আলহামদু লিল্লাহ।.
তাবেয়ী হচ্ছেন- যারা নবুয়তি যুগের পরে এসেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেননি। কিন্তু সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গ পেয়েছেন।
তাবে-তাবেয়ী হচ্ছেন- যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণের সাক্ষাত লাভ করেনি; তাবেয়ীগণের সাক্ষাত লাভ করেছেন এবং তাঁদের সঙ্গ পেয়েছেন। উলুমুল হাদিস এর পরিভাষায়- তাবেয়ী হচ্ছেন: যিনি সাহাবীর সাক্ষাত পেয়েছেন তিনি তাবেয়ী। বিশুদ্ধ মতানুযায়ী, এর জন্য দীর্ঘদিনের সঙ্গ শর্ত নয়। অতএব, যিনি সাহাবীর সাক্ষাত পেয়েছেন এবং ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করেছেন তিনিই তাবেয়ী। তাবেয়ীর মধ্যে উত্তমতার স্তরভেদ রয়েছে। হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) ‘নুখবাতুল ফিকার’ (৪/৭২৪) গ্রন্থে বলেন: তাবেয়ী হচ্ছেন- যিনি সাহাবীর সাক্ষাত পেয়েছেন। সমাপ্ত। ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন: খতিব আল-বাগদাদী বলেন: তাবেয়ী হচ্ছেন যিনি সাহাবীর শিষ্য ছিলেন। হাকেমের বক্তব্যের দাবী হচ্ছে- যিনি সাহাবীর সাক্ষাত পেয়েছেন তাকে তাবেয়ী বলা যাবে। তাঁর থেকে এ কথাও বর্ণিত আছে যে, যদিও সাহাবীর শিষ্যত্ব না পেয়ে থাকুক না কেন? সমাপ্ত। ইরাকী (রহঃ) তাঁর ‘আলফিয়া’ (পৃষ্ঠা-৬৬) তে বলেন:
তাবেয়ী হচ্ছেন- যিনি সাহাবীর সাক্ষাত পেয়েছেন।
তাবে-তাবেয়ীন হচ্ছেন তাঁরা যারা তাবেয়ীগণের সাক্ষাত পেয়েছেন; সাহাবীগণকে পায়নি। তাবেয়ীগণের উদাহরণ হচ্ছে- সাঈদ ইবনে আল-মুসায়্যিব, উরওয়া ইবনে যুবাইর, হাসান বসরী, মুজাহিদ ইবনে জাবর, সাঈদ ইবনে যুবায়ের, ইবনে আব্বাসের ক্রীতদাস ইকরিমা, ইবনে উমরের ক্রীতদাস নাফে। তাবে-তাবেয়ীগণের উদাহরণ হচ্ছে- ছাওরী, মালেক, রাবিআ, ইবনে হুরমুয, হাসান ইবনে সালেহ, আব্দুল্লাহ ইবনে হাসান, ইবনে আবু লাইলা, ইবনে শুবরুমা, আল-আওযায়ী। দুই:
ইমাম বুখারী (৩৬৫১) ও ইমাম মুসলিম (২৫৩৩) ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “সর্বোত্তম মানুষ হচ্ছে- আমার প্রজন্ম। এরপর তাদের পরে যারা। এরপর তাদের পরে যারা। অতঃপর এমন কওম আসবে যাদের সাক্ষ্য হলফের পিছনে, হলফ সাক্ষ্যের পিছনে ছুটাছুটি করবে।”
ইমাম নববী বলেন:
বিশুদ্ধ মতানুযায়ী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রজন্ম হচ্ছে-সাহাবায়ে কেরাম। দ্বিতীয় প্রজন্ম হচ্ছে- তাবেয়ীগণ। তৃতীয় প্রজন্ম হচ্ছে- তাবে-তাবেয়ীগণ। [ইমাম নববী রচিত সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যাগ্রন্থ (১৬/৮৫) থেকে সমাপ্ত]
হাফেয ইবনে হাজার বলেন:
হাদিসের বাণী: “এরপর তাদের পরে যারা” অর্থাৎ তাদের পরের প্রজন্ম। তারা হচ্ছেন- তাবেয়ীগণ। “এরপর তাদের পরে যারা”। তারা হচ্ছেন- তাবে-তাবেয়ীগণ। ফাতহুল বারী (৭/৬) থেকে সমাপ্ত।
ক্বারী (রহঃ) বলেন:
সুয়ুতী বলেন: বিশুদ্ধ মতানুযায়ী এটি অর্থাৎ প্রজন্ম বিশেষ কোন সময়সীমাতে আবদ্ধ নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রজন্ম হচ্ছে- সাহাবায়ে কেরাম। নবুয়তের শুরু থেকে সর্বশেষ সাহাবীর মৃত্যু পর্যন্ত ১২০ বছর এ প্রজন্মের সময়কাল। তাবেয়ী-প্রজন্মের সময়কাল ১০০ হিঃ থেকে ৭০ বছর। আর তাবে-তাবেয়ী প্রজন্মের সময়কাল এরপর থেকে ২২০ হিঃ পর্যন্ত। এ সময়ে ব্যাপকভাবে বিদআতের উদ্ভব ঘটে। মুতাযিলারা তাদের মুখের লাগাম খুলে দেয়। দার্শনিকেরা মাথা ছাড়া দিয়ে উঠে। দ্বীনদার আলেমগণকে “কুরআন আল্লাহর সৃষ্টি” এই মতবাদ মেনে নেয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়। এভাবে গোটা পরিস্থিতি ওলট পালট যায়। এভাবে আজ অবধি দ্বীনদারি হ্রাস পেতেই আছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীর বাস্তব নমুনা যেন ফুটে উঠেছে- “এরপর মিথ্যা ব্যাপক হারে দেখা দিবে”। ‘মিরকাতুল মাফাতিহ’ (৯/৩৮৭৮) গ্রন্থ থেকে সমাপ্ত।
আল্লাহই ভাল জানেন।