বৃহস্পতিবার 27 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 28 নভেম্বর 2024
বাংলা

দ্রুত রাগী প্রতিক্রিয়াশীল ছেলের সংশোধন

প্রশ্ন

আমার এক ছেলে আছে খুব প্রতিক্রিয়াশীল, কঠিন মেজাজী। আমি তার এই স্বভাবটি কিভাবে সংশোধন করতে পারি?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

রাগ দূর করার উপায় প্রসঙ্গে ইতিপূর্বে 658 নং প্রশ্নোত্তরে আলোচনা করা হয়েছে। সেই উপায়গুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।
  • চুপ থাকা।
  • শান্ত থাকা। দাঁড়ানো থাকলে বসে যাওয়া, বসে থাকলে শুয়ে যাওয়া।
  • রাগ সংবরণ করার সওয়াবের কথা স্মরণ করা। যেহেতু হাদিসে এসেছে: তুমি রাগ করো না; তোমার জন্য জান্নাত রয়েছে
  • যে ব্যক্তি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তার উচ্চ মর্যাদা ও উন্নত অবস্থান অবগত হওয়া; যেমনটি সহিহ হাদিসে এসেছে: যে ব্যক্তি নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে আল্লাহ্‌ তার গোপন বিষয়কে গোপন রাখেন। যে ব্যক্তি নিজের রাগকে সংবরণ করে; যদিও সে বাস্তবায়ন করতে চাইলে করতে পারে; আল্লাহ্‌ কিয়ামতের দিন তার অন্তরকে আশা দিয়ে ভরে দিবেন[আলবানী সিলসিলা সাহিহাতে (৯০৬) হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন]
  • রাগের সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের করণীয় আদর্শ জানা।
  • রাগ সংবরণ করা যে মুত্তাকীদের আলামত—   তা জানা। যেমনটি পূর্বোক্ত হাদিসে এসেছে।
  • স্মরণ করিয়ে দিলে স্মরণ করা, সংযত হওয়া এবং উপদেশদাতার উপদেশ তামিল করা।
  • রাগের কুফলগুলো অবগত হওয়া।
  • রাগকারী রাগের সময় নিজের কথা ভেবে দেখা।
  • রাগ দূর করে দেয়ার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করা।

 

নীচে সুন্দর একটি ঘটনা উল্লেখ করা হলো যা এই ছেলেটির রাগ দূরীকরণে সাহায্য করবে:

“রাগী এক ছেলে ছিল। ছেলেটি কোন সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারত না। তার বাবা তার জন্য পলিথিন ভরে তারকাটা নিয়ে এসে তাকে বলল:

শোন বাবা, যখনই তোমার রাগ উঠবে তখনই তুমি আমাদের বাগানের কাঠের বেড়াতে একটি করে তারকাটা মারবে।

এভাবে ছেলেটি তার পিতার উপদেশ বাস্তবায়ন শুরু করল...

প্রথম দিন সে ৩৭ টি তারকাটা মেরেছে। কিন্তু বেড়াতে তারকাটা মারা সহজ কাজ ছিল না।

কিন্তু সে রাগের সময় নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করা শুরু করল। কিছুদিন যাওয়ার পর সে অপেক্ষাকৃত কম তারকাটা মারত। এভাবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সে নিজেকে কন্ট্রোল করতে সক্ষম হল এবং রাগ করা থেকে ও তারকাটা মারা থেকে নিবৃত হতে পারল। তখন সে এসে তার পিতাকে তার সফলতার সংবাদ দিল। পিতা তার এই পরিবর্তনে খুশি হলেন এবং তাকে বললেন: প্রিয় বৎস! এবার তোমার দায়িত্ব হলো প্রত্যেক যেই দিন তুমি রাগ করবে না সেই দিন একটি করে তারকাটা তুলে ফেলা।

এবার ছেলেটি নতুনভাবে তারকাটা তোলা শুরু করল; প্রত্যেক যেই দিন সে রাগ করে না সেই দিন। এভাবে সে বেড়ার সবগুলো তারকাটা তুলে ফেলল।

এরপর সে তার পিতার কাছে এসে তার সফলতার খবর জানাল। তখন পিতা তাকে নিয়ে সেই বেড়ার কাছে আসলেন এবং বললেন: তুমি এক্সিলেন্ট কাজ করেছ। কিন্তু দেখ, বেড়াতে সেই ছিদ্রগুলো রয়ে গেছে। এই বেড়াটি প্রথম অবস্থার মতো কখনও হবে না। তিনি আরও বললেন:

তুমি রাগের মাথায় কতকিছু বল; সেই কথাগুলো অন্যদের মনে এভাবে এ ছিদ্রগুলোর মত দাগ কাটে।

তুমি মানুষকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে, আবার ছুরি বের করে নিতে পারবে। এটি গুরুত্বপূর্ণ নয় যে, তুমি কয়বার “আমি দুঃখিত” বলবে। কারণ ক্ষতটি সেখানে থেকেই যাবে।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব