আলহামদু লিল্লাহ।.
আলেমগণ এই মর্মে একমত যে, ফরয যাকাত; এর মধ্যে যাকাতুল ফিতর বা ফিতরাও পড়বে; এমন ব্যক্তিকে দেয়া জায়েয নাই যার খরচ বহন করা ব্যক্তির উপর ওয়াজিব; যেমন পিতামাতা ও সন্তানেরা।
‘আল-মুদাওয়িনা’ গ্রন্থে (১/৩৪৪) এসেছে:
“আমার সম্পদের যাকাতের ব্যাপারে আপনার অভিমত কী? ইমাম মালেকের অভিমত অনুযায়ী সেটা কাকে দেওয়া বাঞ্ছনীয়?
তিনি বলেন: ইমাম মালেক বলেন: আপনার আত্মীয়দের মধ্যে যাদের খরচ বহন করা আপনার উপর আবশ্যক তাদেরকে দিবেন না।”[সমাপ্ত]
ইমাম শাফেয়ি “আল-উম্ম” গ্রন্থে (২/৮৭) বলেন:
“পিতা-মাতা ও দাদা-দাদীকে (অর্থাৎ সম্পদের যাকাত থেকে) কিছু দিবেন না”।[সমাপ্ত]
ইবনে কুদামা “আল-মুগনী” গ্রন্থে (২/৫০৯) বলেন:
“ফরয যাকাত থেকে পিতামাতাকে কিছু দিবেন না; তারা যত ঊর্ধ্ব স্তরে হোক না কেন (অর্থাৎ দাদা, পরদাদা... ও দাদী, পরদাদী...) এবং সন্তানকেও দিবে না; তারা যত নীচের স্তরে হোক না কেন (অর্থাৎ নাতিগণ)।”
ইবনুল মুনযির বলেন: “আলেমগণ এই মর্মে ইজমা করেছেন যে, পিতামাতাকে যাকাত দেওয়া জায়েয নয়; যে অবস্থায় যাকাত পরিশোধকারীর উপর তাদের খরচ চালানো আবশ্যক। কেননা তাদেরকে যাকাত দিলে যাকাতের অর্থ তাদেরকে তার খরচের অর্থ থেকে অমুখাপেক্ষী বানাবে এবং তার উপর থেকে খরচ দেওয়াকে মওকুফ করবে, যাকাত দেয়ার লাভ তার নিজের দিকেই ফিরে আসবে। এভাবে সে যেন নিজে নিজেকেই যাকাত দিল। তাই এটি জায়েয নয়; যেমনিভাবে যাকাতের অর্থ দিয়ে নিজের ঋণ পরিশোধ করা জায়েয নয়।”[সমাপ্ত]
শাইখ উছাইমীনকে গরীব আত্মীয়স্বজনকে ফিতরা দেয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে জবাবে তিনি বলেন:
“ফিতরা ও সম্পদের যাকাত গরীব আত্মীয়স্বজনকে দেওয়া জায়েয। বরং আত্মীয়স্বজনকে দেয়া অনাত্মীয় কাউকে দেয়ার চেয়ে অধিক যুক্তিযুক্ত। কেননা আত্মীয়স্বজনকে দেয়ার মধ্যে যাকাত পরিশোধ করা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা উভয়টি সম্পাদিত হয়। কিন্তু শর্ত হল— আত্মীয়কে যাকাত দিয়ে নিজের সম্পদ বাঁচানো যেন না হয়। সেটা এভাবে যে, এই গরীব ব্যক্তির খরচ বহন করা যদি তার উপর তথা সম্পদশালী ব্যক্তির উপর ফরয হয় সেক্ষেত্রে এই ব্যক্তির প্রয়োজনীয় খরচাদি যাকাতের সম্পদ থেকে দেয়া জায়েয নয়। কেননা এটা করলে এর মাধ্যমে তিনি নিজের কিছু সম্পদ সঞ্চয় করতে সক্ষম হন; যতটুকু তিনি গরীব আত্মীয়কে যাকাত থেকে দেন। এটি জায়েয নয়, বৈধ নয়। আর যদি তার উপর তাদের খরচ বহন করা আবশ্যকীয় না হয় সেক্ষেত্রে তিনি তাদেরকে যাকাতের সম্পদ দিতে পারবেন। বরং অনাত্মীয় কাউকে যাকাত দেয়ার চেয়ে আত্মীয়কে যাকাত দেয়া উত্তম। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নিকটাত্মীয়কে যাকাত দেয়া— যাকাত পরিশোধ ও আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা।”[সমাপ্ত]
প্রশ্নকারী বোন, উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আপনার জন্য আপনার মাকে যাকাতুল ফিতর (ফিতরা) পরিশোধ করা জায়েয হবে না। বরং আপনার উপর আবশ্যক হল আপনার ফিতরা ব্যতীত অন্য উৎস থেকে তাঁর খরচ চালানো। আমরা আল্লাহ্র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন, আপনার জীবিকায় প্রশস্ততা দান করেন এবং আপনাকে উত্তম রিযিক দান করেন।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।