আলহামদু লিল্লাহ।.
মুসলমানদের মধ্যে যে ব্যক্তি নামায ফরয হওয়াকে অস্বীকার করে না, কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে নামায ত্যাগ করে তার হুকুমের ব্যাপারে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। কারো কারো মতে, এমন ব্যক্তি কাফের; তাকে মুসলিম মিল্লাত ত্যাগকারী ‘মুরতাদ’ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং তিনদিনের মধ্যে তওবা করার জন্য আহ্বান জানানো হবে। তিনদিনের মধ্যে তওবা না করলে তাকে ‘মুরতাদ’ হওয়ার অপরাধে হত্যা করা হবে। তার জানাযা নামায পড়া হবে না। মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা হবে না। জীবিত বা মৃত কোন অবস্থায় তাকে সালাম দেওয়া হবে না এবং তার সালামের জবাব দেওয়া হবে না। তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা হবে না, আল্লাহর রহমত কামনা করা হবে না। সে কারো থেকে উত্তরাধিকার সম্পত্তি পাবে না এবং তার থেকেও কেউ উত্তরাধিকার সম্পত্তি পাবে না। বরং তার সম্পত্তি বায়তুল মালের ফান্ডে বাজেয়াপ্ত করা হবে। নামায ত্যাগকারীদের সংখ্যা বেশি হোক কিংবা কম হোক; সংখ্যার কম-বেশি হওয়ার কারণে হুকুমের কোন তারতম্য হবে না।
এ অভিমতটি অধিক শুদ্ধ ও দলিলের দিক থেকে অধিক অগ্রগণ্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী হচ্ছে- ““আমাদের ও তাদের মধ্যে চুক্তি হলো নামাযের। সুতরাং যে ব্যক্তি নামায ত্যাগ করল, সে কুফরি করল।”[মুসনাদে আহমাদ ও সুনান গ্রন্থসমূহে সহিহ সনদে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে]
হাদিসে আরও এসেছে- “কোন ব্যক্তির মাঝে এবং শির্ক ও কুফরের মাঝে সংযোগ হচ্ছে সালাত বর্জন।”[সহিহ মুসলিম]
জমহুর আলেম (অধিকাংশ মাযহাবের আলেমগণ) বলেন: যদি কেউ নামায ফরয হওয়াকে অস্বীকার করে তাহলে সে ব্যক্তি কাফের ও ইসলাম ত্যাগকারী মুরতাদ। ইতিপূর্বে প্রথম অভিমতে বিস্তারিতভাবে যেসব হুকুম-আহকাম উল্লেখ করা হয়েছে সেসব হুকুম এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে পুরোপুরিভাবে প্রযোজ্য। আর যদি সে ব্যক্তি নামায ফরয হওয়াকে অস্বীকার না করে, কিন্তু অলসতাবশতঃ নামায ত্যাগ করে তাহলে সে ব্যক্তি কবিরা গুনাহগার। তবে সে মুসলিম মিল্লাত থেকে খারিজ হয়ে যাবে না। তাকে তিনদিনের মধ্যে তওবা করার আহ্বান জানানো ফরয হবে। সে এ আহ্বানে সাড়া দিলে, আলহামদুলিল্লাহ। আর সাড়া না দিলে তাকে নামায বর্জনের শাস্তি হিসেবে হত্যা করা হবে; কাফের হিসেবে নয়। হত্যার পর এ ব্যক্তিকে গোসল দেয়া হবে, কাফন পরানো হবে, তার জানাযা নামায পড়া হবে, তার জন্য ক্ষমা ও রহমত প্রার্থনা করা হবে, মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা হবে, সে উত্তরাধিকার সম্পত্তি পাবে এবং তার থেকেও অন্যেরা উত্তরাধিকার সম্পত্তি পাবে। সারকথা হলো, জীবিত বা মৃত একজন গুনাহগার মুসলমানের যাবতীয় বিধি-বিধান সে ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।