বৃহস্পতিবার 27 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 28 নভেম্বর 2024
বাংলা

কোন ইজতিহাদি মাসয়ালায় কেউ যদি কোন আলেমের তাকলিদ করে থাকেন সেক্ষেত্রে তার আমল সহিহ; তাকে সে আমল পুনরায় আদায় করার নির্দেশ দেয়া হবে না; এমনকি পরবর্তীতে যদি তার কাছে প্রতিপন্ন হয় যে, অন্য মতটি অগ্রগণ্য; তবুও

প্রশ্ন

আমি একজন নারী। আমি আপনাদের ওয়েব সাইটের এক ফতোয়া থেকে জানতে পারলাম যে, শপথ ভঙ্গের কাফফারা নগদ অর্থ দিয়ে আদায় করলে সহিহ হবে না। এ ফতোয়া পড়ার আগে আমি কাফফারা আদায় করেছি। ইতিপূর্বে আমি যে কাফফারাগুলো আদায় করেছি সেগুলো কি নতুনভাবে আদায় করতে হবে? উল্লেখ্য, আমি কয়বার কাফফারা আদায় করেছিলাম সে সংখ্যা জানা নেই।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

নগদ অর্থে কাফফারা আদায় করা এমন একটি ইজতিহাদি মাসয়ালা যে মাসয়ালায় আলেমগণ মতভেদ করেছেন। ইতিপূর্বে 124274 নং প্রশ্নোত্তরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ মাসয়ালায় অগ্রগণ্য মত হলো, নগদ অর্থে কাফফারা আদায় করা জায়েয হবে না। এটা জমহুর আলেমের অভিমত।

এ মাসয়ালায় ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) মতভেদ করেছেন; তিনি নগদ অর্থে কাফফারা আদায় করাকে জায়েয মত দিয়েছেন।

দুই:

যে সকল ইজতিহাদি মাসয়ালায় আলেমগণ মতভেদ করেছেন সেগুলো হচ্ছে এমন মাসয়ালা যেগুলোর ক্ষেত্রে কুরআনের কিংবা হাদিসের অকাট্য কিংবা অকাট্যের কাছাকাছি কোন দলিল নেই। সব হচ্ছে, আলেমগণের উদ্ভাবিত: অতএব, এমন বিষয়ে কেউ যদি কোন একজন আলেমের তাকলিদ করেন এতে কোন অসুবিধা নেই। পরবর্তীতে যদি তার কাছে প্রতীয়মান হয় যে, অপর মতটি অগ্রগণ্য তখন তার কাছে যেটা অগ্রগণ্য প্রতীয়মান হয়েছে সে মত অনুযায়ী আমল করবে। আর প্রথম অভিমতের ভিত্তিতে যে আমল করা হয়েছে সেটাও সহিহ এবং আদায় হিসেবে গণ্য, পুনরায় সেটা আদায় করতে হবে না। এটি একটি সাধারণ মূলনীতি। এ ধরণের অনেক মাসয়ালা রয়েছে।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন:

এ ধরণের ইজতিহাদপূর্ণ মাসয়ালার ক্ষেত্রে কাউকে জোর করে বাধা দেয়া যাবে না। কারো এমন কোন অধিকার নেই যে, তিনি মানুষকে তার অনুসরণ করতে বাধ্য করবেন। বরং তিনি দলিল-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেন। এর ভিত্তিতে যার কাছে দুইটি অভিমতের মধ্যে একটির বিশুদ্ধতা প্রতীয়মান হবে সে ঐ মতের অনুসরণ করবে। আর যে ব্যক্তি অপর কোন অভিমতের অনুসরণ করবে তাকে বাধা দেয়া যাবে না।[মাজমুউল ফাতাওয়া (৩০/৮০)]

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া একটি মাসয়ালা উল্লেখ করেছেন যে মাসয়ালায় ইমামগণ মতভেদ করেছেন: এর মাধ্যমে কি বিবাহ হারাম হবে; নাকি হবে না?

এ বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন: এ বিষয়ের প্রত্যেকটি অভিমতের পক্ষে অনেক আলেম রয়েছেন: যেমন ইমাম শাফেয়ি, এক বর্ণনা মতে ইমাম মালেক এটি বৈধ হওয়ার পক্ষে। আর ইমাম আবু হানিফা, ইমাম আহমাদ, অপর এক বর্ণনা মতে ইমাম মালেক এটি হারাম হওয়ার পক্ষে।

এ ধরণের মাসয়ালার ক্ষেত্রে ব্যক্তি যদি কোন এক অভিমতের তাকলিদ করে তাহলে সেটা জায়েয হবে।[মাজমুউল ফাতাওয়া (৩২/১৪০)]

