: ৬]

শাওকানী (রহঃ) বলেন:

অর্থাৎ যে মুশরিকদের বিরুদ্ধে আপনি যুদ্ধ করার আদিষ্ট হয়েছেন তাদের কেউ যদি আপনার আশ্রয় চায় তাহলে তাকে আশ্রয় দিন। অর্থাৎ আপনি তাকে আশ্রয় দিন, নিরাপত্তা দিন, রক্ষাকারী হোন; যাতে করে সে আপনার কাছ থেকে আল্লাহ্‌র কালাম শুনতে পায় এবং যথাযথভাবে সেটাকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে পারে এবং আপনি যে দাওয়াত দিচ্ছেন সে দাওয়াতের হাকীকত জানতে পারে। এরপর আপনি তাকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছিয়ে দিন অর্থাৎ যদি সে ইসলাম গ্রহণ না করে তাহলে আল্লাহ্‌র কালাম শুনার পর যে স্থানকে সে নিরাপদ মনে করে সেখানে পৌঁছিয়ে দিন।[ফাতহুল কাদির (২/৪৯১)]

দুই:

ইসলাম গায়রে মাহরাম যুবক-যুবতীর মাঝের সম্পর্ককে স্বীকৃতি দেয় না। এ বিষয়ে জানতে পড়ুন: 126339 নং প্রশ্নোত্তর। যদি আপনি এ মেয়ের ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য উপদেশ হচ্ছে- আপনি মেয়েটিকে বিয়ে করে ফেলুন; যাতে করে বিয়েটা তার ইসলাম গ্রহণের পথে সহায়ক হতে পারে এবং আপনি সম পরিমাণ সওয়াব পাবেন।

আমরা আল্লাহ্‌র কাছে আপনার জন্য তাওফিক ও হেদায়েত প্রার্থনা করছি।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব