বৃহস্পতিবার 25 জুমাদাল ছানী 1446 - 26 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

জীবজন্তুর শিং ব্যবহার করার হুকুম

প্রশ্ন

কোন প্রাণী জীবিত থাকতে কিংবা মরে যাওয়ার পর এর শিং কেটে নিয়ে উপকারী কোন কাজে লাগানোর হুকুম কি?

আলহামদু লিল্লাহ।.

যে সকল প্রাণীর গোশত খাওয়া জায়েয যেমন- গরু, ছাগল, ভেড়া; সেগুলোকে জবাই করার পর সেগুলোর শিং ব্যবহার করা জায়েয হওয়ার ব্যাপারে কোন মতভেদ নাই। পক্ষান্তরে, কোন প্রাণী জীবিত থাকতে সে প্রাণীর শিং কেটে নেয়া হলে কিংবা শরিয়তসম্মত পদ্ধতিতে জবাই করা হয়নি এমন মৃত প্রাণীর শিং কেটে নেয়া হলে সেটার পবিত্রতার ব্যাপারে আলেমগণ মতভেদ করেছেন।

মালেকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাযহাবের প্রসিদ্ধ অভিমত হল: সেটা নাপাক।

"আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা" গ্রন্থে (৩৯/৩৯১-৩৯২) এসেছে: "গোশত খাওয়া জায়েয এমন মৃত প্রাণীর হাড়, শিং, খুর ও নখ ব্যবহার করার ব্যাপারে আলেমগণের দুটো অভিমত রয়েছে:

এক. শাফেয়ি, মালেকি ও হাম্বলি মাযহাব মতে এগুলো নাপাক বিধায় এগুলো ব্যবহার করা জায়েয নয়।"[সমাপ্ত]

তারা এভাবে দলিল দেন যে, এটি মৃতপ্রাণীর একটি অংশ। তাই এটি নাপাক। অনুরূপভাবে কোন প্রাণী জীবিত থাকা অবস্থায় এগুলো তার থেকে কেটে নিলে সেগুলোর হুকুমও মৃতপ্রাণীর হুকুমের মত।

ইবনে কুদামা (রহঃ) বলেন:

"শিং, নখ ও খুর হাড্ডির মত। যদি জবাইকৃত প্রাণী থেকে এগুলো সংগ্রহ করা হয় তাহলে সেগুলো পবিত্র। আর যদি জীবিত প্রাণী থেকে সংগ্রহ করা হয় তাহলে সেগুলো নাপাক। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "কোন প্রাণী জীবিত থাকা অবস্থায় সে প্রাণী থেকে যা কর্তন করে নেয়া হয় সেটা মৃত।"[হাদিসটি তিরমিযি বর্ণনা করেন এবং বলেন: হাসান গরীব হাদিস][আল-মুগনী (১/৯৯) থেকে সমাপ্ত]

হানাফী মাযহাবের অভিমত এবং এক বর্ণনা মতে, ইমাম আহমাদের অভিমত হচ্ছে— এগুলো পবিত্র এবং এগুলো ব্যবহার করা জায়েয। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া এই দ্বিতীয় অভিমতটি মনোনয়ন করেছেন। তিনি বলেছেন: এটি জমহুর সালাফদের অভিমত।[দেখুন: মাজমুউল ফাতাওয়া (২১/৯৬-১০২)]

258312 নং প্রশ্নোত্তরে আমরা তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য উদ্ধৃত করেছি।

বুখারী (রহঃ) বলেন: যুহরী বলেন: হাতি ও অন্যান্য মৃতপ্রাণীর হাড়ের ব্যাপারে: আমি উম্মতের পূর্বসূরি আলেমদের কিছু ব্যক্তিকে আমি পেয়েছি যারা এগুলো দিয়ে মাথা আঁচড়াতেন, এগুলোতে তেল ব্যবহার করতেন, এটাকে আপত্তিকর মনে করতেন না।"[ফাতহুল বারী (১/৩৪২)]

হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন:

"এগুলোতে তেল ব্যবহার করতেন": এটি প্রমাণ করে যে, তাঁরা এর (মৃতপ্রাণীর হাড়ের) পবিত্রতার অভিমত পোষণ করতেন।"[ফাতহুল বারী (১/৩৪৩) থেকে সমাপ্ত]

ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন:

"পবিত্র বলার দলিল: যেহেতু হাড়ের মধ্যে নাপাক হওয়ার হেতু অনুপস্থিত। তাই হাড় নাপাক হওয়ার হুকুম দেওয়া হয়নি। হাড়কে গোশতের উপর কিয়াস করা সঠিক নয়। যেহেতু আর্দ্রতা ও খারাপ বর্জ্য গোশতের সাথে সম্পৃক্ত; হাড়ের সাথে নয়। যেমনিভাবে যে প্রাণীর দেহে রক্ত নাই সে প্রাণী মরলেও নাপাক হয় না। অথচ সেটা পরিপূর্ণ একটি প্রাণী। যেহেতু নাপাকির কারণ সেটার মধ্যে নেই। সুতরাং হাড় নাপাক না হওয়া অধিক যুক্তিযুক্ত। এ দলিলটি প্রথম দলিলের চেয়ে শক্তিশালী। অতএব, এর আলোকে মৃতপ্রাণীর হাড় বিক্রি করা জায়েয হবে; যদি সে হাড় কোন পবিত্র প্রাণীর হাড় হয়।"[যাদুল মাআদ (৫/৬৭৪)]

অতএব, মৃতপ্রাণীর হাড়কে পবিত্র বলার অভিমতটি শক্তিশালী এবং সেটাই বাহ্যিক। সুতরাং কেউ যদি এ অভিমতটি গ্রহণ করেন এতে কোন বাধা নাই। আর যদি কেউ অপেক্ষাকৃত সাবধানতাসূচক অভিমতটি গ্রহণ করেন এবং মৃতপ্রাণীর হাড় ও শিং ব্যবহার করা বর্জন করেন তাহলে সেটি তার জন্য উত্তম। বিশেষতঃ যদি এমন জিনিস হয় যা ব্যবহার না করলেও চলে এবং সেটার বদলে অন্য জিনিস দিয়ে তার প্রয়োজন কাটিয়ে নিতে পারেন।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব