আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
তুমি এ কাজটি করার আগে আমাদের সহযোগিতা চাওয়ায় আমরা খুব খুশি হয়েছি। আমরা আমাদের মেয়ে ও বোনের ব্যাপার হলে যা পছন্দ করতাম তোমার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই-ই পছন্দ করব। তুমি সবচেয়ে মূল্যবান যা কিছুর মালিক সেটাকে সংরক্ষণ কর। ভালবাসার নামে বা মানসিক প্রশান্তির নামে শয়তান তোমাকে ধোকা দেওয়া থেকে সতর্ক হও।
প্রিয় বোন, আমরা খুবই খুশি হব— যদি তুমি নিয়মিত নামায আদায় কর, হিজাব পরিধান কর, সচ্চরিত্র ও লজ্জাশীলতায় ভূষিত হও, ইসলাম-ধর্ম মেনে চল; যে ধর্ম এসেছে মানুষের মর্যাদা সমুন্নত করতে ও মানবাত্মাকে পুত-পবিত্র করতে।
তুমি যদি এমন না হও সেটা আমাদের কাছে খুবই খারাপ লাগবে। আমাদের কাছে খারাপ লাগবে— যদি শয়তান তোমাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়; যদি তুমি হও জবাই-এর পশুর মত, যাকে মৃত্যুর দিকে টেনে নেওয়া হচ্ছে; অথচ সে বুঝতে পারছে না!!
এটা কোন ঠাট্টা-মশকরা নয়; সিরিয়াস কথা। তুমি ছাড়াও আরও অনেক মেয়ে এ পথে চলেছে; শেষ পরিণতি ছিল— বেদনাদায়ক এবং তারা অনুতপ্ত হয়েছে। কিন্তু, সময় পার হয়ে যাওয়ার পর। যখন অনুতপ্ত হয়ে কোন লাভ নেই। তুমি এ ওয়েবসাইটে এ ধরণের অনেক ঘটনা পাবে। সে সব ঘটনা তোমার জন্য শিক্ষণীয়। সাবধান! তুমি যেন অন্যদের শিক্ষার পাত্র না হন।
দুই:
কোন নারীর জন্য বেগানা কোন পুরুষের সাথে সম্পর্ক করা জায়েয নয়। এমনকি তাদের দু’জনের বিয়ের নিয়ত থাকলে তবুও। কেননা আল্লাহ্ তাআলা বেগানা নারীর সাথে নিভৃতে অবস্থান করা, মুসাফাহা করা ও দৃষ্টিপাত করা হারাম করেছেন; কেবলমাত্র বিয়ের পাত্রী দেখা ও সাক্ষ্যদানের মত প্রয়োজন ছাড়া। সাজগোজ করে বেপর্দা হয়ে বের হওয়া নারীর উপর হারাম করেছেন। গাইরে মাহরাম পুরুষদের সামনে সতর খোলা, তাদের মাঝে সুগন্ধি মেখে বের হওয়া ও তাদের সাথে কোমল সুরে কথা বলা হারাম করেছেন। এসব কর্ম হারাম হওয়া কুরআন-সুন্নাহ্র দলিলের ভিত্তিতে সুবিদিত। এ বিধানগুলোর আওতা থেকে কাউকে বাদ দেওয়া হয়নি। এমনকি কেউ বিয়ের সংকল্প করলে তাকেও নয়; বিয়ের প্রস্তাবকারী পাত্রকেও নয়। কেননা বিয়ের আকদ (চুক্তি) হওয়ার আগ পর্যন্ত বিয়ের প্রস্তাবকারী ছেলেও বেগানা পুরুষ।
১। কোন বেগানা নারীর সাথে কোন পুরুষের নিভৃতে অবস্থান করা হারাম হওয়ার ব্যাপারে; এমনকি সে ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাবকারী হলেও; হাদিসে এসেছে যা ইমাম বুখারী (৩০০৬) ও ইমাম মুসলিম (১৩৪১) ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন যে, তিনি বলেন: “অবশ্যই কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে নিভৃতে একত্রিত হবে না”।
তিনি আরও বলেন: “সাবধান! কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে নিভৃতে একত্রিত হবে না; যদি হয় সেখানে শয়তানই থাকে তৃতীয় ব্যক্তি।”[সুনানে তিরমিযি (২১৬৫); শাইখ আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
২। কোন পুরুষ কোন নারীর দিকে তাকানো হারাম হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ্ তাআলার বাণীতে উদ্ধৃত হয়েছে যে: “মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে, লজ্জাস্থানকে হেফাযতে রাখে। এটাই তাদের পবিত্র থাকার জন্য অধিকতর সহায়ক। তারা যা কিছু করে আল্লাহ্ সে সম্পর্কে অবহিত।”[সূরা নূর, আয়াত: ৩০]
জারির বিন আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হঠাৎ নজর পড়ে যাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন।[সহিহ মুসলিম (২১৫৯)]
হঠাৎ দৃষ্টি হচ্ছে— কোন নারীর ওপর অনিচ্ছাকৃতভাবে চোখ পড়ে যাওয়া। যেমন কেউ রাস্তার দিকে তাকাতে গিয়ে চোখে পড়ল।
পক্ষান্তরে, নারীর জন্য যৌন কামনা ব্যতীত পুরুষের দিকে তাকানো জায়েয আছে; যদি এতে ফিতনা সৃষ্টির আশংকা না থাকে। যৌন কামনা নিয়ে কিংবা ফিতনাগ্রস্ত হওয়ার ভয় থাকলে জায়েয নেই।
৩। বেগানা নারীর সাথে মুসাফাহা করা হারাম হওয়া সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, “তোমাদের কারো মাথায় লোহার শলাকা দিয়ে আঘাত করা হালাল নয় এমন নারীকে স্পর্শ করার চেয়ে উত্তম।”[তাবারানী কর্তৃক বর্ণিত মা’কিল বিন ইয়াসার (রাঃ) এর হাদিস; আলবানী “সহিহুল জা’মে গ্রন্থে (৫০৪৫) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন] এক্ষেত্রে নর-নারী উভয়ের গুনাহ সমান।
৪। নারীদের বেপর্দা হওয়া ও বেগানা পুরুষদের সামনে নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করা হারাম হওয়ার ব্যাপারে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “দুই শ্রেণীর লোক জাহান্নামী; যাদেরকে আমি আমার যুগে দেখে যাইনি। এক শ্রেণীর লোক, তারা এমন এক সম্প্রদায়, তাদের সাথে থাকবে গরুর লেজের মত এক ধরনের চাবুক যা দিয়ে তারা মানুষকে প্রহার করবে। অপর শ্রেণী হল: কাপড় পরিহিতা সত্ত্বেও নগ্ন নারী; তারা পুরুষদেরকে আকৃষ্টকারী ও নিজেরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট। তাদের মাথা হবে বুখত শ্রেণীর উটের কুঁজের মত বাঁকা। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমনকি জান্নাতের সুঘ্রাণও তারা পাবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ এত এত দূর থেকেও পাওয়া যাবে।”[মুসলিম (২১২৮)]
বুখত হচ্ছে— লম্বা গলা বিশিষ্ট এক ধরণের উট।
৫। নারীরা এমনভাবে সুগন্ধি মেখে বাহিরে বের হওয়া যাতে করে সে সুগন্ধি বেগানা পুরুষদের নাকে লাগে— এটা হারাম হওয়া সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, “যে নারী সুগন্ধি লাগিয়ে কোন সম্প্রদায়ের পাশ দিয়ে গমন করে যাতে করে তারা তার সুঘ্রাণ পায় সে নারী ব্যভিচারিনী।”[সুনানে নাসাঈ (৫১২৬), সুনানে আবু দাউদ (৪১৭৩), সুনানে তিরমিযি (২৭৮৬); আলবানী ‘সহিহুন নাসাঈ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে হাসান বলেছেন]
৬। কোমলভাবে কথা বলা হারাম হওয়া প্রসঙ্গে উদ্ধৃত হয়েছে আল্লাহ্র বাণী: “হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা তো অন্য কোন নারীর মত নও; যদি তোমরা তাকওয়ার উপর অবিচল থাক। অতএব (অন্য লোকের সাথে) কোমলভাবে কথা বলবে না; তাতে অন্তরে ব্যাধিগ্রস্ত কোন (পুরুষ) লোক প্রলুব্ধ হতে পারে। তোমরা স্বাভাবিকভাবে কথা বলবে।”[সূরা আহযাব, আয়াত: ৩২] যদি উম্মুল মুমিনীনদের ব্যাপারে এ বিধান হয় তাহলে অন্যদের জন্য এ বিধান প্রযোজ্য হওয়া আরও অধিক যুক্তিযুক্ত।
তিন:
পুরুষ ও বেগানা নারীর মাঝের যে সম্পর্কটাকে ভালবাসা বলা হয় সেটা উল্লেখিত এ হারাম কাজগুলো এবং এগুলোর চেয়েও জঘন্য হারাম থেকে মুক্ত নয়; যদি এর সবগুলো একত্রিত নাও হয়।
তোমার উপর ওয়াজিব হল— আল্লাহ্র কাছে তওবা করা এবং তাঁর অসন্তুষ্টি ও প্রতিশোধ গ্রহণ থেকে সতর্ক হওয়া। অবিলম্বে এ যুবকের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা। তার সাথে সাক্ষাতের চিন্তাই বাদ দাও। তার সাথে বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান কর। বরঞ্চ তুমি চূড়ান্তভাবে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন কর। তার সাথে তোমার অন্তরের সম্পৃক্ত হওয়াটাই অঘটনের সূচনা। এটি শয়তানের ক্রমাগত প্ররোচনা। তুমি তাকে দেখেছ, তার সাথে কথা বলেছ। এভাবে তোমার অন্তরে তার প্রতি ভালবাসা জন্মেছে। কিন্তু, তার সাথে কথা বলা অব্যাহত রাখা বা বেড়াতে যাওয়ার মাধ্যমে এটাকে আর বাড়তে দিও না।
জেনে রাখ, অধিকাংশ অঘটন ক্ষুদ্র পরিসরে শুরু হয়। এক পর্যায়ে এমন আকার ধারণ করে যা কল্পনায়ও ছিল না। কত মেয়ে নিজের ব্যাপারে মাত্রাতিরিক্ত আস্থাবান ছিল এবং আস্থাবান ছিল যে, ছেলেটি তার কিছু করবে না। ফলাফলে সে মেয়ে তার সবকিছু হারিয়ে ফেলে! এরপর হায়েনা ছেলেটি মেয়েটিকে বিয়ে করার যে প্রতিশ্রুতি ও আশা দিয়েছিল সেটা থেকেও নিজেকে গুটিয়ে নেয়। কারণ মেয়েটি এখন আর তার উপযুক্ত নয়। মেয়েটি যেহেতু একজন বেগানা যুবকের সাথে সম্পৃক্ত হওয়াতে সাড়া দিয়েছে সুতরাং এমন মেয়ের প্রতি আস্থা রাখা সুদূর পরাহত।
আমরা তোমরা কল্যাণ-কামনা ও ভাল চেয়ে এ কথাগুলো বলেছি। আমরা আল্লাহ্র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন তোমাকে যাবতীয় অনিষ্ট থেকে হেফাযত করেন।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।