আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
কুরবানী: ইসলামের অন্যতম একটি নিদর্শন; যার বিধান আল্লাহ্র কিতাব, তাঁর রাসূলের সুন্নাহ ও মুসলমানদের ইজমা দ্বারা সাব্যস্ত। ইতিপূর্বে 36432 নং প্রশ্নোত্তরে তা আলোচিত হয়েছে।
কুরবানীর পশুর শর্তাবলীর বিবরণ জানতে 36755 নং প্রশ্নোত্তরটি পড়ুন।
দুই:
গর্ভবতী বাহিমাতুল আনআম (উট, গরু ও বকরী) দিয়ে কুরবানী করা জায়েয হবে কিনা এ ব্যাপারে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। অধিকাংশ মাযহাবের আলেমদের মতে, এমন পশু দিয়ে কুরবানী করা জায়েয। কুরবানীর পশুর যে ত্রুটিগুলোর কারণে এর দ্বারা কুরবানী করা যায় না সেগুলোর মধ্যে তারা গর্ভধারণকে উল্লেখ করেননি। তবে শাফেয়ি মাযহাবের আলেমগণ ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তাদের মতে, গর্ভবতী পশু দিয়ে কুরবানী করা নিষেধ।
‘আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা’ গ্রন্থে (১৬/২৮১):
“অধিকাংশ ফিকাহবিদ আলেম গর্ভধারণকে কুরবানীর পশুর ত্রুটির মধ্যে উল্লেখ করেননি; তবে শাফেয়ি মাযহাবের আলেমগণ ব্যতীত। তারা পরিস্কারভাবে জায়েয না হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। কেননা গর্ভধারণের ফলে পেট নষ্ট হয়ে যায় এবং গোশত ভাল হয় না।”[সমাপ্ত]
শাফেয়ি মাযহাবের কিতাব ‘হাশিয়াতুল বুজাইরিমি আলাল খত্বীব’-এ এসেছে:
“গর্ভবতী পশু কুরবানীর পশু হিসেবে যথেষ্ট নয়। এটাই (মাযহাবের) প্রতিষ্ঠিত অভিমত। কেননা গর্ভধারণের ফলে গোশত কমে যায়। আর যাকাতের ক্ষেত্রে গর্ভবতী পশুকে পূর্ণ উপযুক্ত হিসেবে গণ্য করা হয় যেহেতু যাকাতের ক্ষেত্রে বংশবৃদ্ধির বিষয়টি উদ্দেশ্য; গোশত ভাল হওয়া নয়।”[পরিমার্জিতরূপে সমাপ্ত]
অগ্রগণ্য অভিমত হলো: কুরবানীর পশু হিসেবে গর্ভবতী বাহিমাতুল আনআম (উট, গরু ও বকরী) উপযুক্ত; যদি তার ক্ষেত্রে অন্য কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকে।
শাইখ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিম (রহঃ) বলেন:
“গর্ভবতী বকরী দিয়ে কুরবানী করা সঠিক; যেমনিভাবে অ-গর্ভবতী বকরী দিয়েও সঠিক; যদি পশুটি কুরবানীর ক্ষেত্রে দোষণীয় দোষগুলো থেকে মুক্ত হয়।”[ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িলিস শাইখ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিম (৬/১৪৬)]
তিন:
যদি গর্ভস্থিত পশুটি জীবিত অবস্থায় বের হয় তাহলে সেটাকে জবাই করা হবে এবং খাওয়া যাবে।
ইবনে কুদামা (রহঃ) ‘আল-মুগনী’ গ্রন্থে (৯/৩২১) বলেন: “যদি স্থিতিশীল জীবন নিয়ে জীবিত অবস্থায় বের হয় এবং জবাই করার সুযোগ পায়; কিন্তু জবাই না করে এক পর্যায়ে মারা যায়; তাহলে সে পশুটি জবাইকৃত হিসেবে গণ্য হবে না। ইমাম আহমাদ বলেন: যদি জীবিত অবস্থায় বের হয় তাহলে অবশ্যই জবাই করতে হবে। কেননা সেটি অন্য একটি প্রাণ।”[সমাপ্ত]
আর যদি মৃত অবস্থায় বের হয় তাহলে জমহুর (অধিকাংশ) আলেমের মতে, সেটিও খাওয়া যাবে। কেননা মাকে জবাই করার মাধ্যমে সেটাকেও জবাই করা হয়েছে।
আবু সাঈদ (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “মায়ের জবাই গর্ভস্থিত পশুর জবাই”।[সুনানে আবু দাউদ (২৮২৮), সুনানে তিরমিযি (১৪৭৬) এবং তিনি সহিহ বলেছেন, সুনানে ইবনে মাজাহ (৩১৯৯) ও মুসনাদে আহমাদ (১০৯৫০); আলবানী ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে (৩৪৩১) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
যেমনটি পূর্বেই আমরা উল্লেখ করেছি এটি হানাফী মাযহাব ছাড়া অধিকাংশ মাযহাবের আলেমদের অভিমত।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) ‘মাজমুউল ফাতাওয়া’ গ্রন্থে (২৬/৩০৭) বলেন:
“গর্ভবতী পশু দিয়ে কুরবানী করা জায়েয। যদি কুরবানীর পশুর গর্ভস্থিত সন্তান মৃত অবস্থায় বের হয় তাহলে ইমাম শাফেয়ি, ইমাম আহমাদ ও অন্যন্য আলেমদের নিকট তার মায়ের জবাই করাটাই তার জবাই; চাই তার চুল গজিয়ে থাকুক; কিংবা না গজিয়ে থাকুক। আর যদি জীবিত অবস্থায় বের হয় তাহলে জবাই করতে হবে।
ইমাম মালেকের মাযহাব হচ্ছে: চুল গজালে হালাল; অন্যথায় নয়।
ইমাম আবু হানিফার মতে, বের হওয়ার পর জবাই করা ছাড়া সেটা হালাল হবে না।”[সমাপ্ত]
এ মাসয়ালাটি ইতিপূর্বে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে এবং এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, কিছু কিছু আলেম চিকিৎসাগত দিক বিবেচনা করে গর্ভস্থিত পশু খাওয়াকে মাকরূহ বলেছেন।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।