আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন: “তোমাদের কেউ যেন না বলে: হে আল্লাহ্! আপনি চাইলে আমাকে ক্ষমা করুন’ আপনি চাইলে আমার প্রতি দয়া করুন, আপনি চাইলে আমাকে রিযিক দিন। বরং সে যেন সুদৃঢ়ভাবে চায়। নিশ্চয় তিনি যা ইচ্ছা তাই-ই করেন; তাকে বাধ্য করার কেউ নেই।”[সহিহ বুখারী (৭৪৭৭) ও সহিহ মুসলিম (২৬৭৯)]
আবু সাঈদ আল-খুদরি (রাঃ) বলেন: “যখন তোমরা আল্লাহ্র কাছে দোয়া কর তখন তোমরা তোমাদের চাওয়া পেশ কর। কেননা আল্লাহ্র কাছে যা আছে কোন কিছু (দান) সেটাকে ফুরিয়ে ফেলার নয়। যখন তোমরা দোয়া কর তখন দৃঢ়ভাবে কর। নিশ্চয় আল্লাহ্কে বাধ্য করার কেউ নেই।”[জামেউল উলুম ওয়াল হিকাম (২/৪৮) থেকে সমাপ্ত]
ইবনে বাত্তাল (রহঃ) বলেন:
“এ হাদিসে দলিল রয়েছে যে, মুমিনের জন্য বাঞ্চনীয় হল জোরালোভাবে দোয়া পেশ করা, দোয়া কবুলের ব্যাপারে আশান্বিত থাকা এবং আল্লাহ্র রহমত থেকে নিরাশ না হওয়া। কেননা সে তো মহানুভবকে ডাকছে। এই মর্মে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মুতাওয়াতির হাদিস বর্ণিত আছে।”[শারহু সহিহিল বুখারী (১০/৯৯) থেকে সমাপ্ত]
কুরতুবী (রহঃ) বলেন:
হাদিসের বাণী: “আপনি চাইলে” এটি তাঁর (আল্লাহ্র) ক্ষমা, দান ও রহমত থেকে এক ধরণের অমুখাপেক্ষিতা; যেমন— কেউ বলে থাকে: যদি আপনি আমাকে অমুকটা দিতে চান দিতে পারেন। এ ধরণের শৈলী এমন কিছুর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় যা না হলেও চলে। যদি কোন জিনিসের জরুরী প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে ব্যক্তি দৃঢ়ভাবে সেটা চেয়ে থাকে এবং অভাবী ও অনন্যোপায় ব্যক্তি তার প্রয়োজন যেভাবে পেশ করে থাকে সেভাবে চেয়ে থাকে।”[তাফসিরে কুরতুবী (২/৩১২) থেকে সমাপ্ত]
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:
“দোয়াকে ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত করা তিন দিক থেকে গর্হিত:
এক. এভাবে দোয়াকারী যেন অবহিত করছে যে, আল্লাহ্কে বাধ্যকারী কেউ রয়েছে এবং আল্লাহ্র উপরেও এমন কেউ আছে যে আল্লাহ্কে বাধা দিতে পারে। তাই এ পদ্ধতিতে দোয়াকারী যেন বলছে: আমি আপনাকে বাধ্য করব না। আপনি চাইলে ক্ষমা করুন; আর চাইলে ক্ষমা না করুন।
দুই. কেউ যখন বলে “আপনি চাইলে (ক্ষমা করুন)” যেন সে ব্যক্তি এ বিষয়টিকে আল্লাহ্র জন্য বড় কিছু মনে করছে। অর্থাৎ এটি আল্লাহ্র কাছে বড় কিছু হওয়ার কারণে তিনি হয়তো নাও চাইতে পারেন। এর উদাহরণ হচ্ছে এমন; আপনি কোন একজন মানুষকে বলছেন যে, আমাকে এক মিলিয়ন রিয়াল দিন; যদি আপনি দিতে চান। কেননা আপনি যখন এমন কোন প্রস্তাব কাউকে দেন তার কাছে প্রস্তাবটি হয়তো একটু ভারী মনে হতে পারে; সেটাকে কিছুটা হালকা করার জন্য আপনি বলতে পারেন যে, যদি আপনি চান। কিন্তু আল্লাহ্তাআলার ক্ষেত্রে ‘আপনি চাইলে’ এমন কিছু বলার প্রয়োজন নাই। যেহেতু আল্লাহ্র কাছে কোন কিছুই বড় নয়। তাই তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আগ্রহটা বড় হওয়া চাই”। কেননা আল্লাহ্র কাছে কোন কিছুই বড় নয়; যা তিনি কাউকে দেন।
হাদিসের বাণী: “আগ্রহটা বড় হওয়া চাই”: কম হোক কিংবা বেশি হোক সেটি চাওয়া উচিত। বান্দা এ কথা বলবে না যে, এটি অনেক। আমি আল্লাহ্র কাছে এটি চাইব না। এ কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “কেননা আল্লাহ্র কাছে কোন কিছুই বড় নয়; যা তিনি কাউকে দেন”। অর্থাৎ আল্লাহ্র কাছে কোন কিছু এমন বড় নয় যে, তিনি সেটা দিবেন না কিংবা সেটা দিতে কৃপণতা করবেন। যা কিছু আল্লাহ্তাআলা মানুষকে প্রদান করেন এর কোন কিছু তাঁর কাছে বড় নয়। বরং আল্লাহ্তাআলা একটি মাত্র বাক্যের মাধ্যমে সৃষ্টিকুলকে পুনরুত্থিত করবেন। এটি একটি মহা ঘটনা। কিন্তু আল্লাহ্র জন্য সহজ।
তিন. এভাবে দোয়াকারী অবহিত করে যে, সে আল্লাহ্থেকে অমুখাপেক্ষী। যেন সে বলছে: আপনি চাইলে করুন এবং চাইলে না করুন; আমার কাছে তা গুরুত্বপূর্ণ নয়।”[মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িলিল উছাইমীন (১০/৯১৭-৯১৮)]
আরও জানতে দেখুন: 105366 নং প্রশ্নোত্তর।
দুই:
আল্লাহ্তাআলা তার বান্দাদেরকে দোয়া করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাদের দোয়া কবুল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন; যদি তারা একনিষ্ঠভাবে দোয়া করে এবং নিজের দৈন্যতা প্রকাশ করে। তিনি বলেন: “তোমাদের প্রভু বলেন; তোমরা আমাকে ডাক; আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব”।[সূরা গাফের, আয়াত: ৬০]
আল্লাহ্র কাছে যে ভাণ্ডার ও দান রয়েছে এখানে আলোচনার বিষয়টি সেটা নয়। যেহেতু আল্লাহ্র ভাণ্ডার পরিপূর্ণ; খরচ করলে সেটা কমে না এবং দিলে বাড়ে না। কিংবা এটি আল্লাহ্র দেয়া প্রতিশ্রুতির সাথেও সম্পৃক্ত নয়। কেননা আল্লাহ্তাআলা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না। বরং এখানে মুখ্য বিষয় হল: বান্দা নিজেকে দাসত্ব ও আশার মর্যাদায় পেশ করা, দোয়ার স্বরূপ বাস্তবায়ন ও দোয়া করা; ঠিক আল্লাহ্তাঁর বান্দাদেরকে যেভাবে পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন; এবং দোয়া কবুলের প্রতিবন্ধকতাগুলো ও আল্লাহ্র পথ থেকে বিচ্যুতকারী বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকা।
দোয়াটাই আল্লাহ্র ইবাদত; বরঞ্চ মহান ইবাদতগুলোর মধ্যে অন্যতম। যে কোন ইবাদতেরই কিছু আদব, শর্ত ও বিশেষ কাঠামো রয়েছে; বান্দার জন্য সেগুলো মান্য করা মুস্তাহাব।
আর প্রত্যেক কারণের বিপরীতে কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকে; যা কারণের ফলাফলকে বাধাগ্রস্ত করে কিংবা কারণের প্রভাবকে দুর্বল করে দেয়।
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:
“দোয়াকারী কি দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিবে?
জবাব: যদি এর দ্বারা উদ্দেশ্য করা হয় আল্লাহ্র সক্ষমতাকে তাহলে আল্লাহ্তাআলা দোয়া কবুল করতে সক্ষম এ দৃঢ়তা ব্যক্ত করা আবশ্যক। আল্লাহ্তাআলা বলেন: “তোমরা আমাকে ডাক; আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব”। পক্ষান্তরে, আপনার নিজের দোয়া কবুল হওয়া: আপনার মাঝে যে প্রতিবন্ধকতাগুলো রয়েছে সে বিবেচনা থেকে কিংবা দোয়া কবুল হওয়ার কারণগুলো পূর্ণ না হওয়ার দিক থেকে আপনি দোয়া কবুলের ব্যাপারে আশংকায় থাকতে পারেন।
তদুপরি আপনার উচিত আল্লাহ্র প্রতি সুধারণা রাখা। কেননা আল্লাহ্তাআলা বলেছেন: “তোমরা আমাকে ডাক; আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব”। যিনি শুরুতে আপনাকে দোয়া করার তাওফিক দিয়েছেন তিনিই শেষে দোয়া কবুল করে আপনার প্রতি অনুগ্রহ করবেন। বিশেষতঃ ব্যক্তি যদি দোয়া কবুল হওয়ার কারণগুলো বাস্তবায়ন করে এবং প্রতিবন্ধকতাগুলো থেকে বেঁচে থাকে। প্রতিবন্ধকতাগুলোর মধ্যে রয়েছে দোয়াতে সীমালঙ্ঘন করা; যেমন কোন পাপ কাজের কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার দোয়া করা...।[মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িলিল উছাইমীন (১০/৯১৮)]
দোয়া করার গুরুত্বপূর্ণ আদবগুলো দেখুন 36902 নং প্রশ্নোত্তরে এবং দোয়া কবুলের প্রতিবন্ধকতাগুলো দেখুন 5113 নং প্রশ্নোত্তরে।
তিন:
দোয়াকারী তার প্রভুকে ডাকার ফলে দোয়া কবুল হলেও প্রার্থিত বিষয় ঠিক যেভাবে চাওয়া হয়েছে সেভাবে হাছিল হওয়া আবশ্যক নয়। বরং দোয়া কবুল কয়েকভাবে হতে পারে: দোয়াকারীর প্রার্থিত বিষয় অবিলম্বে তাকে প্রদান করা কিংবা অনুরূপ কোন মন্দ তার থেকে দূরীভুত করা কিংবা এ দোয়াটিকে তার জন্য কিয়মাতের দিন প্রদেয় পুরস্কার বা সওয়াব হিসেবে সংরক্ষিত করে রাখা।
আবু সাঈদ আল-খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “কোন মুসলিম যদি দোয়া করে এবং সে দোয়াতে কোন পাপ কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের বিষয় না থাকে তাহলে আল্লাহ্তাকে তিনটি বিষয়ের কোন একটি দিতে পারেন: অবিলম্বে তার দোয়া কবুল হওয়া, কিংবা তার দোয়াটিকে তার জন্য আখিরাতে পুঞ্জীভুত করে রাখা কিংবা অনুরূপ কোন অনিষ্ট তার থেকে দূরীভুত করা। তারা (সাহাবীরা) বলল: তাহলে আমরা প্রচুর দোয়া করব? তিনি বললেন: আল্লাহ্ও অধিক দাতা।”[মুসনাদে আহমাদ (১০৭৪৯), আলবানী ‘সহিহুত তারগীব ওয়াত তারহীব’ গ্রন্থে (১৬৩৩) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
হাফিয ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন:
“প্রত্যেক দোয়াকারীর দোয়াই কবুল হয়। তবে কবুলের প্রকার বিভিন্ন: কখনও দোয়াকৃত বিষয়টি দেয়া হতে পারে, কখনও এর বিনিময়ে অন্যটি দেয়া হতে পারে। এ ব্যাপারে সহিহ হাদিস উদ্ধৃত হয়েছে।”[ফাতহুল বারী (১১/৯৫) থেকে সমাপ্ত]
শাইখ বিন বায (রহঃ) বলেন:
“ব্যক্তির কর্তব্য হল অনুনয়ের সাথে বারবার দোয়াটি পেশ করা ও আল্লাহ্র প্রতি সুধারণা রাখা এবং এ কথা জেনে রাখা যে, আল্লাহ্হচ্ছেন— প্রজ্ঞাবান ও জ্ঞানী। তিনি তাঁর প্রজ্ঞাবলে কখনও দ্রুত সাড়া দেন; আবার কখনও বিলম্বে সাড়া দেন। আবার কখনও কখনও দোয়াকারী যা চেয়েছে এর চেয়ে উত্তমটি তাকে দান করেন।”[মাজমুউ ফাতাওয়া বিন বায (৯/৩৫৩) থেকে সমাপ্ত]
আল্লাহ্তাআলাই সর্বজ্ঞ।