আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
আমি জানি জুমার দিনের অনেক ফযিলত রয়েছে। আপনি কি আমাকে কিছু সুন্নত ও আদব জানাতে পারেন যাতে করে এই দিনে আমি সেই আমলগুলো করতে পারি?
আলহামদু লিল্লাহ।.
হ্যাঁ; জুমাবার একটি মর্যাদাপূর্ণ দিন। এই দিনের মর্যাদার প্রমাণ বহন করে এমন অনেক হাদিস উদ্ধৃত হয়েছে।
জুমাবারের সুন্নত ও আদব অনেক; যেমন:
আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “হে ঈমানদারগণ! জুমার দিনে যখন সালাতের জন্য ডাকা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও এবং বেচাকেনা ত্যাগ কর। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর; যদি তোমরা জানতে।”[সূরা জুমুআ’ আয়াত: ৯]
ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) ‘যাদুল মাআদ’ গ্রন্থে (১/৩৭৬) বলেন:
জুমার নামায ইসলামের অন্যতম তাগিদপূর্ণ ফরয। এটি মুসলমানদের অন্যতম মহান সম্মিলন। এটি আরাফার সম্মিলন ছাড়া অন্য সব সম্মিলনের চেয়ে মহান ও অধিক আবশ্যকীয়। যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে জুমার নামায ছেড়ে দেয় আল্লাহ্ তার অন্তরের উপর মোহর মেরে দেন।[সমাপ্ত]
আবুল জা’দ আদ-দামারি থেকে বর্ণিত (তিনি সঙ্গিত্ব পেয়েছিলেন) তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি অবহেলা করে তিন জুমা ত্যাগ করবে আল্লাহ্ তার অন্তরের উপর মোহর মেরে দিবেন।”[সুনানে আবু দাউদ (১০৫২), আলবানী ‘সহিহ আবি দাউদ’ গ্রন্থে (৯২৮) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
আব্দুল্লাহ্ বিন উমর (রাঃ) ও আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তারা উভয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন: তিনি তাঁর মিম্বরের উপর থেকে বলেছেন: “অবশ্যই একদল মানুষ হয়তো জুমার নামায ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকবে; নয়তো আল্লাহ্ তাদের অন্তরগুলোর উপর মোহর মেরে দিবেন; এরপর তারা গাফিলদের মধ্যে পরিগণিত হয়ে যাবে।”[সহিহ মুসলিম (৮৬৫)]
এই দিনে দোয়া কবুলের একটি সময় রয়েছে ; যদি এই সময়ে কোন বান্দা তার প্রভুকে ডাকে তিনি তার ডাকে সাড়া দেন; ইনশাআল্লাহ্।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার জুমাবারের কথা উল্লেখ করলেন। তিনি বললেন: “তাতে এমন একটি সময় রয়েছে। কোন মুসলিম বান্দার দাঁড়িয়ে নামাযরত আল্লাহ্র কাছে কিছু চাওয়া যদি ঐ সময়ে পড়ে যায়; তাহলে আল্লাহ্ তাকে সেটি দান করেন। তিনি তাঁর হাত দিয়ে ঐ সময়টির স্বল্পতার দিকে ইঙ্গিত করলেন।”[সহিহ বুখারী (৮৯৩) ও সহিহ মুসলিম (৮৫২)]
আবু সাঈদ আল-খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহাফ পড়বে তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় আলোকিত করে দেয়া হবে।”[মুস্তাদরাকে হাকেম, আলবানী ‘সহিহুত তারগীব’ গ্রন্থে (৮৩৬) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
আওস বিন আওস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “নিশ্চয় তোমাদের সবচেয়ে উত্তম দিন হচ্ছে জুমার দিন। এই দিনে আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তাঁর রূহ কবজ করা হয়েছে। এই দিনে শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। এই দিনে বিকট ধ্বনি (মহাপ্রলয়) ঘটবে। তাই তোমরা আমার প্রতি বেশি বেশি দুরুদ পড়বে। কেননা তোমাদের দুরুদ পাঠ আমার কাছে পেশ করা হয়। তারা বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! কিভাবে আপনার কাছে পেশ করা হবে; অথচ আপনি (মরে) পচে গেছেন। তিনি বললেন: নিশ্চয় আল্লাহ্ নবীদের দেহগুলো খাওয়া মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন।”[সুনানে আবু দাউদ (১০৪৭), ইবনুল কাইয়্যেম সুনানে আবু দাউদের টীকাগ্রন্থে (৪/২৭৩) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন এবং আলবানী ‘সহিহ সুনানে আবু দাউদ (৯২৫) গ্রন্থে সহিহ বলেছেন]
