আলহামদু লিল্লাহ।.
উল্লেখিত অবস্থায় আপনার মীকাত হবে ‘ক্বারনুল মানাযিল’ বর্তমানে এটাকে ‘আস-সাইলুল কাবির’ বলা হয়। হজ্জপালনেচ্ছু ব্যক্তি যে মীকাতের উপর দিয়ে পথ অতিক্রম করবে সে মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা ওয়াজিব। যদি সে ব্যক্তি তার নিজের মীকাত অতিক্রম না করে তাহলে সে যখন তার মীকাতের সমান্তরালে পৌঁছবে সেটা স্থলপথে হোক, জলপথে হোক কিংবা আকাশপথে হোক তাহলে সে স্থান থেকে ইহরাম বাঁধা তার উপর ওয়াজিব। অতএব, আপনার উপর ওয়াজিব হচ্ছে- বিমান মীকাতের সমান্তরালে পৌঁছলে আপনি সেখান থেকে ইহরাম বাঁধবেন। বিমান যেহেতু মীকাতের উপর দিয়ে খুব দ্রুত উড়ে যাবে তাই সতর্কতামূলক মীকাতের আগে থেকে ইহরাম বাঁধতে বাধা নেই।
শাইখ বিন জিবরীন (রহঃ) বলেন:
যে ব্যক্তির পথে কোন মীকাত পড়বে না সে ব্যক্তি নিকটতম মীকাতের সমান্তরাল দিয়ে অতিক্রম করার সময় সেখান থেকে ইহরাম বাঁধবে সেটা স্থলপথে হোক, জলপথে হোক, কিংবা আকাশপথে হোক। বিমানের যাত্রী মীকাত বরাবর এলে ইহরাম বাঁধবেন। সতর্কতামূলক মীকাতের আগেই ইহরাম বাঁধতে পারেন; যাতে করে ইহরাম বাঁধার আগে মীকাত পার হয়ে না যায়। যে ব্যক্তি মীকাত পার হয়ে যাওয়ার পর ইহরাম বাঁধবে তাকে একটি দম দিতে হবে। আল্লাহই ভাল জানেন। [সমাপ্ত]
[ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা (২/১৯৮)]
স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র এসেছে-
জেদ্দা হজ্জ কিংবা উমরার মীকাত নয়। তবে, জেদ্দার অধিবাসী ও জেদ্দাতে প্রবাসীরা জেদ্দা থেকে ইহরাম করবেন। তা ছাড়া যে ব্যক্তি কোন প্রয়োজনে জেদ্দা গিয়েছেন; যাওয়ার সময় হজ্জ বা উমরা পালনের সুদৃঢ় ইচ্ছা ছিল না, পরবর্তীতে তার ইচ্ছা জেগেছে সে ব্যক্তিও জেদ্দা থেকে ইহরাম বাঁধবেন। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তির মীকাত জেদ্দার আগে সে ব্যক্তি তার মীকাত থেকে কিংবা তার মীকাতের স্থল, জল বা আকাশপথের সমান্তরাল থেকে ইহরাম বাঁধবেন। যেমন- মদিনা ও মদিনার পিছনে বসবাসকারী কিংবা স্থল বা আকাশ পথে একই সমান্তরাল দিয়ে আগমনকারীদের মীকাত যুলহুলাইফা, যেমন- জুহফাবাসীদের মীকাত হচ্ছে জুহফা এবং যারা স্থল-জল-আকাশ পথে জুহফার সমান্তরাল দিয়ে অতিক্রম করবেন তাদের মীকাতও জুহফা, যেমন- ইয়ালামলামবাসী, ইয়ালামলাম অতিক্রমকারী ও একই সমান্তরাল দিয়ে গমনকারীদের মীকাত ইয়ালামলাম।[সমাপ্ত, ফতোয়াবিষয়ক স্থায়ীকমিটির ফতোয়াসমগ্র (১১/১৩০)]
মীকাতের সমান্তরাল স্থান থেকে ইহরাম বাঁধার দলিল হচ্ছে- সহিহ বুখারীতে বর্ণিত ইবনে উমর (রাঃ) এর বর্ণনা তিনি বলেন: যখন এ দুটি শহর (কুফা ও বসরা) বিজয় হল এর অধিবাসীরা উমর (রাঃ) এর কাছে এসে বললেন: হে আমীরুল মুমিনীন! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নজদবাসীদের মীকাত নির্ধারণ করেছেন ‘ক্বারন’। কিন্তু, ‘ক্বারন’ আমাদের পথে পড়ে না; ক্বারনে যেতে আমাদের কষ্ট হয়। তখন তিনি বললেন: তোমরা তোমাদের পথে ক্বারনের বরাবরে পড়ে এমন কোন স্থান ঠিক কর। এভাবে তিনি তাদের জন্য ‘যাতু ক্বারন’ নামক স্থান মীকাত হিসেবে নির্ধারণ করলেন।
হাফেয ইবনে হাজার ‘ফাতহুল বারী’ (৩/৩৮৯) গ্রন্থে বলেন:
“তোমরা ক্বারনের বরাবরে পড়ে এমন কোন স্থান ঠিক কর” অর্থাৎ তোমরা যে ভূমি দিয়ে আগমন কর সে রাস্তার উপর মীকাতের বরাবর কোন স্থান ঠিক করে সেটাকে মীকাত হিসেবে নির্ধারণ কর।[সমাপ্ত]
জ্ঞাতব্য, মীকাতের আগে ইহরাম বাঁধা নবীজির আদর্শ নয়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে করেননি। সর্বোত্তম আদর্শ হচ্ছে- নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ। তবে, কেউ যদি বিমানের আরোহী হয় এবং তার পক্ষে মীকাতের সমান্তরাল স্থানে যাত্রা বিরতি করা সম্ভবপর না হয়; সেক্ষেত্রে সে ব্যক্তি সতর্কতামূলক তার প্রবল ধারণা অনুযায়ী এমন স্থান থেকে ইহরাম বাঁধবেন যাতে করে তিনি ইহরাম বাঁধা অবস্থায় মীকাত অতিক্রম করতে পারেন।
হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে যারা হজ্জ করেছেন তাদের কেউ যুলহুলাইফার আগে ইহরাম বেঁধেছেন মর্মে জানা যায় না। যদি মীকাত সুনির্দিষ্ট না হত তাহলে তারা আগেই ইহরাম বেঁধে ফেলতেন। যেহেতু আগে থেকে ইহরাম বাঁধলে কষ্ট বেশি, এতে সওয়াবও বেশি।[ফাতহুল বারী (৩/৩৮৭)]
আল্লাহই ভাল জানেন।