শুক্রবার 1 রবীউছ ছানী 1446 - 4 অক্টোবর 2024
বাংলা

ভিন্নজাতের দুটো খাদ্যদ্রব্য থেকে এক সা’ ফিতরা পরিশোধ করা

প্রশ্ন

ফিতরার মধ্যে একাধিক প্রকারের এক সা’ খাদ্য দেয়া কি জায়েয হবে? অর্থাৎ এক প্রকারের খাদ্য তিন কিলোগ্রাম না দিয়ে প্রত্যেক প্রকারের খাদ্য এক কিলোগ্রাম করে দেয়া?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

দুই বা ততোধিক প্রকারের খাদ্য মিশ্রিত করে এক সা’ ফিতরা পরিশোধ করার হুকুম নিয়ে ফিকাহবিদ আলেমগণ দ্বিমত করেছেন:

প্রথম অভিমত: এভাবে সহিহ হবে না ও আদায় হবে না।

এটি শাফেয়ি মাযহাব ও ইবনে হাযম জাহেরির অভিমত। যেহেতু তারা দলিলগুলোর বাহ্যিক অর্থের সাথে অবস্থান নিয়েছেন। যে দলিলগুলো বর্ণনা করছে যে, ফিতরা নির্দিষ্ট শ্রেণীর খাদ্যদ্রব্যের এক সা’। তাই কেউ যদি অর্ধ সা’ এক শ্রেণীর খাদ্যদ্রব্য দিয়ে দেয়; বাকী অর্ধ সা’ অন্য শ্রেণীর খাদ্যদ্রব্য দিয়ে দেয় তাহলে তারা দলিলে যা উদ্ধৃত হয়েছে সেটার অনুসরণ করল না।

ইমাম নববী “আল-মাজমু” গ্রন্থে (৬/৯৮-৯৯) বলেন:

“ইমাম শাফেয়ি, গ্রন্থাকার (অর্থাৎ শিরাজি) ও মাযহাবের সকল আলেম বলেন: দুই জাতের খাদ্য এক সা’ দিলে ফিতরা পরিশোধ হবে না...। যেমনিভাবে শপথ ভঙ্গের কাফ্‌ফারার ক্ষেত্রে পাঁচজন মিসকীনকে পোশাক দিলে ও পাঁচজন মিসকীনকে খাদ্য দিলে আদায় হবে না। যেহেতু সে ব্যক্তি এক সা’ গম কিংবা এক সা’ যব কিংবা এক সা’ অন্য কোন খাদ্য দিতে আদিষ্ট। কিন্তু সে ব্যক্তি এ দুটোর প্রত্যেকটি থেকে এক সা’ পরিশোধ করেনি। যেমনিভাবে (শপথ ভাঙ্গকারী) দশজন মিসকীনকে খাদ্য দান কিংবা দশজন মিসকীনকে পোশাক দান করতে আদিষ্ট। কিন্তু পূর্বোক্ত উদাহরণে সে ব্যক্তি দশজনকে পোশাক দান করেনি এবং দশজনকে খাদ্য দান করেনি। এটাই মাযহাবের অভিমত।”[সমাপ্ত]

দেখুন: ‘মুগনিল মুহতাজ’ (২/১১৮) ও ‘তুহফাতুল মুহতাজ’ (৩/৩২৩)

ইবনে হাযম ‘আল-মুহাল্লা’ গ্রন্থে (৪/২৫৯) বলেন:

“এক সা’–এর কিছু অংশ যব ও কিছু অংশ খেজুর দিলে পরিশোধ হবে না। মূল্য দিলে মূলতঃই পরিশোধ হবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা ফরয করেছেন এগুলো সেটা নয়।”[সংক্ষেপে সমাপ্ত]

দ্বিতীয় অভিমত: সহিহ হবে ও পরিশোধ হবে। 

এটি হানাফি ও হাম্বলি মাযহাবের অভিমত। তারা মর্মার্থের দিকে দৃষ্টিপাত করেছেন। তারা বলেছেন অবশ্যই এক সা’ মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্য গরীবের জন্য যথেষ্ট হওয়া, ব্যক্তিকে পবিত্র করা ও ফিতরা আদায় হওয়ার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করবে।

ইবনে রজব হাম্বলি ‘আল-কাওয়ায়েদ আল-ফিকহিয়্যা’ গ্রন্থে (কায়েদা নং-১০১, পৃষ্ঠা-২২৯) বলেন: “যে ব্যক্তিকে দুটো আমলের এখতিয়ার দেয়া হয়েছে এবং তার পক্ষে সম্মিলিতভাবে দুটো আমলের অর্ধেক অর্ধেক করে পালন করা সম্ভবপর হয়েছে— এভাবে কি আদায় হবে; নাকি হবে না?”

এতে মতভেদ রয়েছে। এর ভিত্তিততে কিছু মাসয়ালা উৎপন্ন হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • যদি কেউ পাঁচজন মিসকীনকে খাদ্যদান ও পাঁচজন মিসকীনকে বস্ত্রদানের মাধ্যমে শপথ ভঙ্গের কাফ্‌ফারা দেয় তাহলে মশহুর অভিমত অনুযায়ী সেটা পরিশোধ হয়ে যাবে।
  • কেউ যদি দুই জাতের এক সা’ খাদ্য দিয়ে ফিতরা পরিশোধ করে তাহলে মাযহাবের মতানুযায়ী আদায় হয়ে যাবে। এতে আরেকটি অভিমত আছে (অর্থাৎ আদায় হবে না)”[সমাপ্ত]

দেখুন: ‘আল-ইনসাফ (৩/১৮৩), ‘হাশিয়াতু ইবনে আবেদিন’ (২/৩৬৫)]

আমরা যে অভিমতটিকে পছন্দ করছি সেটা ইমাম শাফেয়ির অভিমত। যেহেতু এটাই সুন্নাহ্‌র বাহ্যিক অনুসরণ। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাকাতুল ফিতর বা ফিতরা ফরয করেছেন এক সা’ যব কিংবা এক সা’ যব...।

সাহাবায়ে কেরাম এভাবেই ফিতরা পরিশোধ করতেন। সুতরাং যে ব্যক্তি দুইজাতের এক সা’ খাদ্য দিয়েছে সে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নির্দেশ দিয়েছে সেটা বাস্তবায়ন করেনি।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব