আলহামদু লিল্লাহ।.
ব্যক্তি নিজে নিজের কসুরগুলো উদঘাটন করতে পারা আত্মগঠনের প্রথম ধাপ।
যে ব্যক্তি নিজের কসুর জানতে পারে; সে নিজেকে গঠনের পথে এগিয়ে আসে। এই জানা আমাদেরকে আত্মগঠনের দিকে ধাবিত করে এবং এ পথে অবিরাম চলার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। এই জানাটা ব্যক্তিকে আত্মগঠনের পথ থেকে বিচ্যুত করে না। নিশ্চয় বান্দার প্রতি আল্লাহ্র পক্ষ থেকে তাওফিক হচ্ছে পরিবর্তন ও উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করতে পারা। যেমনটি আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্ কোন জনগোষ্ঠীর অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।” তাই যে ব্যক্তি আল্লাহ্র জন্য পরিবর্তন করে আল্লাহ্ তাকে পরিবর্তন করে দেন।
ব্যক্তি সত্তাগতভাবে ও এককভাবে নিজে নিজের জন্য দায়বদ্ধ। ব্যক্তিগতভাবে তার হিসাব নেয়া হবে এবং এককভাবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “আসমানসমূহ ও যমীনে এমন কেউ নেই, যে দয়াময়ের কাছে বান্দারূপে উপস্থিত হবে না। তিনি তাদের সংখ্যা জানেন এবং তিনি তাদেরকে বিশেষভাবে গুণে রেখেছেন, আর কিয়ামতের দিন তাদের সবাই তাঁর কাছে আসবে একাকী অবস্থায়।”[সূরা মারিয়াম, আয়াত: ৯৩-৯৫]
কোন মানুষের প্রতি যে কল্যাণই পেশ করা হোক না কেন সে এটা থেকে উপকৃত হতে পারে না; যদি তার স্ব-উদ্যোগ না থাকে। দেখুন না নূহ আলাইহিস সালামের স্ত্রী ও লূত আলাইহিস সালামের স্ত্রীর প্রতি। এই দুই নারী দুইজন নবীর ঘরে ছিলেন। দুইজন নবীর একজন উলুল আযম (সর্বোচ্চ শ্রেণীর মর্যাদাবান)- রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। প্রিয় ভাই, চিন্তা করে দেখুন একজন নবী তার স্ত্রীর পেছনে কী ধরনের চেষ্টা প্রচেষ্টা করেছেন। এই নারী প্রতিপালনের বড় একটি অংশ পেয়েছে। কিন্তু তাদের নিজেদের পক্ষ থেকে যেহেতু উদ্যোগ ছিল না তাই তাদেরকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে: “তোমরা উভয়ে জাহান্নামে প্রবেশকারীদের সাথে জাহান্নামে প্রবেশ কর”।[সূরা তাহরীম, আয়াত: ১০] অন্যদিকে ফেরাউনের স্ত্রী নিকৃষ্ট অপরাধীর ঘরে থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ্ ঈমানদের কাছে সে নারীকে দিয়ে উপমা পেশ করেছেন। যেহেতু সেই নারীর আত্মগঠনের উদ্যোগ ছিল।
একজন মুসলিমের আত্মগঠনের কিছু উপায় নিম্নরূপ:
১। আল্লাহ্র ইবাদত করা, তাঁর সাথে সম্পর্ক গড়া, তাঁর প্রতি আত্মসমর্পন করা। আর তা সম্পাদিত হবে ফরজ ইবাদতগুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করা এবং অন্তরকে গায়রুল্লাহ্র সম্পৃক্ততা থেকে পবিত্র করার মাধ্যমে।
২। বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা, অনুধাবন করা এবং কুরআনের মর্ম বুঝার চেষ্টা করা।
৩। উপকারী উপদেশমূলক বইপুস্তক পড়া যে সব বইতে আত্মার চিকিৎসা ও ঔষধ নিয়ে আলোচনা করা হয়। যেমন- মিনহাজুল কাসেদীন, তাহযীবু মাদারিজিস সালেকীন ইত্যাদি। সলফে সালেহীনদের জীবনী ও চরিত্র জানা। এ বিষয়ে ইবনুল জাওযির ‘সিফাতুস সাফওয়া’ এবং বাহাউদ্দীন আকীল ও নাসির আল-জুলাইলের ‘আইনা নাহনু মিন আখলাকিস সালাফ’ বইদ্বয় পড়া।
৪। আত্মগঠনমূলক প্রোগ্রামগুলোতে হাযির হওয়া; যেমন দারস ও আলোচনাসভা।
৫। সময়ের সংরক্ষণ করা এবং সময়কে দুনিয়া ও আখিরাতের উপকারী কাজে লাগানো।
৬। বৈধ শ্রেণীর কাজগুলোতে বেশি না জড়ানো এবং এ ধরণের কাজগুলোতে বেশি গুরুত্ব না দেয়া।
৭। সৎসঙ্গে থাকা এবং সৎ সঙ্গি খুঁজে নেয়া; যারা কল্যাণের কাজে সহযোগিতা করবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি একাকী থাকে সে ইসলামী ভ্রাতৃত্বের অনেক গুণাবলী মিস করে; যেমন অন্যকে অগ্রাধিকার দেয়া, সবর করা।
৮। অর্জিত তাত্ত্বিক ইলমকে বাস্তব কর্মে পরিণত করা।
৯। নিখুঁতভাবে নিজের আত্মসমালোচনা করা।
১০। আল্লাহ্র উপর নির্ভর করার সাথে আত্মবিশ্বাস রাখা। যেহেতু আত্মবিশ্বাস ছাড়া কাজ করা যায় না।
১১। আল্লাহ্র জন্য নিজেকে তুচ্ছ জ্ঞান করা। এই পয়েন্টটি পূর্বের পয়েন্টের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। মানুষের উচিত নিজের মধ্যে কসুর আছে এই ধারণা নিয়েই আমল করা।
১২। শরয়ি নির্জনতা: অর্থাৎ সবসময় মানুষের সাথে মিশবে না। বরং নিজের জন্য বিশেষ কিছু সময় রাখবে ইবাদতে কাটানোর জন্য এবং শরয়ি নির্জনতার জন্য।
আমরা আল্লাহ্র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন আমাদের নিজেদের গঠনে আমাদেরকে সহযোগিতা করেন, আমাদের সত্তাগুলোকে আল্লাহ্র পছন্দ ও সন্তুষ্টির প্রতি বাধ্যগত করে দেন। আমাদের নবী মুহাম্মদের প্রতি, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীবর্গের প্রতি আল্লাহ্র রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।