‘স্ত্রীর উপর যাতে তালাক না বর্তায়’ সেজন্য জনৈক আলেম একটি কৌশল গ্রহণের পক্ষে ফতোয়া দিয়েছেন সেটি ‘ইবনে জুরাইজের মাসয়ালা’ নামে প্রসিদ্ধ; এ সম্পর্কে শাইখুল ইসলামকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: ইসলামে এ ধরণের ফতোয়া অভিনব। সাহাবায়ে কেরাম বা তাবেয়ীদের কেউ কিংবা চার ইমামের কেউ এ ধরণের ফতোয়া দেননি। এই ফতোয়া দিয়েছেন পরবর্তীকালের কিছু আলেম। জমহুর আলেম এর প্রতিবাদ করেছেন। তবে, এ মাসয়ালার ক্ষেত্রে কেউ যদি কারো তাকলিদ করে থাকে এবং পরবর্তীতে তওবা করে নেয় তাহলে আল্লাহ্‌ তার পূর্বেকৃত গুনাহ মাফ করে দিবেন। সে তার স্ত্রীকে বিছিন্ন করে দিতে হবে না; যদি সে তা’বিলকারী তথা পরোক্ষ অর্থগ্রহণকারী হয়ে থাকে।[সমাপ্ত, মাজমুউল ফাতাওয়া (৩৩/২৪৪)]

শাইখুল ইসলামকে এমন একটি লেনদেন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয় যে লেনদেনকে মানুষ সুদ খাওয়ার জন্য একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে তখন তিনি এ লেনদেন হারাম হওয়ার ব্যাপারে দলিল প্রমাণ উপস্থাপন করার পর বলেন: কেউ যদি এমন কোন লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে যে লেনদেনগুলোর ব্যাপারে উম্মতের আলেমগণ মতভেদ করেছেন যেমন জিজ্ঞাসিত মাসয়ালাটি ও এ জাতীয় অন্যান্য মাসয়ালা যদি তিনি এ ক্ষেত্রে তা’বিলকারী (পরোক্ষ অর্থ গ্রহণকারী) হন এবং ইজতিহাদের কারণে কিংবা কোন আলেমের তাকলিদ করার কারণে অথবা কোন আলেমের অনুকরণে কেউ যদি এটাকে জায়েয বিশ্বাস করেন নতুবা তাকে কোন কোন আলেম জায়েয হওয়া মর্মে ফতোয়া দিয়েছেন ইত্যাদি তাহলে অর্জিত এ সম্পদগুলো বর্জন করা তাদের উপর আবশ্যক নয়। এমনকি পরবর্তীতে যদি তাদের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, তাদের গৃহীত রায় ভুল ছিল, যিনি ফতোয়া দিয়েছেন তিনি ভুল করেছেন তদুপরিও। কারণ তারা একটি ব্যাখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে সে সম্পদগুলো গ্রহণ করেছিল। কিন্তু, তাদের কর্তব্য হচ্ছে তারা যদি সঠিক ইলম শুনতে পায় তাহলে এ সকল সুদী কারবার থেকে তওবা করা...”[মাজমুউল ফাতাওয়া (২৯/৪৪৩-৪৪৫)]

যে ব্যক্তি এসব কারবার হারাম মর্মে জানেন তার উচিত সেটা মান্য করা। যারা এসব কারবার জায়েয হওয়া মর্মে ফতোয়া দেন তাদের তাকলিদ না করা। তবে তা’বিল (পরোক্ষ অর্থ) এর উপর ভিত্তি করে এসব কারবারের মাধ্যমে যেসব সম্পদ অর্জিত হয়েছে সেসব সম্পদ সদকা করে দেয়া আবশ্যক হবে না। বরং সেগুলোর উপর তার মালিকানা সহিহ।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) কে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় যিনি নগদ অর্থে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করেন জবাবে তিনি বলেন: সদকাতুল ফিতর নগদ অর্থে আদায় করা ভুল; এভাবে আদায় করলে তা পরিশোধ হবে না। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করে যে আমলের ব্যাপারে আমাদের অনুমোদন নেই সেটা প্রত্যাখ্যাত”। সহিহ বুখারী ও অন্যান্য গ্রন্থে ইবনে উমর (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সদাকাতুল ফিতর বা ফিতরা ফরজ করেছেন: এক সা’ পরিমাণ খেজুর কিংবা যব।”[ফরয করার মানে হচ্ছে- যা পালন করা অকাট্যভাবে আবশ্যকীয়।

কিন্তু, কিছু কিছু আলেম নগদ অর্থে ফিতরা আদায় করা জায়েয হওয়ার পক্ষে অভিমত দিয়েছেন। তাই যে ব্যক্তি এ ধরণের মতাবলম্বী কোন আলেমের তাকলিদ করে সদকাতুল ফিতর আদায় করেন তাহলে সেটা আদায় হয়ে যাবে; যদি তিনি এ মাসয়ালায় হক কোনটা সেটা না জানেন।

আর যে ব্যক্তি জেনেছেন যে, অবশ্যই খাদ্য দিয়ে ফিতরা আদায় করতে হবে; কিন্তু তিনি আদায় করা সহজ বিধায় নগদ অর্থ দিয়ে ফিতরা পরিশোধ করেছেন সেক্ষেত্রে তার ফিতরা আদায় হবে না।[নূরুন আলাদ দারব ফতোয়াসমগ্র (২/১০) থেকে সংকলিত]

এই আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, আপনি নগদ অর্থে যে শপথের কাফফারা আদায় করেছেন সেটা আদায় হয়ে গেছে। সেসব কাফফারা আপনাকে পুনরায় আদায় করতে হবে না। তবে, পরবর্তীতে আপনি যদি কোন কাফফারা আদায় করেন সেক্ষেত্রে খাদ্য দিয়ে কাফফারা আদায় করা আবশ্যক হবে।

আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব