আলহামদু লিল্লাহ।.
আব্দুল্লাহ্ বিন আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরার রোযা রাখলেন এবং রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন তখন সাহাবীরা বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! এই দিনকে তো ইহুদী-নাসারারা মর্যাদা দিয়ে থাকে। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ইন্শাআল্লাহ্; আগামী বছর আমরা ৯ তারিখেও রোযা রাখব। তিনি বলেন: আগামী বছর আসার আগেই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মারা গেলেন।”[সহিহ মুসলিম (১৯১৬)]
ইমাম শাফেয়ি ও তাঁর অনুসারীরা, ইমাম আহমাদ, ইমাম ইসহাক প্রমুখ আলেমগণ বলেন: ৯ তারিখ ও ১০ তারিখ উভয় দিন রোযা রাখা মুস্তাহাব। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১০ তারিখে রোযা রেখেছেন এবং ৯ তারিখে রোযা রাখার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন।
এ আলোচনার প্রেক্ষিতে: আশুরার রোযা রাখার একাধিক স্তর রয়েছে। সর্বনিম্ন স্তর হচ্ছে- শুধু ১০ তারিখে রোযা রাখা। এর উপরের স্তর হচ্ছে- ৯ তারিখের সাথে অন্য একদিনও রোযা রাখা। আর মুহররম মাসে যতবেশি রোযা রাখা যায় তত উত্তম ও ভাল।
যদি কেউ বলেন যে, ১০ তারিখের সাথে ৯ তারিখ রোযা রাখার গূঢ় রহস্য কী?
জবাব হচ্ছে-
ইমাম নববী (রহঃ) বলেন: আমাদের মাযহাবের আলেমগণ ও অন্যান্য আলেমগণ ৯ তারিখে রোযা রাখার গূঢ় রহস্য সম্পর্কিত কয়েকটি দিক উল্লেখ করেছেন:
১. এর পিছনে উদ্দেশ্য হচ্ছে- ইহুদীদের সাথে পার্থক্য তৈরী করা। যেহেতু তারা শুধু ১০ তারিখে রোযা রাখে। এটি ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
২. আশুরার দিনের সাথে আরও একটি রোযাকে মিলানো। যেমনটি এককভাবে শুধু জুমার দিন রোযা রাখা থেকে নিষেধ করা হয়েছে।
৩। দশ তারিখের রোযাটির ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা এই আশংকায় যে, চাঁদের হিসাবে কমতি হতে পারে, ভুল হতে পারে। তখন হিসাবে যেদিনই ৯ তারিখ বাস্তবে সেই দিন ১০ তারিখ হবে।[সমাপ্ত]
উল্লেখিত এ দিকগুলোর মধ্যে আহলে কিতাবদের সাথে পার্থক্য তৈরা করা এটি সবচেয়ে মজবুত। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাঃ) বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক হাদিসে আহলে কিতাবদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করা থেকে বারণ করেছেন। যেমন, আশুরার ব্যাপারে তাঁর বাণী: “যদি আমি আগামী বছর বাঁচি তাহলে অবশ্যই ৯ তারিখে রোযা রাখব।”[আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা; খণ্ড-০৫]
ইবনে হাজার (রহঃ) “যদি আমি আগামী বছর বাঁচি তাহলে অবশ্যই ৯ তারিখে রোযা রাখব।” এই হাদিসের উপর আলোচনা করতে গিয়ে বলেন:
তিনি যে, ৯ তারিখে রোযা রাখার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন এর ব্যাখ্যা হচ্ছে- শুধু ৯ তারিখে রোযা রাখা নয়; বরং ১০ তারিখের সাথে ৯ তারিখেও রোযা রাখা; সতর্কতামূলক কিংবা ইহুদি-নাসারাদের বিরুদ্ধাচারণমূলক। শেষোক্ত কারণটি অগ্রগণ্য। সহিহ মুসলিমের কিছু রেওয়ায়েত থেকে এই ইঙ্গিত পাওয়া যায়।[ফাতহুল বারী (৪/২৪৫)]