আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
ঈসা (আঃ) কে আল্লাহ তাআলা বনি ঈসরাইলের কাছে নবী ও রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন মর্মে ঈমান আনা- আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনার অংশ। সকল রাসূলের প্রতি ঈমান আনা ব্যতিরেকে কারো ঈমান শুদ্ধ হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন (ভাবানুবাদ): “রাসূল তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ হতে যা তাঁর প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তাতে ঈমান এনেছেন এবং মুমিনগণও। তারা সবাই আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাগণের উপর, তাঁর কিতাবসমূহের উপর এবং রাসূলগণের উপর ঈমান এনেছে। (তারা বলে): আমরা রাসূলগণের মধ্যে তারতম্য করি না।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ২৮৫]
ইবনে কাছির (রহঃ)
“মুমিনগণ বিশ্বাস করে আল্লাহ এক, অদ্বিতীয়, তিনি সবার আশ্রয়স্থল, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই; আর কোন রব্ব নেই। মুমিনগণ সকল নবী-রাসূল ও নবী-রাসূলের উপর নাযিলকৃত আসমানী কিতাবের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে। মুমিনগণ ঈমান আনার ক্ষেত্রে নবী-রাসূলদের কারো মাঝে পার্থক্য করে না। অর্থাৎ কারো প্রতি ঈমান আনে; কারো প্রতি ঈমান আনে না- এমনটি করে না। বরং তাঁরা সকলে তাদের নিকট সত্যবাদী, নেককার, সুপথপ্রদর্শক, হেদায়েতের উপর অটল, কল্যাণের দিশারী।”[তাফসির ইবনে কাছির থেকে সমাপ্ত (১/৭৩৬)]
সাদী (রহঃ) বলেন:
“তাঁদের একজনকে অস্বীকার করা মানে তাঁদের সকলকে অস্বীকার করা। বরং আল্লাহকে অস্বীকার করার পর্যায়ভুক্ত।”[তাফসিরে সাদী (পৃষ্ঠা-১২০)]
দুই:
মিলাদুন্নবী বা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মবার্ষিকী পালন করা বিদআত। এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেননি এবং তাঁর পরবর্তীতে কোন সাহাবী সেটা পালন করেননি। এমনটি জানা যায়নি- মুসলিম ইমামগণের কেউ এটি পালন করাকে জায়েয বলেছেন; থাকতো তাঁরা এগুলোতে অংশগ্রহণ করবেন। এটি পালন করা হারাম ও গর্হিত বিদআত।
স্থায়ী কমিটির আলেমগণ বলেন:
“মিলাদুন্নবী উপলক্ষে অনুষ্ঠান করা বিদআত, হারাম। যেহেতু এর সপক্ষে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের হাদিসে কোন দলিল নেই। সুপথপ্রাপ্ত খলিফাগণের কেউ অথবা উত্তম প্রজন্মের কেউ এটি পালন করেননি।”[সমাপ্ত, স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (২/২৪৪)]
আরও জানতে দেখুন 70317 ও 13810 নং প্রশ্নোত্তর।
সাধারণ মুসলমানগণ অথবা অজ্ঞ মুসলমানগণ মিলাদুন্নবী উপলক্ষে যা করে থাকেন সেগুলো অভিনব বিষয়; এগুলোকে প্রতিহত করা ও এতে বাধা দেয়া কর্তব্য। তাই মিলাদুন্নবী উদযাপনকে খ্রিস্টমাস উদযাপনের পক্ষে দলিল হিসেবে গ্রহণ করা মূলতই বাতিল। যেহেতু মিলাদুন্নবী পালন-ই জায়েয নয়। কারণ এটি নবপ্রচলিত বিদআত। বিদআতের উপর যে বিষয়কে কিয়াস করা হয় সেটাও বিদআত।
তিন:
খ্রিস্টানেরা ‘খ্রিস্টমাস’ নামে যা পালন করে থাকে সেটিও শিরকি বিদআত। মুসলমানদের এমন কোন অনুষ্ঠানের সদৃশ কিছু করা নাজায়েয। ঈসা (আঃ) এ ধরণের কর্ম থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। মুসলমানদের জন্য –এটি বিদআত হওয়ার চেয়ে মারাত্মক হল- এটি কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করার নামান্তর; যেহেতু এটি খ্রিস্টানদের ধর্মীয় উৎসব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোন কওমের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের দলভুক্ত।” [সুনানে আবু দাউদ (৩৫১২), আলবানী ‘সহিহ আবু দাউদ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন এবং শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া হাদিসটির সনদকে “জায়্যিদ’ হুকুম দিয়ে বলেন: “এ হাদিসটির ন্যুনতম দাবী হচ্ছে- তাদের সাথে (বিধর্মীদের সাথে) সাদৃশ্য গ্রহণ করা হারাম। যদিও হাদিসের বাহ্যিক ভাষা সাদৃশ্যগ্রহণকারীর কাফের হয়ে যাওয়ার দাবী রাখে। যেমনটি আল্লাহর বাণীর মধ্যে এসেছে “তোমাদেরমধ্যেযেতাদেরসাথেবন্ধুত্বকরবে, সেতাদেরইঅন্তর্ভুক্ত।”[ইকতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকীম, পৃষ্ঠা ৮২-৮৩ সমাপ্ত]
শাইখুল ইসলাম আরও বলেন:
আপনার কাছে এটা পরিষ্কার হয়েছে যে, আল্লাহর দ্বীন ও তাঁর শরিয়ত বিলীন হয়ে যাওয়া এবং কুফর ও পাপাচার বিস্তার লাভ করার অন্যতম মূল কারণ হচ্ছে- কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ। অপরদিকে সকল কল্যাণের মূল হচ্ছে- নবীদের সুন্নত (আদর্শ) ও তাঁদের দেয়া অনুশাসনগুলো মেনে চলা। তাই ইসলামে বিদআতের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর; যদি এর মধ্যে কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য না থাকে তবুও। আর যদি এ দুটি বিষয় একত্রিত হয় তাহলে সেটা কত বেশি ভয়াবহ?!
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:
কাফেরদের খ্রিস্টমাস বা অন্য কোন উৎসব পালন করা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। যেহেতু এর মধ্য দিয়ে তাদের ধর্মীয় অনুশাসনগুলোর প্রতি সম্মতি ও সন্তুষ্টি প্রকাশ পায়; যদিও ব্যক্তি নিজের জন্য এ ধরণের কুফরের প্রতি সন্তুষ্ট না থাকুক। কিন্তু কোন মুসলমানের জন্য কুফরি অনুশাসনের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করা বা এ উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় করা হারাম। অনুরূপভাবে এ উপলক্ষে কাফেরদের মত অনুষ্ঠান করা, উপহার বিনিময় করা, মিষ্টি বিতরণ করা, খাবার বিতরণ করা বা কাজ থেকে ছুটি কাটানো ইত্যাদি মুসলমানের জন্য হারাম। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোন কওমের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের দলভুক্ত।”[সহিহ আবু দাউদ, শাইখ উছাইমীনের ফতোয়া ও পুস্তিকা সংকলন থেকে সংক্ষেপিত (৩/৪৫-৪৬)]
কাফেরদের উৎসবে যোগদান করার হুকুম জানার জন্য 1130 নং ও 145950 নং প্রশ্নোত্তর দেখুন। সারকথা হচ্ছে- খ্রিস্টবছরের শুরুতে উৎসব পালনের মধ্যে মুসলমানদের জন্য একাধিক ক্ষতির দিক রয়েছে:
১- যেসব কাফের-মুশরিক শিরক ও কুফরের অনুপ্রেরণা নিয়ে এ উৎসবগুলো উদযাপন করে এতে তাদের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যায়। তারা আল্লাহর নবী ঈসা (আঃ) এর শরিয়ত হিসেবে এগুলো পালন করে না। কারণ আমাদের ও তাদের সর্বসম্মতিক্রমে ঈসা (আঃ) এসব পালনের বিধান জারী করেননি। বরং এগুলো শিরক ও বিদআত মিশ্রিত। এ অনুষ্ঠানগুলোতে নানা রকম পাপাচার তো থাকে-ই যেটা সবার জানা। সুতরাং আমরা কিভাবে এসব ক্ষেত্রে তাদের সাথে সাদৃশ্য নিতে পারি।
২- মিলাদুন্নবী উদযাপন-ই নাজায়েয। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে এটি নবপ্রচলিত বিদআত। সুতরাং এর উপরে অন্য কিছুকে কিয়াস করা চলবে না। কারণ কিয়াসের মূল দলিল যদি ঠিক না হয়; কিয়াসও ঠিক হবে না।
৩- খ্রিস্টমাস পালন যে কোন অবস্থায় মুনকার, গর্হিত কাজ। এটিকে জায়েয বলার কোন সুযোগ নেই। কারণ এটি মূলতঃ বাতিল। যেহেতু এতে রয়েছে- কুফর, ফিসক ও অবাধ্যতা। এ ধরণের কর্মকে অন্য কিছুর সাথে কিয়াস করার কোন সুযোগ নেই। কোন অবস্থাতে এটিকে জায়েয বলার কোনপ্রকার সুযোগ নেই।
৪- যদি আমরা এ বাতিল কিয়াসকে শুদ্ধ বলি তখন আমাদের উপর অনিবার্যতা আসবে: আমরা প্রত্যেক নবীর মিলাদ (জন্মদিবস) পালন করি না কেন? তাঁরা কি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত নন?! অথচ এমন কথা কেউ বলবে না।
৫- কোন নবীর জন্মদিন সুনির্দিষ্টভাবে জানা অসম্ভব। এমনকি আমাদের নবীর ক্ষেত্রেও। কারণ তাঁর জন্মদিন অকাট্যভাবে জানা যায় না। এ ব্যাপারে ইতিহাসবিদগণের প্রায় ৯টি বা তারও বেশি অভিমত রয়েছে। তাই তাঁর জন্মদিন পালন ঐতিহাসিকভাবে ও শরয়িভাবে বাতিল। এবং মিলাদ পালনের বিষয়টি সেটি আমাদের নবীর জন্মদিন হোক অথবা ঈসা (আঃ) এর জন্মদিন হোক মূল থেকেই বাতিল। শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মরাত পালন ঐতিহাসিকভাবে অথবা শরয়িভাবে সঠিক নয়। সমাপ্ত।[ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব (১৯/৪৫)]
আল্লাহই ভাল জানেন।