আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
সহিহ সুন্নাহ অনুযায়ী সংক্ষেপে হাজীসাহেবের কার্যাবলী নিম্নরূপ:
১. যিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখে হাজীসাহেব মক্কা থেকে কিংবা হারামের নিকটবর্তী কোন স্থান থেকে ইহরাম বাঁধবেন। উমরার ইহরামের সময় যা যা করেন যেমন- গোসল করা, সুগন্ধি লাগানো, নামায পড়া ইত্যাদি হজ্জের ইহরামের সময়েও তা তা করবেন। এরপর হজ্জের ইহরামের নিয়্যত করবেন এবং তালবিয়া পড়বেন। হজ্জের তালবিয়া উমরার তালবিয়ার মতই। শুধু হজ্জের ক্ষেত্রে ইহরামকারী বলবেন: ‘লাব্বাইকা হাজ্জান’; পক্ষান্তরে, উমরার ক্ষেত্রে বলেন: ‘লাব্বাইকা উমরাতান’। যদি তিনি হজ্জ সমাপন করতে না পারার কোন আশংকা করেন সে ক্ষেত্রে শর্ত করে নিয়ে বলবেন: ‘ওয়া ইন হাবাসানি হাবিস ফা মাহিল্লি হাউছু হাবাসতানি’ (অর্থ- যদি কোন প্রতিবন্ধকতা আমাকে আটকে দেয়, তাহলে আমি যে স্থানে প্রতিবন্ধকতার শিকার হব সেখানে হালাল হয়ে যাব)। আর যদি এরকম কোন আশংকা না থাকে তাহলে শর্ত করবে না।
২. অতঃপর মীনাতে যাবে এবং সেখানে রাত্রি যাপন করবে। মীনাতে যোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজর পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করবে।
৩. ৯ ই যিলহজ্জ সূর্যোদয় হলে ‘আরাফা’ এর উদ্দেশ্য রওয়ানা হবে। সেখানে যোহর-আসর দুই ওয়াক্তের নামায যোহরের ওয়াক্তে ক্বসর করে আদায় করে নিবে। অতঃপর সূর্য ডোবা পর্যন্ত সময় দোয়া, যিকির ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে কাটাবে।
৪. সূর্য ডুবার পর ‘মুযদালিফা’ এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। মুযদালিফাতে পৌঁছামাত্রই মাগরিব-এশার নামায একত্রে আদায় করবে। এরপর সেখানে ফজরের নামায পড়া পর্যন্ত রাত্রি যাপন করবে। অতঃপর সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত দোয়া করতে থাকবে।
৫. এরপর জমরা আকাবাতে কংকর মারার জন্য মীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যাবে। মীনাতে গিয়ে জমরা আকাবাতে একের পর এক ৭টি কংকর নিক্ষেপ করবে। জমরা আকাবা হচ্ছে সর্বশেষ জমরা; যে জমরার পরে মক্কা শুরু। প্রতিটি কংকর হবে খেজুর বিচির সমান। প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সময় তাকবীর বলবে।
৬. অতঃপর হাদির পশু যবেহ করবে। হাদি হচ্ছে- একটি ছাগল, আর উট কিংবা গরু হলে এক সপ্তামাংশ।
৭. এরপর পুরুষ হলে মাথা মুণ্ডন করবে। আর নারী হলে মাথার চুল ছোট করবে; সমস্ত চুল থেকে হাতের এক আঙ্গুলের মাথা পরিমাণ চুল কাটবে।
৮. এরপর মক্কায় গিয়ে হজ্জের তাওয়াফ আদায় করবে।
৯. তারপর মীনাতে ফিরে এসে রাত্রিযাপন করবে অর্থাৎ ১১ ও ১২ ই যিলহজ্জের রাত্রি এবং সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার পর তিনটি জমরাতে কংকর নিক্ষেপ করবে। প্রতিটি জমরাতে একের পর এক ৭টি কংকর মারবে। ছোট জমরা থেকে শুরু করবে, তারপর মাঝারি জমরা। এ দুই জমরাতে কংকর নিক্ষেপ করার পর দোয়া করবে। অতঃপর জমরাতে আকাবাতে কংকর মারবে। এই জমরাতে কংকর মারার পর দোয়া নেই।
১০. ১২ ই যিলহজ্জের কংকর মারা শেষ হলে ইচ্ছা করলে মীনা ত্যাগ করে চলে যাবে। আর চাইলে মীনাতে থেকে গিয়ে ১৩ ই যিলহজ্জ রাত্রি যাপন করবে এবং মধ্যাহ্নের পর পূর্বের ন্যায় তিনটি জমরাতে কংকর মারবে। ১৩ ই যিলহজ্জ মীনাতে থেকে যাওয়া উত্তম; ওয়াজিব নয়। তবে ১২ ই যিলহজ্জ সূর্যাস্তের সময়েও কেউ যদি মীনাতে অবস্থান করে তাহলে তার উপর ১৩ ই যিলহজ্জের রাত্রি মীনাতে কাটিয়ে মধ্যাহ্নের পর তিনটি জমরাতে কংকর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। তবে ১২ই যিলহজ্জের সূর্যাস্তের সময় মীনাতে থাকা যদি তার অনিচ্ছাকৃত কারণে হয় যেমন- সে রওয়ানা দিয়েছে, বাসে চড়েছে কিন্তু গাড়ীর জ্যামের কারণে কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন কারণে দেরী হয়েছে তাহলে ১৩ তারিখের রাত্রি যাপন তার উপর ওয়াজিব হবে না। কারণ সূর্যাস্ত পর্যন্ত দেরী করাটা তার অনিচ্ছায় ঘটেছে।
১১. এ দিনগুলো কাটানোর পর সে যখন স্বদেশের উদ্দেশ্যে সফর করার ইচ্ছা করবে তখন সাত চক্কর বিদায়ী তাওয়াফ না করে সফর করবে না। তবে, হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত নারীর উপর বিদায়ী তাওয়াফ নেই।
১২. আর বদলি হজ্জকারী; আত্মীয়ের পক্ষ থেকে বদলি হজ্জকারী হোক কিংবা অনাত্মীয় কারো পক্ষ থেকে বদলি হজ্জকারী হোক তাকে অবশ্যই বদলি হজ্জের আগে নিজের হজ্জ আদায় করেছে এমন হতে হবে। বদলি হজ্জের ক্ষেত্রে নিয়ত ছাড়া পদ্ধতিগত আর কোন পার্থক্য নেই। অর্থাৎ সে ব্যক্তি নিয়ত করবে যে, তিনি এ অমুক ব্যক্তির পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করছেন। তালবিয়ার সময় নাম উল্লেখ করে বলবে: ‘লাব্বাইকা আন ফুলান’ (অর্থ- অমুক ব্যক্তির পক্ষ থেকে আমি হাজির)। এরপর হজ্জের মধ্যে দোয়া করার সময় নিজের জন্য দোয়া করবে এবং যার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করছে তার জন্যেও দোয়া করবে।
দুই:
হজ্জের প্রকারভেদ তিনটি: তামাত্তু, ক্বিরান ও ইফরাদ।
তামাত্তু হজ্জ: হজ্জের মাসসমূহে (শাওয়াল, যিলক্বদ, যিলহজ্জ) উমরার ইহরাম বাঁধা ও উমরা পালন করা এবং একই বছর ৮ই যিলহজ্জ মক্কা থেকে কিংবা মক্কার কাছাকাছি কোন স্থান থেকে হজ্জের ইহরাম বাঁধা।
ক্বিরান হজ্জ: মীকাত থেকে উমরা ও হজ্জের ইহরাম একত্রে বাঁধা। এ ইহরামদ্বয় থেকে হাজীসাহেব কোরবানীর দিনের আগে হালাল হবেন না। কিংবা প্রথমে শুধু উমরার ইহরাম বাঁধবেন, অতঃপর উমরার তাওয়াফ শুরু করার আগে এর মধ্যে হজ্জের ইহরামও প্রবেশ করাবেন।
ইদরাফ হজ্জ: মীকাত থেকে, কিংবা মক্কার বাসিন্দা হলে মক্কা থেকে, আর মীকাতের ভেতরের বাসিন্দা হলে সে স্থান থেকে শুধু হজ্জের ইহরাম বাঁধা। অতঃপর কোরবানীর দিন পর্যন্ত এ ইহরামের উপর থাকা; যদি তার সাথে হাদির পশু থাকে। আর যদি সাথে হাদির পশু না থাকে তাহলে হজ্জের ইহরামকে উমরার ইহরামে পরিবর্তন করার বিধান রয়েছে। সেক্ষেত্রে সে ব্যক্তি তাওয়াফ করবে, সায়ী করবে ও মাথার চুল ছোট করে হালাল হয়ে যাবে যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেসব সাহাবীদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যারা হজ্জের ইহরাম বেঁধেছিলেন কিন্তু তাদের সাথে হাদির পশু ছিল না। অনুরূপভাবে ক্বিরান হজ্জ আদায়কারীও পূর্বোক্ত কারণে ক্বিরান হজ্জের ইহরামকে উমরার ইহরামে পরিবর্তন করতে পারেন।
সর্বোত্তম হজ্জ হচ্ছে- তামাত্তু হজ্জ; যে ব্যক্তি হাদির পশু সাথে নিয়ে যায়নি তার জন্য। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে তামাত্তু হজ্জ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে তাদেরকে তাগিদ দিয়েছেন।
হজ্জ ও উমরা বিধিবিধান আরও বিস্তারিতভাবে জানার জন্য আমরা আপনাকে শাইখ উছাইমীনের ‘মানাসিকুল হাজ্জ ও উমরা’ কিতাবটি অধ্যয়নের পরামর্শ দিচ্ছি। শাইখের ওয়েব সাইটে কিতাবটি পাওয়া যাবে।
আল্লাহই ভাল জানেন।