আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
অনেক সলফে সালেহীন থেকে হাম্মামখানা ও টয়লেটের দিকে নামায পড়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত আছে। আগেকার দিনে (আরবীতে) টয়লেটকে ‘হুশ্শ’ বলা হত। আব্দুল্লাহ বিন আমর থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “হুশ্শ (টয়লেট) এর দিকে নামায পড়ো না; হাম্মামের দিকেও নামায পড়ো না; কবরস্থানের দিকে নামায পড়ো না।”[ইবনে আবী শাইবা এর ‘আল-মুসান্নাফ’ (২/৩৭৯)]
আব্দুর রাজ্জাক তাঁর ‘মুসান্নাফ’ নামক গ্রন্থে (১/৪০৫) ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “তোমরা কিছুতেই হুশ্শ এর দিকে নামায পড়বে না; হাম্মাম এর দিকেও না; কবরস্থানের দিকেও না”[সমাপ্ত]
বিশিষ্ট তাবেয়ী ইব্রাহিম নাখায়ী থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “তাঁরা কিবলার দিকে তিনটি ঘরকে অপছন্দ করতেন: হুশ্শ, কবরস্থান ও হাম্মামখানা।[ইবনে আবী শাইবা এর ‘মুসান্নাফ’ (২/৩৮০)]
অর্থাৎ তাঁরা কোন মুসল্লীর কিবলার দিকে এ তিনটি ঘর থাকাকে অপছন্দ করতেন। আব্দুর রাজ্জাক সংকলিত ‘মুসান্নাফ’ গ্রন্থে এসেছে- “তাঁরা কিবলার দিকে তিনটি ঘর থাকাকে অপছন্দ করতেন: কবর, হাম্মামখানা ও হুশ্শ।[সমাপ্ত]
ইমাম আহমাদকে কবরস্থান, হাম্মামখানা ও হুশ্শ এর দিকে নামায পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে জবাবে তিনি বলেন: নামাযের কিবলার দিকে কবর, হুশ্শ কিংবা হাম্মামখানা অনুচিত।[ইবনে কুদামার ‘মুগনি’ (২/৪৭৩) থেকে সমাপ্ত]
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন: এগুলো কিবলার দিকে থাকা মাকরুহ হওয়ার কারণ হলো—সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীদের কাছ থেকে ইতিপূর্বে উল্লেখিত রেওয়ায়েতগুলো; যা নিয়ে তাদের মাঝে কোন মতানৈক্যের কথা আমরা জানি না। তাছাড়া যেহেতু কবরগুলোকে মূর্তি হিসেবে পূজা করা হয়। কবরের দিকে নামায পড়া মূর্তির দিকে নামায পড়ার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। যদি কেউ উদ্দেশ্যমূলকভাবে এমনটি না করে তবু তা হারাম। এ কারণে কেউ যদি তার সামনে থাকা কোন মূর্তির দিকে সেজদা করে সেটা জায়েয হবে না।
আর হুশ্শ ও হাম্মামখানা শয়তানের স্থান ও আশ্রয়স্থল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসল্লিকে সুতরা (আড়াল) বা দেয়ালকে কাছাকাছি সামনে রেখে নামায আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন; যাতে করে শয়তান নামায কর্তন করতে না পারে। অতএব, শয়তানের আশ্রয়স্থলের দিকে ফিরে নামায আদায় করলে শয়তান মুসল্লির সামনে দিয়ে গমন করার সম্ভাবনা প্রবল হয়। তাছাড়া কোন কিছুর দিকে নামায পড়া মানে সেটাকে সামনে রাখা, সেটার দিকে মুখ করা এবং সেটাকে কিবলা বানানো। কেননা মুসল্লি যেদিকে মুখ করে সেটাই তো তার কিবলা। এ কারণে তো নামাযের সময় আমাদেরকে সর্বোত্তম স্থানের দিকে, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় স্থান ‘বায়তুল্লাহ’র দিকে মুখ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এজন্য মুসল্লির উচিত এসব নোংরা স্থানগুলোর দিকে মুখ করা থেকে বিরত থাকা। জানেনই তো, মল-মূত্র ত্যাগ করাকালে কিবলা মুখ করা নিষিদ্ধ। এ যদি হয় তাহলে নামায আদায়কালে মল-মূত্র, শয়তান ও শয়তানের স্থানগুলো কিবলার দিকে থাকা কেমন?[শারহুল উমদা (২/৪৮১)]
দুই:
যে হাম্মামগুলো কিবলার দিকে সেগুলোর দুটো অবস্থা হতে পারে:
