রবিবার 21 জুমাদাল ছানী 1446 - 22 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

তালাক্বপ্রাপ্তা নারীর ইদ্দত

প্রশ্ন

আশা করব তালাক্বপ্রাপ্তা নারীর ইদ্দতের বিষয়টি স্পষ্ট করবেন।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

যদি স্ত্রীর সাথে বাসর করা ও তার সাথে নির্জনবাস করার পূর্বে তাকে তালাক্ব দেয়া হয়; অর্থাৎ সহবাস করা, নির্জনবাস করা ও সহবাসপূর্ব যৌনাচার করার পূর্বে তাকে তালাক্ব দেয়া হয় তাহলে তার উপর কোন ইদ্দত নেই। তাকে তালাক্ব দেয়ার সাথে সাথে সেই নারী বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন এবং অন্য পুরুষের জন্য বৈধ হয়ে যাবেন। আর যদি স্বামী তার সাথে বাসর করে থাকেন, নির্জনবাস করে থাকেন বা সহবাস করে থাকেন তাহলে সে নারীকে ইদ্দত পালন করতে হবে। তার ইদ্দতের বিবরণ নিম্নরূপ:

এক: যদি সেই নারী গর্ভবতী হন তাহলে সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত তার ইদ্দত; চাই সেই সময়টি দীর্ঘ হোক কিংবা সংক্ষিপ্ত হোক। হতে পারে স্বামী সকালে তাকে তালাক্ব দিল যোহরের পূর্বে সেই নারী সন্তান প্রসব করলেন। এতেই তার ইদ্দত শেষ। হতে পারে তাকে মুহাররম মাসে তালাক্ব দিল, কিন্তু তিনি জিলহজ্জ মাসের পূর্বে সন্তান প্রসব করবেন না। এভাবে ইদ্দত পালন অবস্থায় তাকে বার মাস কাটাতে হবে। মূলকথা হলো: সাধারণভাবে গর্ভবর্তী নারীর ইদ্দত হলো সন্তান প্রসব করা। যেহেতু আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: আর গর্ভবতীদের সময়কাল হলো তাদের সন্তান প্রসব করা

দুই: আর যদি তালাক্বপ্রাপ্তা নারী অ-গর্ভবতী হন এবং হায়েযবতী শ্রেণীর নারী হন তাহলে তার ইদ্দত হলো তালাক্বের পর পরিপূর্ণ তিন হায়েয। অর্থাৎ তার একবার হায়েয হবে, এরপর তিনি পবিত্র হবেন। এরপর আবার হায়েয হবে এবং পবিত্র হবেন। এরপর আবার হায়েয হবে এবং পবিত্র হবেন। এটাই হলো পরিপূর্ণ তিন হায়েয; চাই এই সময়কাল দীর্ঘ হোক কিংবা সংক্ষিপ্ত হোক। এই আলোচনার আলোকে যদি দুগ্ধপালনকালীন সময়সীমাতে স্বামী তাকে তালাক্ব দেয় এবং দুই বছরের আগে তার হায়েয না হয়; সেক্ষেত্রেও সে নারী তিনবার হায়েয হওয়া পর্যন্ত সময়কাল ইদ্দতে থেকে যাবেন। এতে করে তার ইদ্দতকালীন সময় দুই বছর বা তদুর্ধ্ব সময়কাল হয়ে যাবে। মোটকথা: পরিপূর্ণ তিনবার হায়েয হওয়া এটাই তার ইদ্দত; সেই সময়টি সুদীর্ঘ হোক কিংবা নাতিদীর্ঘ হোক। যেহেতু আল্লাহ্ তাআলা বলেন: আর তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীগণ তিন রজঃস্রাব কাল প্রতীক্ষায় থাকবে।[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২২৮]

তিন: আর যে নারীর বয়স অতি কম হওয়ার কারণে তার হায়েয হয় না কিংবা বয়স বেশি হওয়ার কারণে হায়েয স্থগিত হয়ে যায়; তার ইদ্দত হচ্ছে তিন মাস। যেহেতু আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: তোমাদের যে সব স্ত্রী আর ঋতুবর্তী হওয়ার আশা নেই তাদের ইদ্দত সম্পর্কে তোমরা সন্দেহ করলে তাদের ইদ্দতকাল হবে তিন মাস এবং যারা এখনো ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি তাদেরও[সূরা তালাক্ব, আয়াত: ৪]

চতুর্থ: যদি এমন কোন কারণে হায়েয বন্ধ হয়ে যায়; যে কারণের ব্যাপারে জানা যায় যে, পুনরায় আর হায়েয হবে না; যেমন: গর্ভাশয় অপসারণ করার কারণে। এমন নারীও বয়স্ক নারীর মত তিন মাস ইদ্দত পালন করবেন।

পাঁচ: যদি কোন কারণে হায়েয বন্ধ থাকে এবং সেই নারী জানেন যে, কি কারণে হায়েয বন্ধ আছে তাহলে সেই কারণটি দূর হওয়া অবধি তিনি অপেক্ষা করবেন। হায়েয ফিরলে হায়েয মতে ইদ্দত পালন করবেন।

ছয়: যদি হায়েয বন্ধ হয়ে যায় এবং সেই নারী না জানেন যে, কি কারণে হায়েয বন্ধ রয়েছে; তার ব্যাপারে আলেমগণ বলেন: এই নারী পূর্ণ এক বছর ইদ্দত পালন করবেন। নয় মাস গর্ভের জন্য এবং তিন মাস ইদ্দতের জন্য।

তালাক্বপ্রাপ্তা নারীর ইদ্দতের প্রকারভেদ।

সূত্র: শাইখ উছাইমীনের “মাজমুআতু আসইলাহ তাহুম্মুল উসরাল মুসলিমা (পৃষ্ঠা: ৬১-৬৩)