আলহামদু লিল্লাহ।.
আলহামদুলিল্লাহ।
যে ব্যক্তি সত্যিকারার্থে আল্লাহ্র প্রতি ঈমানদার, তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমানদার, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি ঈমানদার এবং নামায যে একটি ফরয ইবাদত ও দুই সাক্ষ্যবাণীর পর ইসলামের সবচেয়ে বড় স্তম্ভ এটার প্রতি ঈমানদার- সে নামায পড়বে না কিংবা নামায আদায়ে অবহেলা করবে এটা কল্পনা করা যায় না। বরং এমন ব্যক্তি এ মহান বিধানটি পালন করা ও নিয়মিত আদায় করা ছাড়া চঞ্চলতা, স্বস্তি ও প্রশান্তি পায় না।
বান্দার ঈমান যতবেশি বাড়ে তার মাঝে ফরয ইবাদত পালনের গুরুত্বও ততবেশি বাড়ে। এবং এটা তার ঈমানও বটে। অতএব, যে পদ্ধতি আপনাকে নিয়মিত নামাযী বানাতে পারবে সেটা সংক্ষেপে নিম্নরূপ:
এক:
নামায যে একটি ফরয ইবাদত ও ইসলামের মহান রুকন আপনি এ বিষয়ে সুদৃঢ় ঈমান আনুন। আপনি জেনে রাখুন: নামায বর্জনকারী কঠিন শাস্তির ঘোষণাপ্রাপ্ত এবং আলেমদের সঠিক মতানুযায়ী ইসলামী ত্যাগকারী কাফের; এ সংক্রান্ত অনেক দলিল প্রমাণের ভিত্তিতে। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “মুমিন ব্যক্তি এবং শির্ক-কুফরের মাঝে পার্থক্য নির্ধারণকারী হচ্ছে- নামায বর্জন।”[সহিহ মুসলিম (৮২)] তিনি আরও বলেন: "আমাদের ও তাদের মাঝে অঙ্গীকার হচ্ছে- নামাযের। যে ব্যক্তি নামায ত্যাগ করল সে কুফরী করল"।[সুনানে তিরমিযি (২৬২১), সুনানে নাসাঈ (৪৬৩) ও সুনানে ইবনে মাজাহ (১০৭৯)। আলবানি 'সহিহুত তিরমিযি' গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
দুই:
নামাযকে নির্দিষ্ট ওয়াক্ত থেকে বিলম্বে আদায় করা কবিরা গুনাহ। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “কিন্তু তাদের পরে এমন এক প্রজন্ম এল যারা নামায নষ্ট করল এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করল। অতএব অচিরেই তারা غَيّ (ক্ষতিগ্রস্ততা) এর সম্মুখীন হবে। [সূরা মারিয়াম, আয়াত: ৫৯] ইবনে মাসউদ (রাঃ) غَيّ সম্পর্কে বলেন: এটি জাহান্নামের একটি নর্দমা; যা অতি গভীর ও খারাপ স্বাদের।
আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেন: "অতএব, দুর্ভোগ সেই নামাযীদের জন্য যারা তাদের নামায আদায়ের ব্যাপারে অমনোযোগী।"[সূরা মাউন, আয়াত: ৪-৫]
তিন:
আপনার উচিত মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে নামায আদায়ে সচেষ্ট থাকা এবং এক ওয়াক্ত নামাযের ব্যাপারেও অবহেলা না করা। এ বিশ্বাসের সাথে যে, আলমদের সর্বাধিক শুদ্ধ মতানুযায়ী জামাতের সাথে নামায আদায় করা ওয়াজিব। এ সংক্রান্ত অনেকগুলো দলিলের কারণে। যেমন- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "যে ব্যক্তি আযান শুনেও কোন ওজর ছাড়া নামাযে আসেনি তার নামায নেই"। [হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইবনে মাজাহ (৭৯৩), দ্বারা কুতনি ও হাকেম। হাকেম হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন এবং আলবানি 'সহিহ ইবনে মাজাহ' গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
ইমাম মুসলিম (৬৫৩) তাঁর সহিহ গ্রন্থে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: এক অন্ধ লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমার এমন কোন সহচর নাই যে আমাকে মসজিদে নিয়ে আসবে। তাই লোকটি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অবকাশ (রুখসত) চাইল; যাতে করে সে নিজগৃহে নামায পড়তে পারে। তখন তিনি তাকে অবকাশ দিলেন। লোকটি যখন চলে যাচ্ছিল তখন তিনি বললেন: তুমি কি নামাযের ডাক শুন? সে বলল: হ্যাঁ। তিনি বললেন: তাহলে তুমি সে ডাকে সাড়া দাও।" এছাড়াও আরও দলিল রয়েছে। দেখুন: 40113 নং প্রশ্নোত্তর।
চার:
নিয়মিত নামায আদায় করার মাধ্যমে আপনি ঐ সাতব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আশা করবেন যাদেরকে আল্লাহ্ তাঁর ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। ঐ সাতব্যক্তির মধ্যে একজন হচ্ছেন- 'এমন যুবক যে ইবাদতের মধ্যে বড় হয়েছে'। অপর একজন হচ্ছেন- 'যার অন্তর মসজিদে লটকে থাকে'।[সহিহ বুখারি (৬৬০) ও সহিহ মুসলিম (১০৩১)]
পাঁচ:
আপনি নামায আদায় করার মাধ্যমে মহা পুরস্কার প্রাপ্তির আশা করবেন; বিশেষত জামাতের সাথে নামায আদায় করার মাধ্যমে। সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: "জামাতের সাথে নামায আদায় করা কেউ নিজগৃহে ও বাজারে নামায আদায় করার চেয়ে ২৫ গুণ বেশি সওয়াব। তা এ কারণে যে, যখন সে ওযু করে এবং ওযুকে সুন্দর করে এরপর মসজিদের উদ্দেশ্য বেরিয়ে যায় এবং নামায ছাড়া আর কোন উদ্দেশ্য থাকে না তখন প্রতিটি কদমে তার এক স্তর মর্যাদা উন্নীত হয় এবং প্রতি কদমে তার একটি গুনাহ মাফ হয়। নামায শেষ করে সে যখন জায়নামাযে বসে থাকে তখন ফেরেশতারা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে: হে আল্লাহ্! তাকে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ্! তার প্রতি রহম করুন'। যতক্ষণ পর্যন্ত সে বসে থাকে ততক্ষণ। তোমাদের কেউ যখন নামাযের অপেক্ষায় থাকে তখন সে নামাযেই থাকে।"[সহিহ বুখারি (৬৪৭) ও সহিহ মুসলিম (৬৪৯)]
উসমান বিন আফ্ফান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: "যে ব্যক্তি নামাযের জন্য ওযু করে এবং ওযুকে পরিপূর্ণভাবে সম্পাদন করে, এরপর ফরয নামাযের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায় এবং মানুষের সাথে কিংবা জামাতের সাথে কিংবা মসজিদে নামায আদায় করে আল্লাহ্ তার গুনাহগুলো মাফ করে দেন"।[সহিহ মুসলিম (২৩২)]
ছয়:
আপনি নামায আদায় করার ফযিলতগুলো এবং নামায বর্জন করার বা অলসতা করার কুফল সম্পর্কে পড়াশুনা করবেন। আমরা এ বিষয়ে আপনাকে শাইখ মুহাম্মদ বিন ইসমাইল আল-মুকাদ্দাম এর কিতাব "আস-সালাতু লিমা-যা" পড়ার এবং শাইখ মুহাম্মদ হুসাইন ইয়াকুব এর আলোচনা: "লিমা-যা লা তুসাল্লি" শুনার পরামর্শ দিচ্ছি। এতে আপনি অনেক উপকার পাবেন; ইনশাআল্লাহ্।
সাত:
এমন সৎ বন্ধু নির্বাচন করা যারা নামাযের ব্যাপারে সচেতন এবং যথাযথভাবে নামায আদায় করে। এবং যারা এমন নয় সেসব বন্ধুকে বর্জন করা। কারণ বন্ধু বন্ধুকে অনুকরণ করে থাকে।
আট:
জীবনের সকল ক্ষেত্রে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা এবং অন্যদের সাথে বিশেষতঃ নারীদের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে শরিয়তের বিধান মেনে চলা। কারণ গুনাহর কাজ বান্দাকে সবচেয়ে বেশি নেক আমল থেকে দূরে রাখে এবং তার উপর শয়তানের আধিপত্যকে জোরদার করে।
আমরা আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আপনাকে তাঁর নেক বান্দা ও নৈকট্যবান বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।