বৃহস্পতিবার 27 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 28 নভেম্বর 2024
বাংলা

যে নারী অনেকদিন রোযা ভেঙ্গেছে বিধান না জানার কারণে ও সংখ্যা না জানার কারণে

প্রশ্ন

বিগত বছরগুলোতে আমি আমার পরিবারের সাথে থাকাবস্থায় কত রোযা ভেঙ্গেছি তা জানি না। যেহেতু আমরা গ্রামে থাকতাম। সেখানে রোযার বিধিবিধান সম্পর্কে কেউ কিছু জানত না। এ দিনগুলোতে আমি রোযা রাখিনি। আমি জানিও না যে, কতদিন রোযা ভেঙ্গেছি। সে দিনগুলোর বদলে আমি একটা অংকের অর্থ দান করেছি। কিছু সময় পর এক বোনের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, এ দিনগুলোর রোযা কাযা পালন করা আমার ওপর ওয়াজিব। কিন্তু আমি এ দিনগুলোর সংখ্যা জানি না। এমতাবস্থায় আমি কি করব? 

আলহামদু লিল্লাহ।.

শরিয়তের জরুরী মাসয়ালাগুলো জেনে নেয়া একজন মুসলিমের ওপর ওয়াজিব। সেগুলো দৃষ্টিভঙ্গিগত বিধান হোক; যেমন- আকিদা ও ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো কিংবা আমলগত বিধান হোক; যেমন- পবিত্রতা ও নামায ইত্যাদি। যদি কোন মুসলিম সম্পদশালী হয় তাহলে যাকাতের বিধিবিধান জেনে নেওয়াও তার ওপর ওয়াজিব। যদি কেউ ব্যবসায়ী হয় তাহলে ব্যবসায়ের বিধিবিধান জানাও তার ওপর ওয়াজিব। এভাবে অন্যান্য ক্ষেত্রেও। যখন রমযান মাস ঘনিয়ে আসে তখন একজন মুকাল্লাফ (শরয়ি দায়িত্বপ্রাপ্ত) ব্যক্তির ওপর রোযার বিধিবিধান জানা ওয়াজিব; এমনকি সে যদি রোযা রাখতে অক্ষম হয় তবুও। সেটা এজন্য যে, সে যেন রোযার বদলে যা করা ওয়াজিব সেটা জানতে পারে।

আপনি ও আপনার পরিবারের ওপর ওয়াজিব হল- এ সম্পর্কিত জ্ঞান ও জিজ্ঞাসা করার ক্ষেত্রে কসুর করায় তওবা করা ও ক্ষমাপ্রার্থনা করা।

অর্থ পরিশোধ করা রোযা রাখতে অক্ষম বয়োবৃদ্ধ ও দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্যেও জায়েয নয়। কেননা এ ধরণের ব্যক্তিরা রমযানের রোযা ভাঙ্গলে তাদের ওপর ওয়াজিব হল প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীনকে খাওয়ানো। যে দিনগুলোর রোযা ভাঙ্গা হয়েছে সেগুলোর বদলে খাওয়ানোর পরিবর্তে অর্থ পরিশোধ করা জায়েয নয়।

অতএব, আপনি যে অর্থ দান করেছেন আমরা আশা করছি কিয়ামতের দিন সদকা হিসেবে আপনি সেটার সওয়াব পাবেন।

আপনাদের ওপর ওয়াজিব হল: যে দিনগুলোতে রোযা ভেঙ্গেছেন সে দিনগুলোর কাযা রোযা পালন করা। আপনারা সতর্কতা অবলম্বন করে গণনা করবেন; যাতে করে নিশ্চিত সংখ্যাটা নির্ধারণ করতে পারেন। যদি সেটা না পারেন তাহলে আপনারা প্রবল ধারণার উপর আমল করবেন। উদাহরণতঃ যদি আপনাদের ধারণা হয় যে, সেটা ৩০ দিন তাহলে এ দিনগুলোর রোযা কাযা পালন করা আপনাদের ওপর ওয়াজিব। এভাবে কম হোক বা বেশি হোক এ পদ্ধতিতে করবেন। “আল্লাহ্‌ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে দায়িত্ব আরোপ করেন না।”[সূরা বাক্বারা, ২:২৯৬]

আপনাদের ওপর এ দিনগুলোর রোযা লাগাতরভাবে রাখা ওয়াজিব নয়। বরং সক্ষমতা ও সুযোগ অনুযায়ী আপনারা আলাদা আলাদাভাবে সেগুলো রাখতে পারবেন। কিন্তু, আপনাদের কর্তব্য অবিলম্বে রোযাগুলো পালন করা এবং এ রোযাগুলো পালনে পুনরায় বিলম্ব না করা।

আপনার উপর আবশ্যক গত বছরের রোযাগুলোর কাযা পালন আগে শুরু করা; যাতে করে সেগুলো পালন করার আগে পরবর্তী রমযান এসে না যায়।

কোন কোন আলেমের অভিমত হল: রোযার পালন করার সাথে বিলম্ব করার কারণে প্রতিদিনের বদলে একজন করে মিসকীন খাওয়ানোও আপনাদের ওপর ওয়াজিব। কিন্তু, অগ্রগণ্য অভিমত হচ্ছে— শুধু রোযা রাখাই আপনাদের ওপর ওয়াজিব। বিশেষতঃ আপনারা যদি গরীব হন। তবে যদি রোযা রাখার সাথে খাদ্যও খাওয়াতে পারেন তাহলে সেটা ভাল।

আরও জানতে দেখুন: 39742 নং, 26212 নং ও 40695 নং প্রশ্নোত্তর।

পূর্বোল্লিখিত বিধানগুলো প্রযোজ্য হবে যদি আপনারা হায়েযের মত শরয়ি ওজরের প্রেক্ষিতে রোযা ভেঙ্গে থাকেন। আর যদি আপনাদের এ রকম কোন ওজর না থাকে: তাহলে আপনাদের ওপর কোন কাযা পালন নেই। বরং আপনাদের ওপর ওয়াজিব হচ্ছে—তওবা করা, ক্ষমাপ্রার্থনা করা এবং ছুটে যাওয়া এ দিনগুলোর রোযার বদলে নফল রোযা রাখা ও নেক আমল করা।

আমরা এ মাসয়ালাটি ও এ সংক্রান্ত আলেমদের ফতোয়াগুলো 50067 নং প্রশ্নোত্তরে উল্লেখ করেছি; সেটা দেখে নিতে পারেন।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব