আলহামদু লিল্লাহ।.
আলহামদুলিল্লাহ।কিছু কিছু হাজীসাহেব মসজিদে নববী যিয়ারতের সময় যে ভুলগুলো করে থাকেন সেগুলো বিভিন্ন রকমের:
এক:
কিছু কিছু হাজীসাহেব বিশ্বাস করেন যে, মসজিদে নববী যিয়ারত করা হজ্জের সাথে সম্পৃক্ত। মসজিদে নববী যিয়ারত না করলে হজ্জ আদায় হবে না। বরং কোন কোন জাহেল মানুষ যিয়ারতকে হজ্জের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন। এমন বিশ্বাস বাতিল। হজ্জ ও মসজিদে নববী যিয়ারতের মাঝে কোন সম্পর্ক নেই। যিয়ারত ছাড়াই হজ্জ পরিপূর্ণ হয়ে যায় এবং হজ্জ ছাড়াও যিয়ারত পূর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু, মানুষ অনেক আগে থেকে হজ্জের সফরে যিয়ারত করে থাকে। যেহেতু বারবার সফর করা তাদের জন্য কষ্টকর। আর যেহেতু যিয়ারত করা হজ্জের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। কারণ হজ্জ ইসলামের অন্যতম একটি রুকন, মহান ভিত্তিগুলোর অন্যতম; কিন্তু যিয়ারত সে রকম কিছু নয়। আমরা এমন কোন আলেম জানি না, যিনি বলেছেন যে, মসজিদে নববী যিয়ারত করা ওয়াজিব কিংবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কবর যিয়ারত করা ওয়াজিব।
তবে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যে হাদিসটি বর্ণনা করা হয় যে তিনি বলেছেন: “যে ব্যক্তি হজ্জ আদায় করল কিন্তু আমাকে যিয়ারত করল না সে ব্যক্তি আমার সাথে রূঢ় ব্যবহার করল” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামে মিথ্যা হাদিস এবং দ্বীনের স্বতঃসিদ্ধ বিষয়ের সাথে সাংঘর্ষিক। যদি এই হাদিসটি সাব্যস্ত হত তাহলে তাঁর কবর যিয়ারত করা সব ওয়াজিবগুলোর মধ্যে সর্বাধিক তাগিদপূর্ণ ওয়াজিব হত।
দুই:
কিছু কিছু যিয়ারতকারী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কবরের চারদিকে তাওয়াফ করেন এবং হুজরার গ্রিল ও দেয়ালগুলো স্পর্শ করেন। এমনকি কেউ কেউ তাদের ঠোঁট দিয়ে চুমো খান, দেয়ালের উপর নিজেদের গাল রাখেন– এগুলো সবই গর্হিত বিদাত। কাবা ঘর ছাড়া অন্য কিছুর চারদিকে তাওয়াফ করা নিষিদ্ধ বিদাত। অনুরূপভাবে স্পর্শ করা, চুমো খাওয়া ও গাল রাখা কাবা ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে করা শরিয়তসম্মত। তাই হুজরার দেয়ালে এ ধরণের কর্ম পালন করার মাধ্যমে ব্যক্তি আল্লাহ্র থেকে আরও দূরে সরে যায়।
তিন:
কিছু কিছু যিয়ারতকারী মসজিদে নববীর মেহরাব, মিম্বর ও মসজিদের দেয়ালকে স্পর্শ করে। এ সবকিছু বিদাত।
চার:
এটি হচ্ছে সবচেয়ে জঘন্য। কিছু কিছু যিয়ারতকারী বিপদাপদ দূর করার জন্য কিংবা নিজের মাকছুদ পূর্ণ হওয়ার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ডাকে। এটি মুসলিম মিল্লাত থেকে বহিষ্কারকারী বড় শির্ক; যে কাজের প্রতি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল সন্তুষ্ট নয়। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “আর নিশ্চয় মসজিদগুলো (তথা সিজদার স্থানগুলো) আল্লাহ্র জন্য। কাজেই তোমরা আল্লাহ্র সাথে কাউকে ডেকো না।”[সূরা জিন্ন, আয়াত: ১৮] আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেন: “আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহংকারবশে আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে।”[সূরা গাফের, আয়াত: ৬০] আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেন: “যদি তোমরা কুফরী কর তবে (জেনে রাখ) আল্লাহ্ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। আর তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য কুফরী পছন্দ করেন না।”[সূরা যুমার, আয়াত: ৭]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে ما شاء الله وشئت (আল্লাহ্ যা চায় এবং আপনি যা চান) বলতে শুনে এর সমালোচনা করে বলেন: তুমি কি আমাকে আল্লাহ্র সমকক্ষ বানালে? বরং এককভাবে আল্লাহ্ যা চান।”[সুনানে ইবনে মাজাহ (২১১৮)] সুতরাং যে ব্যক্তি অকল্যাণ দূর করা ও কল্যাণ অর্জন করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ডাকে তার ব্যাপারটি কেমন হতে পারে? অথচ আল্লাহ্ তাআলা তাঁকে লক্ষ্য করে বলেছেন: “(হে রাসূল!) আপনি বলুন, আল্লাহ্ যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া আমার নিজের ভাল-মন্দের উপরও আমার নিজের কোন অধিকার নেই।”[সূরা আরাফা, আয়াত: ১৮৮] আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেন: “বলুন, নিশ্চয় আমি তোমাদের কোন ক্ষতি বা কল্যাণের মালিক নই। বলুন, আল্লাহ্র পাকাড়ও হতে কেউই আমাকে রক্ষা করতে পারবে না এবং আল্লাহ্ ছাড়া আমি কখনও কোন আশ্রয় পাব না।”[সূরা জিন্ন, আয়াত: ২১]
তাই মুমিনের উচিত তার ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষাকে তার স্রষ্টার সাথে সম্পৃক্ত করা; যিনি তার আশা বাস্তবায়ন করা ও ভীতি দূর করার ক্ষমতা রাখেন। মুমিনের কর্তব্য হচ্ছে– নিজ নবীর অধিকারগুলো জানা; যেমন- তাঁর প্রতি ঈমান আনা, তাঁকে ভালবাসা, প্রকাশ্যে ও গোপনে তাঁর অনুসরণ করা এবং এর উপর অবিচল থাকার জন্য আল্লাহ্র কাছে দোয়া করা। এ ছাড়া তিনি যেভাবে বিধান দিয়ে গেছেন এর বরখেলাফ করে আল্লাহ্র ইবাদত না করা।