আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
আপনি যে রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, সেটার জন্য যদি আপনি ধৈর্য ধরেন এবং আল্লাহর কাছে নেকীর প্রত্যাশা করেন তাহলে আল্লাহ আপনার এই রোগের মাধ্যমে পাপ মোচন করে দিবেন।
আবু সাঈদ খুদরী ও আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “মুসলিমের উপর যে ক্লান্তি, রোগ, দুশ্চিন্তা, দুঃখ, কষ্ট ও পেরেশানী আসে; এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফুটে, এ সব কিছুর মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।”[বুখারী (৫৩১৮), মুসলিম (২৫৭৩)]
দুই:
আমরা আপনাকে কিছু চিকিৎসা ও সহীহ দোয়া পড়ার পরামর্শ দিব। চিকিৎসাগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. মধু:
আল্লাহ তায়ালা বলেন: “তারপর সব রকম ফল থেকে খাও এবং তোমাদের রবের সুগম পথসমূহে চলো। এই মৌমাছির পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় (মধু) বের হয়, যাতে মানুষের জন্য আরোগ্য আছে। এর মধ্যে চিন্তাশীল লোকদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন আছে।”[আন-নাহল: ৬৯]
২. ভারতীয় চন্দন কাঠ।
উম্মু কাইস বিনতে মুহসিন বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: “তোমরা ভারতীয় এই চন্দন কাঠ ব্যবহার করবে। কারণ এতে সাতটি আরোগ্য রয়েছে।”[হাদীসটি বুখারী (৫৩৬৮) ও মুসলিম (২৮৭) বর্ণনা করেছেন]
৩. হিজামা:
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় মাইগ্রেনের (আধ কপালির) কারণে তার মাথায় শিঙ্গা লাগান।[বুখারী (৫৩৭৪), মুসলিম (১২০২)]
৪. কালো জিরা:
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “কালো জিরা ‘সাম্ম’ ছাড়া সব রোগের ঔষধ। আর ‘সাম্ম’ হল মৃত্যু।”[বুখারী (৫৩৬৪), মুসলিম (২২১৫)]।
বুখারী এ সংক্রান্ত পরিচ্ছেদের শিরোনাম দিয়েছেন: মাইগ্রেন (আধ কপালি) ও পুরো মাথা ব্যথার কারণে শিঙ্গা লাগানো।
আমরা আপনাকে যে সকল দোয়া পড়ার পরামর্শ দিব তার মাঝে সহীহ সুন্নাহ থেকে সাধ্যমত কিছু উল্লেখ করছি:
১. উসমান ইবনে আবিল আস আস-সাকাফী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে একটা ব্যথার ব্যাপারে অভিযোগ করলেন, যা তিনি ইসলাম গ্রহণের পর থেকে তার দেহে অনুভব করছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন: “তোমার শরীরের যে অংশে ব্যথা হয়, তার উপরে হাত রেখে তিনবার বিসমিল্লাহ বলবে। তারপর সাতবার বলবে: أَعُوْذُ بِاللهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ (আমি যে অনিষ্ট পাচ্ছি ও যে অনিষ্টের আশংকা করছি তা থেকে আল্লাহর কাছে ও তাঁর ক্ষমতার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”[হাদীসটি মুসলিম (২২০২) বর্ণনা করেছেন]।
২. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো রোগীর কাছে আসলে কিংবা তার কাছে কোনো রোগীকে আনা হলে তিনি বলতেন:
أَذْهِبْ الْبَأْسَ رَبَّ النَّاسِ ، وَاشْفِ ، فَأَنْتَ الشَّافِي ، لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ ، شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا “কষ্ট দূর করে দিন, হে মানুষের রব। আরোগ্য দান করুন, আর আপনিই আরোগ্যদানকারী। আপনার আরোগ্য ছাড়া আর কোনো আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য দিন, যা সামান্যতম রোগও অবশিষ্ট রাখবে না।”[বুখারী (৫৩৫১), মুসলিম (২১৯১)]
অনুরূপভাবে আপনাকে সূরা ফাতেহা, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়তে হবে। সমগ্র কুরআনেই চিকিৎসা আছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “আর আমরা কুরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও অনুগ্রহ। আর তা যালেমদের শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি করে।” [আল-ইসরা: ৮২]
৩. আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের একটি দল সফরে যাত্রাকালে কোনো এক গোত্রের কাছে পৌঁছে তাদের মেহমান হতে চাইলেন। কিন্তু তারা মেহমানদারি করতে অস্বীকৃতি জানাল। হঠাৎ সে গোত্রের সর্দার দংশিত হল। তখন তাদের একজন বলল, “আপনাদের কাছে কি কোনো ঔষধ আছে কিংবা আপনাদের মাঝে ঝাড়ফুঁক-কারী লোক আছে?”। তারা উত্তর দিল, “হ্যাঁ। তবে আপনারা আমাদের আতিথেয়তা করেননি। কাজেই আমাদের কোনো পারিশ্রমিক নির্দিষ্ট না করা পর্যন্ত আমরা তা করব না।” ফলে তারা আমাদেরকে এক পাল বকরী দিতে রাজী হল। তখন একজন সাহাবী উম্মুল কুরআন তথা সূরা ফাতিহা পড়তে লাগলেন এবং থুতু জমা করে সে ব্যক্তির গায়ে ছিটিয়ে দিলেন। এভাবে লোকটা আরোগ্য লাভ করল। এরপর সাহাবীরা বকরী নিয়ে এল এবং নিজেরা বলল, “আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করার আগে বকরীর ভাগ নিব না।” তারা তাঁকে উক্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি হেসে বললেন, “তোমরা কীভাবে জানলে যে রুকিয়া (ঝাড়ফুঁকযোগ্য)? তোমরা বকরীগুলো ভাগ করে নাও এবং তাতে আমার জন্যও এক ভাগ রেখে দিও।”[বুখারী (৫৪০৪), মুসলিম (২২০১)]।
৪. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রোগে মারা যান সে রোগের সময়ে তিনি নিজ দেহে মুআব্বিযাত (সূরা নাস ও ফালাক) পড়ে ফুঁক দিতেন। এরপর যখন রোগ তীব্র হয়ে গেল, তখন আমি সেগুলো পড়ে ফুঁক দিতাম। আর আমি তার নিজের হাত তার দেহের উপর বুলিয়ে দিতাম; তাঁর হাতে বরকতের কারণে। বর্ণনাকারী মা’মার বলেন, আমি যুহরীকে জিজ্ঞাসা করলাম, কিভাবে ফুঁক দিবে? তিনি বললেন, “দুই হাতের উপর ফুঁক দিবে, এরপর সেই হস্তদ্বয় দ্বারা আপন মুখমণ্ডল মুছবে।”[বুখারী (৫৪০৩), মুসলিম (২১৯২)]।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।