১। হাম্মামখানা ও মসজিদের মাঝখানে আলাদা কোন দেয়াল না থাকা কিংবা মসজিদ ও হাম্মামখানার একই দেয়াল হওয়া। এমন মসজিদে নামায পড়া মাকরুহ। উত্তম হচ্ছে- এ ধরণের হাম্মামখানাগুলো ভেঙ্গে ফেলা এবং মসজিদের দেয়াল থেকে দূরে নিয়ে যাওয়া।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন: “আমাদের মাযহাবের আলেমগণের মতে, টয়লেট মসজিদের দেয়ালের বাহিরের দিকে হোক কিংবা ভেতরের দিকে হোক এতে হুকুমের কোন ফারাক নেই।
ইবনে আকীলের মতে, মুসল্লির মাঝে ও টয়লেটের মাঝে যদি দেয়াল থাকে যেমন মসজিদের দেয়াল তাতে করে নামায পড়া মাকরুহ হবে না।
প্রথম মতটি সলফে সালেহীন থেকে বর্ণিত। দলিলেও সরাসরি সেটাই পাওয়া যায়। আবু তালেবের বর্ণনায় এসেছে যে ব্যক্তি মসজিদের কিবলার দিকে টয়লেটের জন্য গর্ত খুঁড়েছে তার ব্যাপারে ইমাম আহমাদ বলেন: “সে গর্তটি ধ্বংস করতে হবে”।
মারওয়াযির বর্ণনায় এসেছে মসজিদের কিবলার পিছনে টয়লেট নির্মাণ সম্পর্কে ইমাম আহমাদ বলেন: “টয়লেটের দিকে নামায পড়া যাবে না”।[শারহুল উমদা থেকে সমাপ্ত]
শাইখ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিম বলেন: এ গোসলখানাগুলোর দুইটি অবস্থা হতে পারে:
স্বতন্ত্র দেয়ালের মাধ্যমে মসজিদ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হওয়া, মসজিদের কিবলার দিকের দেয়ালের সাথে সংযুক্ত না হওয়া; এতে কোন অসুবিধা নেই এবং নামায পড়তেও কোন বাধা নেই। গোসলখানাগুলো মসজিদের কিবলার দিকে হলেও কোন অসুবিধা নেই; যখন গোসলখানার দেয়াল মসজিদের দেয়াল থেকে আলাদা হয়।
আর যদি গোসলখানাগুলো মসজিদের সাথে সংযুক্ত হয় এবং গোসলখানা ও মসজিদের মাঝে শুধু মসজিদের কিবলার দেয়ালটি থাকে সেক্ষেত্রে আলেমগণ সে দিকে নামায পড়া মাকরুহ বলেছেন। কেননা যেসব স্থানের দিকে নামায পড়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে তার মধ্যে টয়লেটও রয়েছে; যদি ন্যূনতম সওয়ারীর পেছনের পা এর সমউচ্চতার পরিমাণও কোন দেয়াল না থাকে। শুধু মসজিদের দেয়াল যথেষ্ট হবে না। কারণ সলফে সালেহীন এমন মসজিদে নামায পড়াকে মাকরূহ মনে করতেন যে মসজিদের কিবলার দিকে টয়লেট আছে।
এর ভিত্তিতে বলা যায়, একটি স্বতন্ত্র দেয়াল নির্মাণের মাধ্যমে এ গোসলখানাগুলোকে মসজিদ থেকে আলাদা করে ফেলা উচিত; যে দেয়ালটি মসজিদের দেয়াল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হবে।[শাইখ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিমের ফতোয়া ও রচনাসমগ্র (২/১৩৯) থেকে সমাপ্ত]
২। প্রত্যেককে অবকাঠামোর আলাদা দেয়াল থাকা; অর্থাৎ মসজিদের নিজস্ব দেয়াল থাকা এবং টয়লেট ও গোসলখানাগুলোর আলাদা দেয়াল থাকা। সে ক্ষেত্রে এমন মসজিদে নামায পড়া মাকরূহ হবে না।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন: “মাকরূহ হওয়ার বিষয়টি টয়লেট ও মসজিদের কিবলার মাঝে বিচ্ছেদ তৈরী করা ছাড়া দূরীভূত হবে না। মসজিদের দেয়াল ও টয়লেটের মাঝে যদি আরও একটি দেয়াল থাকে তাহলে সে মসজিদে নামায আদায় করা জায়েয হবে।”[শারহুল উমদা (৪/৪৮৩) থেকে সমাপ্ত]
ইবনে রজব বলেন: হারব ইসহাক থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি এমন মসজিদে নামায পড়াকে মাকরূহ জানতেন যে মসজিদে কিবলাতে টয়লেট রয়েছে। তবে মসজিদের দেয়াল ছাড়া টয়লেটের যদি বাঁশের তৈরী কিংবা কাঠের তৈরী আলাদা দেয়াল থাকে তবে মাকরূহ হবে না। আর যদি সে টয়লেট কিবলার ডান পার্শ্বে কিংবা বামপার্শ্বে হয় তাতে কোন অসুবিধা নেই। [ফাতহুল বারী (২/২৩০) থেকে সমাপ্ত]
এর ভিত্তিতে বলা যায়, এ টয়লেটগুলোর জন্য আলাদা দেয়াল তৈরী করা উচিত; যা মসজিদের দেয়াল থেকে আলাদা হবে। যদি সেটা করা সম্ভবপর না হয়, কিন্তু এ টয়লেটের কারণে মসজিদের কিংবা মুসল্লিদের সমস্যা না হয় তাহলে এমন মসজিদে নামায পড়া মাকরূহ হবে না। কেননা প্রয়োজনের কারণে মাকরূহ হওয়ার হুকুম বাদ পড়ে যায়।
আল্লাহই ভাল জানেন।