আউনুল মাবুদ গ্রন্থে বলেন:
জুমার দিনকে খাস করা হয়েছে যেহেতু জুমার দিন সকল দিনের নেতা এবং মোস্তফা সকল মানুষের নেতা। তাই তাঁর প্রতি দুরুদ পড়ার বিশেষত্ব আছে; যা অন্য কারো জন্য নেই।[সমাপ্ত]
এ সকল মর্যাদা ও ইবাদত সত্ত্বেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমার দিন বা রাতের জন্য এমন কোন ইবাদত খাস করতে নিষেধ করেছেন যা শরিয়তে উদ্ধৃত হয়নি।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “তোমরা অন্য রাতগুলোর মধ্য থেকে জুমার রাতকে কিয়ামুল লাইলের জন্য খাস করে নিও না। এবং অন্য দিনগুলোর মধ্য থেকে জুমার দিনকে রোযা রাখার জন্য খাস করে নিও না। যদি তোমাদের কারো রোযা রাখার অভ্যাস থাকে সেটা ছাড়া।”[সহিহ মুসলিম (১১৪৪)]
সানআনী ‘সুবুলুস সালাম’ গ্রন্থে বলেন:
“হাদিস প্রমাণ করে যে, জুমার রাতকে কোন ইবাদতের জন্য কিংবা অভ্যাসে নেই এমন কোন তেলাওয়াতের জন্য খাস করা হারাম। তবে দলিলে যা উদ্ধৃত হয়েছে যেমন সূরা কাহাফ পড়া; সেটি ছাড়া...।”[সমাপ্ত]
ইমাম নববী বলেন:
“এই হাদিসে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে: অন্য রাতগুলোর মধ্য থেকে জুমার রাতকে নামাযের জন্য খাস করা থেকে এবং জুমার দিনকে রোযার জন্য খাস করা থেকে। এটি মাকরূহ হওয়ার ব্যাপারে সবাই একমত।”[সমাপ্ত]
তিনি আরও বলেন:
“আলেমগণ বলেন: সেই দিনে বিশেষ রোযা রাখতে নিষেধাজ্ঞার গূঢ়রহস্য হলো: জুমার দিন দোয়া, যিকির ও ইবাদতের দিন; যেমন- গোসল করা, আগে আগে নামাযে যাওয়া, নামাযের জন্য অপেক্ষা করা, খোতবা শুনা, নামাযের পর বেশি বেশি যিকির করা; যেহেতু আল্লাহ্ তাআলার বাণীতে এসেছে: “অতঃপর সালাত শেষ হলে তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর ও আল্লহকে বেশি বেশি স্মরণ কর; যাতে করে তোমরা সফলকাম হও।”[সূরা জুমুআ’; আয়াত: ১০] এগুলো ছাড়া সেই দিনে আরও যেসব ইবাদত রয়েছে। তাই সেইদিন রোযা না-রাখা মুস্তাহাব। যাতে করে এই সব আমল পালনে অপেক্ষাকৃত সহায়ক হয় এবং উদ্দীপনাসহ, প্রফুল্লচিত্তে, মজা করে আদায় করা যায়; ত্যক্ত-বিরক্তি না আসে। এটি হাজীর জন্য আরাফার দিনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। কেননা একই গূঢ়রহস্যের কারণে হাজীর জন্য রোযা না-রাখা সুন্নত...। এটাই জুমার দিনে এককভাবে রোযা না-রাখার নির্ভরযোগ্য গূঢ়রহস্য।”
কারো কারো মতে: এই নিষেধাজ্ঞার কারণ হলো— এই দিনকে মর্যাদা দেয়ার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হওয়ার আশংকা; যাতে করে জুমার দিন দ্বারা পরীক্ষায় ফেলা না হয়; যেভাবে ইহুদীদেরকে শনিবারের মাধ্যমে পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে। এই অভিমত দুর্বল এবং জুমার নামায ও অন্যান্য জুমার দিনের আমলগুলো ও জুমার দিনকে মর্যাদা দেয়ার মাধ্যমে এই অভিমত অপনোদিত।
কারো কারো মতে: নিষেধাজ্ঞার কারণ হলো— যাতে করে এই রোযা রাখাকে কেউ ওয়াজিব বিশ্বাস না করে ফেলে। এটিও দুর্বল অভিমত এবং সোমবারের মাধ্যমে এটি অপনোদিত। যেহেতু সোমবারে রোযা রাখা মুস্তাহাব। সুতরাং এই দূরবর্তী সম্ভাবনার দিকে ভ্রুক্ষেপ করা যাবে না। এবং আরাফার দিন, আশুরার দিন ও অন্যান্য দিনের মাধ্যমেও অপনোদিত। সঠিক হলো যা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি।[সমাপ্ত]
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।