আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
ইমামতির জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি হলেন— যিনি নামাযের বিধি-বিধান জানেন এবং যার কুরআন মুখস্থ আছে। আবু মাসউদ আল-আনসারী থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি কুরআন পাঠে শ্রেষ্ঠ সে কওমের (সম্প্রদায়ের) ইমামতি করবে। যদি সবাই কুরআন পাঠে সমপর্যায়ের হয় তাহলে যে ব্যক্তি সুন্নাহ সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী সে ইমামতি করবে।”[হাদীসটি মুসলিম (১৫৩০) বর্ণনা করেছেন]
‘কুরআন পাঠে শ্রেষ্ঠ’ বলতে সুন্দরভাবে পাঠ করা ব্যক্তি উদ্দেশ্য নয়; বরং কুরআনের হাফেয উদ্দেশ্য। এর পক্ষে প্রমাণ হল আমর ইবনে সালামার হাদীস। তিনি বলেন: “... আমি সে বাণী (অর্থাৎ কুরআন) মুখস্থ করতাম যেন সেটি আমার হৃদয়ে গেঁথে থাকত। ... যখন মক্কা বিজয়াভিযান সংঘটিত হল তখন সব গোত্র তাড়াহুড়ো করে ইসলাম গ্রহণ করতে লাগল। আমার বাবা আমাদের গোত্রের আগেই ইসলাম গ্রহণ করলেন। তিনি ইসলাম গ্রহণের পর এসে বললেন: আল্লাহর শপথ! আমি সত্য নবীর কাছ থেকে তোমাদের কাছে এসেছি। তিনি বলে দিয়েছেন যে, অমুক সময়ে তোমরা অমুক নামায এবং অমুক সময়ে তোমরা অমুক নামায পড়বে। যখন নামাযের সময় হবে তোমাদের একজন আযান দিবে, আর তোমাদের মাঝে যে কুরআন বেশি জানে সে নামাযে ইমামতি করবে। সবাই এ রকম একজন লোক খুঁজল। কিন্তু আমার চেয়ে বেশি কুরআন জানা একজনকেও পাওয়া গেল না। কারণ আমি মুসাফির লোকদের থেকে কুরআন শিখতাম। কাজেই সবাই আমাকে তাদের সামনে এগিয়ে দিল। তখন আমি ছয় বা সাত বছরের বালক।”[বুখারী: (৪০৫১)]
আমরা বলেছি: নামাযের বিধি-বিধান অবশ্যই তার জানা থাকতে হবে; যেহেতু নামাযে আকস্মিক কিছু ঘটতে পারে; যেমন— তার ওযু ভেঙ্গে যাওয়া বা রাকাতে কমতি হওয়া। তখন সে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারবে না। ফলে নিজে ভুল করবে এবং অন্যদের নামাযে ঘাটতি করাবে কিংবা নামাযকে বাতিল করাবে।
পূর্বোক্ত হাদীসটা দিয়ে কিছু আলেম দলীল দিয়েছেন যে অধিক ফিকহী জ্ঞানধারী ব্যক্তি প্রাধান্য পাবেন।
নববী বলেন:
মালেক, শাফেয়ী ও এই দুজনের অনুসারীরা বলেন: অধিক ফিকহী জ্ঞানধারী ব্যক্তি কুরআন পাঠে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির উপর প্রাধান্য পাবে। কারণ যতটুকু পাঠ করা তার প্রয়োজন হবে সেটা নির্ধারিত। কিন্তু কতটুকু ফিকহী জ্ঞান প্রয়োজন হবে সেটা অনির্ধারিত। নামাযে এমন অবস্থা তৈরি হতে পারে যেখানে কেবল ফিকহী জ্ঞানে পরিপূর্ণ ব্যক্তিই সঠিক বিষয়টা রক্ষা করতে পারবে। এ কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে অন্যদের উপর প্রাধান্য দিয়েছিলেন। যদিও তিনি কুরআন পাঠে শ্রেষ্ঠ হিসেবে অন্যদের কথা উল্লেখ করেছিলেন।
এ মতাবলম্বীগণ পূর্বোক্ত হাদীসের জবাবে বলেছেন যে সাহাবীদের মাঝে যারা পড়ার দিক থেকে এগিয়ে ছিল তারা ফিকহী জ্ঞানেও সবচেয়ে বিজ্ঞ ছিলেন।
কিন্তু “যদি সবাই কুরআন পাঠে সমপর্যায়ের হয় তাহলে যে ব্যক্তি সুন্নাহ সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী সে ইমামতি করবে” এই কথা প্রমাণ করে যে, পাঠে অগ্রসর ব্যক্তি নিঃশর্তভাবে প্রাধান্য পাবে।[শরহু মুসলিম (৫/১৭৭)]
নববী যদিও হাদীস দিয়ে দলীল দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বীয় (মাযহাবের) ইমাম শাফেয়ীর বিপরীতে গিয়েছেন কিন্তু তাদের কথা বিবেচনা করার মত ছিল। কারণ সাহাবীদের মাঝে এমন কেউ ছিল না যে ভালো কুরআন পড়তে পারে কিন্তু শরয়ী বিধি-বিধানের ব্যাপারে একেবারে অজ্ঞ; যে অবস্থাটি বর্তমান যামানায় আমাদের অনেকের মাঝে বিদ্যমান।
ইবনে কুদামা বলেন: “যদি এমন হয় যে, দুই ব্যক্তির মধ্যে একজন নামাযের বিধি-বিধানে বিজ্ঞ হয়, অন্যজন নামায ছাড়া অন্যান্য বিধি-বিধানে বিজ্ঞ হয়; তাহলে নামাযের বিধি-বিধানে বিজ্ঞ ব্যক্তি প্রাধান্য পাবে।”[আল-মুগনী (২/১৯)]
ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির মতে: “...এটা জানার পর বলতে হবে: অজ্ঞ ব্যক্তির ইমামতি কেবল তার মত ব্যক্তির ক্ষেত্রেই শুদ্ধ হবে; যদি ইমামতি করার উপযুক্ত অন্য কেউ না থাকে।”[ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা: (১/২৬৪)]।
দুই:
আমরা প্রশ্নের মর্মার্থ বুঝতে পারিনি। শুধু ‘ইল্লাল্লাহ’ তো কোনো যিকির নয়। এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে শরীয়তের কোনো যিকিরে এটা আসেনি। বরং অন্য কথার সাথে এসেছে। যেমন:
لَا إِلَهَ إِلَاّ اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيءٍ قَدِيرٌ
বা অন্যান্য আরো অনেক যিকিরের সাথে এটা এসেছে।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।