সোমবার 22 জুমাদাল ছানী 1446 - 23 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

শনিবারে রোযা রাখার বিধান

প্রশ্ন

রমজান মাস ছাড়া অন্য সময়ে শনিবারে রোযা রাখার বিধান কী? আর যদি সেই দিনটা আরাফার দিনে পড়ে তাহলে করণীয় কী

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

শুধুমাত্র শনিবারে রোযা রাখা মাকরূহ। কারণ তিরমিযী (৭৪৪), আবু দাউদ (২৪২১) ও ইবনে মাজাহ (১৭২৬) সংকলন করেছেন আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর থেকে; তিনি তার বোন থেকে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে, তিনি বলেন: “তোমরা ফরয রোযা ছাড়া শনিবারে রোযা রেখো না। তোমাদের কেউ যদি ঐ দিন আঙুরের ছাল বা গাছের ডাল ছাড়া অন্য খাবার নাও পায় তাহলে সে যেন তাই চিবিয়ে খায়।”[শাইখ আলবানী হাদীসটিকে ‘ইরওয়া’তে (৯৬০) সহীহ বলেছেন] আবু ঈসা তিরমিযী বলেন: হাদীসটি হাসান। এখানে মাকরুহ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো— বিশেষভাবে শনিবারে রোযা রাখা। কারণ ইহুদীরা শনিবারকে সবিশেষ সম্মান করে।”[সমাপ্ত]

‘আঙুরের ছাল’ দ্বারা উদ্দেশ্য আঙুরের উপরিভাগে যে আবরণ থাকে। 

‘সে যেন তাই চিবিয়ে খায়’ কথাটার মাধ্যমে রোযা ভাঙার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে।

ইবনে কুদামা রাহিমাহুল্লাহ ‘আল-মুগনী’ (৩/৫২)-তে বলেছেন: “আমাদের মাযহাবের আলেমগণ বলেন: কেবল শনিবার রোযা রাখা মাকরূহ। ... আলাদাভাবে শুধু সেই দিনে রোযা রাখা মাকরূহ। এর সাথে অন্য দিন মিলিয়ে রোযা রাখলে মাকরূহ হবে না। এর দলীল আবু হুরাইরা ও জুয়াইরিয়ার হাদীস। তবে কোনো মানুষের রোযার অভ্যাসের সাথে যদি শনিবার মিলে যায় তাহলে মাকরূহ হবে না।”[সমাপ্ত]

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস বলতে উদ্দেশ্য বুখারী (১৯৮৫) ও মুসলিমে (১১৪৪) বর্ণিত হাদীস। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: “তোমাদের কেউ যেন জুমার দিন রোযা না রাখে। কিন্তু যদি জুমার দিনের আগে বা পরে একদিন রোযা রাখে তাহলে জুমার দিন রোযা রাখতে পারে।”

জুয়াইরিয়ার হাদীস হলো: বুখারী (১৯৮৬) বর্ণনা করেন, জুয়াইরিয়া বিনতুল হারেস রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমার দিনে যখন তাঁর নিকট প্রবেশ করেছেন তখন তিনি রোযাদার ছিলেন। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: “তুমি কি গতকাল রোযা রেখেছিলে?” জুয়াইরিয়া বললেন:“না।” নবীজী জিজ্ঞাসা করলেন: “তুমি কি আগামীকাল রোযা রাখতে চাও?” তিনি বললেন: “না।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “তাহলে রোযা ভেঙ্গে ফেলো।”

এই হাদীস এবং এর আগের হাদীস সুস্পষ্ট প্রমাণ করে যে রমজান ছাড়াও অন্যান্য সময়ে কেউ যদি জুমার দিন রোযা রাখে তাহলে তার জন্য শনিবার রোযা রাখা জায়েয। 

বুখারী ও মুসলিমে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আল্লাহর কাছে সর্বাধিক পছন্দনীয় রোযা হল— দাউদের রোযা। তিনি একদিন রোযা রাখতেন এবং অন্যদিন রোযা ছাড়তেন।”

এভাবে রোযা রাখলে তার কোন কোন রোযা অবশ্যই শনিবারে পড়বে। এর থেকে বুঝা যায় যে আরাফা বা আশুরার দিনের অভ্যাসগত রোযা যদি শনিবারে পড়ে তাহলে সে দিন এককভাবে রোযা রাখতে কোনো আপত্তি নেই। 

হাফেয ইবনে হাজার ‘ফাতহুল বারী’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন: কারো যদি আরাফার মত নির্দিষ্ট কোন দিনে রোযা রাখার অভ্যাস থাকে এবং আরাফার দিন যদি শুক্রবারে পড়ে তাহলে জুমার দিনের রোযা রাখার নিষেধাজ্ঞা থেকে সেটা ব্যতিক্রম হবে। অনুরূপ কথা শনিবারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ইতঃপূর্বে এ বিষয়ে ইবনে কুদামার বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে। 

