আলহামদু লিল্লাহ।.
শাবান মাসে বেশি বেশি রোযা রাখা মুস্তাহাব।
হাদিসে এসেছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোটা শাবান মাস রোযা রাখতেন।
উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: “আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে টানা দুইমাস রোযা রাখতে দেখিনি। তবে তিনি রমযানের সাথে শাবান মাসও লাগাতারভাবে রোযা রাখতেন।”।[মুসনাদে আহমাদ (২৬০২২), সুনানে আবু দাউদ (২৩৩৬), সুনানে নাসাঈ (২১৭৫), সুনানে ইবনে মাজাহ (১৬৪৮)]
হাদিসটি সুনানে আবু দাউদ এর ভাষ্যে এসেছে যে, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বছরের কোন মাসের গোটা অংশ রোযা রাখতেন না; শুধু শাবান মাস ছাড়া। তিনি শাবান মাস ও রমযান মাস লাগাতারভাবে রোযা রাখতেন।”[আলবানী সহিহু আবি দাউদ গ্রন্থে (২০৪৮) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
এ হাদিসের বাহ্যিক ভাব থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোটা শাবান মাস রোযা রাখতেন।
কিন্তু অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু অংশ ছাড়া গোটা শাবান মাস রোযা রাখতেন।
আবু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি আয়েশা (রাঃ) কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সিয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম; তিনি বললেন: তিনি এমনভাবে রোযা রাখতে থাকতেন; আমরা বলতাম তিনি বুঝি রোযাতে কাটাবেন। আবার তিনি এভাবে রোযা বাদ দিতেন, ফলে আমরা বলতাম তিনি বুঝি আর রোযা রাখবেন না। আমি শাবান মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে তাকে এত বেশি রোযা রাখতে দেখিনি। তিনি গোটা শাবান মাস রোযা রাখতেন। তিনি শাবান মাসের কিছু অংশ ছাড়া গোটা মাস রোযা রাখতেন।
আলেমগণ এই হাদিসদ্বয়ের মাঝে সমন্বয় করা নিয়ে মতভেদ করেছেন:
কোন কোন আলেমের মতে, এটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ঘটেছে। অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন কোন বছর গোটা শাবান মাস রোযা রেখেছেন। আর কোন কোন বছর অল্প কিছুদিন ছাড়া গোটা মাস রোযা রখেছেন। এটি শাইখ বিন বায (রহঃ) এর অভিমত।[দেখুন: মাজমুউ ফাতাওয়াস শাইখ বিন বায (১৫/৪১৬)]
অপর একদল আলেমদের মতে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমযান ছাড়া আর কোন মাসে সম্পূর্ণ মাস রোযা রাখেননি। তারা উম্মে সালামা (রাঃ) এর হাদিসকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে, তিনি সামান্য কিছু অংশ ছাড়া গোটা শাবান মাস রোযা রেখেছেন। তারা বলেন: আরবী ভাষাতে এভাবে বলা জায়েয আছে। যদি কেউ মাসের বেশির সময় রোযা থাকে সেক্ষেত্রে বলা যায়: صام الشهر كله (সে গোটা মাস রোযা রেখেছে।)
হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন: উম্মে সালামা (রাঃ) এর হাদিসের ভাষ্য: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বছরের কোন মাসের গোটা অংশ রোযা রাখতেন না; শুধু শাবান মাস ছাড়া। তিনি লাগাতারভাবে শাবান ও রমযান মাস রোযা রাখতেন।” এর ব্যাখ্যা রয়েছে আয়েশা (রাঃ) এর হাদিসে। অর্থাৎ তিনি শাবানের অধিকাংশ সময় রোযা থাকতেন। ইমাম তিরমিযি ইবনুল মুবারক থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: যদি কেউ মাসের অধিকাংশ সময় রোযা থাকে তার ক্ষেত্রে গোটা মাস রোযা থেকেছে বলা ভাষাগতভাবে বৈধ...”।
ত্বীবি বলেন: এ হাদিসের ব্যাখ্যা এভাবে করা হবে যে, তিনি কোন কোন বার সম্পূর্ণ শাবান মাস রোযা রাখতেন। আবার কোন কোন বার মাসের অধিকাংশ দিন রোযা রাখতেন; যাতে করে কেউ এটা না ভাবে যে, রমযানের মত এটাও ওয়াজিব।
অতঃপর ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন: প্রথম ব্যাখ্যাটিই সঠিক।[সমাপ্ত]
অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পূর্ণ শাবান মাস রোযা রাখেননি। তিনি এর সপক্ষে দলিল দেন সহিহ মুসলিম (৭৪৬)-এ বর্ণিত আয়েশা (রাঃ) এর হাদিস দিয়ে যে, তিনি বলেন: আমি এমন কিছু জানি না যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোটা কুরআন এক রাতে পড়েছেন, কিংবা ফজর পর্যন্ত সারারাত নামায পড়েছেন, কিংবা রমযান ছাড়া অন্য কোন মাসে সারা মাস রোযা রেখেছেন। তিনি আরও দলিল দেন বুখারী (১৯৭১) ও মুসলিম (১১৫৭) কর্তৃক সংকলিত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর হাদিস দিয়ে যে, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমযান ছাড়া অন্য কোন মাসে গোটা মাস রোযা রাখেননি।
উম্মে সালামা (রাঃ) এর হাদিসের ব্যাখ্যায় সিন্দি বলেন: يَصِل شَعْبَان بِرَمَضَان (রমযান ও শাবান মাস লাগাতর রোযা রাখতেন)। অর্থাৎ উভয়মাসের সম্পূর্ণ অংশ রোযা রাখতেন। হাদিসের বাহ্যিক ভাব হচ্ছে- তিনি গোটা শাবান মাস রোযা রাখতেন। কিন্তু, এমন কিছু হাদিস বর্ণিত হয়েছে যে হাদিসগুলো এর বিপরীত বিষয় প্রমাণ করে। তাই এ হাদিসকে এভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, তিনি মাসের বেশিরভাগ সময় রোযা থাকতেন; যেন তিনি গোটা মাসেই রোযা থেকেছেন এবং রমযানের সাথে মিলিয়ে শাবান মাসও সিয়াম পালন করেছেন।[সমাপ্ত]
যদি জিজ্ঞেস করা হয়: শাবান মাসে বেশি বেশি রোযা রাখার গূঢ় রহস্য কী?
জবাব হচ্ছে:
হাফেয ইবনে হাজার বলেন: এ ব্যাপারে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) এর যে হাদিসটি; যা ইমাম নাসাঈ, আবু দাউদ (আবু দাউদ সহিহ বলেছেন) ও ইবনে খুযাইমা সংকলন করেছেন। তিনি বলেন: আমি বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আপনি শাবান মাসে যত বেশি রোযা রাখেন অন্য কোন মাসে আপনাকে এত রোযা রাখতে দেখিনি। তিনি বলেন: এটি রজব ও রমযানের মধ্যবর্তী এমন এক মাস যে মাস সম্পর্কে মানুষ গাফেল, যে মাসে আমলগুলো রাব্বুল আলামীনের কাছে উত্তোলন করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি আমি রোযা থাকা অবস্থায় যেন আমার আমল উত্তোলন করা হয়।[আলবানী সহিহুন নাসাঈ গ্রন্থে (২২২১) হাদিসটিকে হাসান বলেছেন]
আল্লাহ্ই ভাল জানেন।