আলহামদু লিল্লাহ।.
আলেমগণ একটি ফিকহী নীতি উল্লেখ করে থাকেন, “যে কোন ঘটনাকে এর নিকটতম সময়ের সাথে সম্পৃক্ত করাই মূলবিধান”
এ নীতিটির অর্থ হচ্ছে: যদি কোন একটি ঘটনা সংঘটিত হয় এবং সে ঘটনাটি নিকটবর্তী কিংবা দূরবর্তী যে কোন সময়ে ঘটে থাকতে পারে। এ দুটো সম্ভাবনার মধ্যে কোন একটিকে প্রাধান্য দেয়ার জন্য কোন দলিল না থাকে। সেক্ষেত্রে ঘটনাটি সংঘটিত হওয়ার নিকটবর্তী সময়টি ধর্তব্য হবে। কেননা নিকটবর্তী সময়টির ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ঘটনাটি তাতে সংঘটিত হয়েছে। আর দূরবর্তী সময়টিতে ঘটনাটি ঘটা সন্দেহপূর্ণ।
এ নীতিটির অধিভুক্ত একটি রূপ হচ্ছে, যদি কেউ তার কাপড়ে বীর্য দেখে জানতে পারে যে, এটি স্বপ্ন দোষের চিহ্ণ। কিন্তু কখন স্বপ্নদোষ হয়েছে সেটা স্মরণ করতে না পারে সেক্ষেত্রে সে ব্যক্তি সর্বশেষ যে ঘুম ঘুমিয়েছে এর পরের নামাযগুলো পুনরায় আদায় করবে।
এ নীতিটি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, যারকাশি তাঁর ‘আল-মানছুর ফিল কাওয়ায়েদ’ নামক কিতাবে, সুয়ুতি তাঁর ‘আল-আশবাহ ওয়ান নাযায়ের’ নামক কিতাবে। তাঁরা উভয়ে এ নীতিটির আরও কিছু শাখা উল্লেখ করেছেন। আরও জানতে এ গ্রন্থদ্বয়ের যে কোনটি দেখা যেতে পারে।
এর আলোকে বলা যায় যে, যদি কোন নারী রক্তস্রাব দেখতে পান, কিন্তু তিনি রক্তপাতের সময় জানতে না পারেন: সেটা কি সূর্য ডোবার আগে নাকি পরে? সেক্ষেত্রে নিকটবর্তী সময়টিকে রক্তপাতের সময় ধরা হবে। এ মাসয়ালায় নিকটবর্তী সময় হচ্ছে, সূর্য ডোবার পর।
আল-মাওসূআ আল-ফিকহিয়্যাতে (২৬/১৯৪) এসেছে: যে নারী রক্তস্রাব দেখতে পান; কিন্তু জানেন না যে, কখন রক্তপাত শুরু হয়েছে তার বিধান ঐ ব্যক্তির মত, যে তার কাপড়ে বীর্য দেখেছন, কিন্তু কখন বীর্যপাত ঘটেছে তা জানেন না। অর্থাৎ তাকে গোসল করতে হবে এবং সর্বশেষ যখন ঘুমিয়েছে এরপর থেকে আদায়কৃত নামাযগুলো পুনরায় পড়তে হবে। এ অভিমতের, মধ্যে জটিলতা কম এবং এটি অধিক সুস্পষ্ট।”[সমাপ্ত]
শাইখ মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ আল-মুখতার আল-শানকিতীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: এক নারী মাগরিবের পর রক্তস্রাব দেখতে পেলেন, কিন্তু তিনি জানেন না কখন রক্তপাত শুরু হয়েছিল: মাগরিবের আগে নাকি পরে? এমতাবস্থায়, তার নামায ও রোযার হুকুম কী হবে?
জবাবে তিনি বলেন: “যদি তিনি রক্তস্রাব দেখেন এবং তার প্রবল ধারণা হয় যে, এটি সূর্যাস্তের আগেই শুরু হয়েছে তাহলে কোন সন্দেহ নেই যে, তার সে দিনের রোযা বাতিল এবং সেটি কাযা পালন করতে হবে। আর যদি তার প্রবল ধারণা হয় যে, রক্ত তাজা এবং এটি মাগরিবের পর শুরু হয়েছে: সেক্ষেত্রেও কোন সন্দেহ নেই যে, তার রোযা সহিহ এবং পবিত্র হওয়ার পর মাগরিবের নামায কাযা পালন করা তার উপর আবশ্যক। তিনি কাযা হিসেবে নামাযটি পড়বেন।
আর যদি তিনি দ্বিধাদ্বন্দ ও সন্দেহে থাকেন সেক্ষেত্রে আলেমগণের অনুসৃত নীতি হচ্ছে, “নিকটবর্তী সময়ের সাথে ঘটনাকে সম্পৃক্ত করা”। কারণ এক্ষেত্রে মূল অবস্থা হচ্ছে, রোযাটি সহিহ হওয়া; যতক্ষণ পর্যন্ত না রোযাটি সহিহ না হওয়ার পক্ষে কোন দলিল পাওয়া যায়। মূল অবস্থা হচ্ছে, সে মহিলা গোটা দিন রোযা রেখেছেন এবং তার দায়িত্ব নিষ্পন্ন হয়েছে; যতক্ষণ পর্যন্ত না এ অবস্থার উপর প্রতিক্রিয়া তৈরী করার মত কিছু আমরা না পাই। এ কারণে তার রোযা সহিহ মর্মে হুকুম দেয়া হবে। এ রক্তস্রাব সেদিনের রোযার উপর কোন প্রভাব ফেলবে না। কেননা আপনি যদি বলেন, রোযা সহিহ, তাহলে মাগরিবের নামায কাযা পালন করা আবশ্যক হবে। আর যদি বলেন: রোযা সহিহ নয়; তাহলে তার উপর মাগরিবের নামাযের কাযা পালনও আবশ্যক নয়। তাই রোযা ঠিক থাকলে মাগরিবের নামাযের কাযা পালন অনিবার্য হবে। কেননা, ওয়াক্ত শুরু হওয়ার মাধ্যমে ব্যক্তির দায়িত্বে সেটা অবধারিত হয়ে যায়।”[যাদুল মুস্তানকি এর ব্যাখ্যা হতে সমাপ্ত]
সারকথা: আপনার রোযা সহিহ। যেহেতু মাগরিবের আগে থেকে রক্তস্রাব শুরু হয়েছে কিনা সেটা আপনি নিশ্চিত নন।
আল্লাহ্ই ভাল জানেন।