শাইখ ইবনে উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “শনিবারে রোযা রাখার কয়েকটি অবস্থা: 

প্রথম অবস্থা: ফরয রোযার ক্ষেত্রে। যেমন: রমযানের ফরয রোযা কিংবা কাযা রোযা পালন। যেমন: কাফ্‌ফারার রোযা পালন। যেমন: তামাত্তু হজ্জের হাদীর পরিবর্তে রোযা রাখা ইত্যাদি। এমন রোযা রাখতে সমস্যা নেই, যতক্ষণ না রোযাদার ব্যক্তি এই দিনের বিশেষ মর্যাদায় বিশ্বাস করে।

দ্বিতীয় অবস্থা: এর আগে জুমার দিন রোযা রাখা— এতেও সমস্যা নেই। কারণ উম্মাহাতুল মুমিনীনের একজন জুমার দিন রোযা রাখলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছিলেন: “তুমি কি গতকাল রোযা রেখেছিলে?” তিনি উত্তর দিয়েছিলেন: “না।” তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “তুমি কি আগামীকাল রোযা রাখবে?” তিনি উত্তর দিয়েছিলেন: “না।” তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন: “তাহলে তুমি রোযা ভেঙে ফেলো।” তিনি যেহেতু ‘আগামীকাল কি রোযা রাখবে?’ জিজ্ঞাসা করেছিলেন সেহেতু প্রমাণিত হল যে জুমার দিনের সাথে মিলিয়ে (শনিবার) রোযা রাখা জায়েয।

তৃতীয় অবস্থা: শনিবার কাকতালীয়ভাবে এমন দিনে পড়ে যাওয়া যেদিন রোযা রাখা মুস্তাহাব। যেমন: আইয়ামে বীয, আরাফার দিন, আশুরার দিন, যে ব্যক্তি রমজানের রোযা পূর্ণ করেছে তার জন্য শাওয়ালের ছয়দিন, যিলহজ্জ মাসের নয় দিন। এমনটা হলেও সমস্যা নেই। কারণ সে শনিবারের কারণে রোযা রাখেনি। বরং ঐ দিনে রোযা রাখা মুস্তাহাব হওয়ার কারণে সে রোযা রেখেছে।

চতুর্থ অবস্থা: ব্যক্তির অভ্যাসের সাথে মিলে যাওয়া। যেমন: কোনো ব্যক্তির যদি অভ্যাস হয় একদিন রোযা রাখা, অন্যদিন রোযা না-রাখা। এভাবে তার রোযা রাখার দিন যদি শনিবারে পড়ে যায় তাহলে এতে সমস্যা নেই। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের একদিন বা দুইদিন আগে রোযা রাখতে নিষেধ করলেও ব্যতিক্রম হিসেবে বলেন: “তবে যে ব্যক্তি পূর্ব থেকে এ সময়ে রোযা রাখায় অভ্যস্ত সে যেন রোযা রাখে।” এটাও ওটার অনুরূপ।

পঞ্চম অবস্থা: কেবল এই দিনে বিশেষভাবে নফল রোযা রাখা। এটাই নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্র; যদি এ নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত হাদিসটি সহিহ হয়।”[মাজমু ফাতাওয়া ওয়া-রাসাইলিশ শাইখ ইবনে উছাইমীন: (২০/৫৭)]

একদল আলেম শনিবারে রোযা রাখার নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত হাদিস ‘দুর্বল’ হওয়ার অভিমত পোষণ করেন এবং তারা হাদিসটিকে ‘মুনকার’ ও ‘শাজ’ বলেন। এদের মধ্যে রয়েছেন: ইমাম মালিক, আহমাদ, যুহরী, আওযাঈ, শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া, ইবনুল কাইয়্যিম, ইবনে হাজার ও অন্যান্য।

এ হাদিসটি দুর্বল হওয়ার এ অভিমতটি পছন্দ করেছেন ইবনে বায ও ইবনে উছাইমীন এবং ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্যগণ।

যদি হাদিসটি সাব্যস্ত না হয় তাহলে শনিবারে রোযা রাখা সম্পর্কে কোন নিষেধাজ্ঞা নাই।

দেখুন: আত-তালখিস আল-হাবীর (২/২১৬), তাহযীবুস সুনান (৭/৬৭), ইবনে মুফলিহের রচিত আল-ফুরু (৩/৯২), মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে বায (১৫/৪১১), ফাতাওয়াল লাজনাদ দায়িমা (১০/৩৯৬) ও মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে উছাইমীন (১০/৩৫)।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব