বৃহস্পতিবার 20 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 21 নভেম্বর 2024
বাংলা

রোযার উপর বেটাফিরন ইনজেকশনের প্রভাব এবং এ ইনজেকশনের পরে যদি প্রচুর পানি ও খাবার খেতে হয় তাহলে কী করণীয়?

প্রশ্ন

আমার ভাইয়ের ব্যাপারে আমার একটি প্রশ্ন আছে। সে স্ক্লেরোসিস রোগের কারণে বেটাফিরন ইনজেকশন নিচ্ছে। ইনজেকশনটি চামড়ার নীচে দেওয়া হয়। ডাক্তার তাকে বলেছে: ইনজেকশনটি নেয়ার পর রোগীকে বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হবে; যাতে করে কিডনিতে চাপ না পড়ে এবং শরীর যাতে পর্যাপ্ত খাদ্য পায় তাই ভাল খাবার খেতে হবে। উল্লেখ্য, ডাক্তার তাকে এ কথাও বলেছে যে, তুমি রোযা রাখতে পারবে না। কিন্তু, রমযান আসার আগেই রোযা রাখার পাকাপোক্ত নিয়ত করে থাকলে ও তুমি শক্তি অনুভব করলে; তাহলে রোযা রাখতে পার। বিঃদ্রঃ আমার ভাই শুধু যেই দিন ইনজেকশন নেয় ঐ দিন রোযা রাখে না। এ বিষয়টির ফতোয়া জানতে চাই।  

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

যে সব ইনজেকশনে খাদ্য উপাদান নেই সেগুলো রোযা ভঙ্গ করে না; যেমনটি 49706 নং প্রশ্নোত্তরে বর্ণিত হয়েছে।

দুই:

যদি এ ইনজেকশনগুলো গ্রহণকারীর প্রচুর পানি ও খাবার গ্রহণ করার প্রয়োজন হয় তাহলে তাকে দেখতে হবে যদি ইফতার করার পর ইনজেকশনটি নেয়া যায় এবং এতে করে রোগীর কোন ক্ষতি না হয় কিংবা কষ্ট না হয় তাহলে সেটাই ওয়াজিব।

আর যদি ইফতার পর্যন্ত বিলম্ব করলে রোগীর ক্ষতি হয় কিংবা কষ্ট হয় তাহলে রোযা না রাখাই মুস্তাহাব এবং রোযা রাখা মাকরুহ।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:

রোগীর কয়েকটি অবস্থা হতে পারে:

১। রোযা পালনের কারণে যে রোগীর উপর শারীরিক কোন প্রভাব পড়ে না; যেমন- হালকা সর্দি, হালকা মাথাব্যথা, দাঁতে ব্যথা ইত্যাদির ক্ষেত্রে রোযা ভাঙ্গা জায়েয নয়। যদিও আলেমগণের কেউ কেউ নিম্নোক্ত আয়াতের দলীলের ভিত্তিতে বলেছেন যে তার জন্যেও রোযা ভাঙ্গা জায়েয।

ومن كان مريضاً...

2 البقرة: 185 

“আর কেউ অসুস্থ থাকলে...” [সূরা বাক্বারাহ, ২ : ১৮৫]

তবে আমরা বলবো- এই হুকুমটি একটি ইল্লত (কারণ) এর সাথে সম্পৃক্ত। আর তা হলো রোযা ভঙ্গ করাটা রোগীর জন্য বেশি আরামদায়ক হওয়া। যদি রোযা রাখলে রোগীর উপর শারীরিক কোন প্রভাব না পড়ে তবে তার জন্য রোযা ভঙ্গ করা নাজায়েয। বরং তার উপর রোযা রাখা ওয়াজিব।

২। যদি রোগীর উপর রোযা রাখা কষ্টকর হয়; কিন্তু ক্ষতিকর না হয়। এমন রোগীর জন্য রোযা রাখা মাকরুহ। রোযা না-রাখা তার জন্য সুন্নত।

৩। যদি রোযা রাখা তার জন্য কষ্টকর ও ক্ষতিকর হয়। যেমন যে ব্যক্তি কিডনির রোগে আক্রান্ত কিংবা ডায়াবেটিকস রোগে আক্রান্ত কিংবা এ ধরণের অন্য কোন রোগ; রোযা রাখা যে রোগের জন্য ক্ষতিকর-- এমন রোগীর জন্য রোযা রাখা হারাম।

এ আলোচনার মাধ্যমে আমরা রোযা রাখতে অতি উৎসাহী রোগীদের ভুল জানতে পারি রোযা রাখা যাদের জন্য কষ্টকর; হতে পারে ক্ষতিকর; কিন্তু তদুপরি তারা রোযা ভাঙ্গতে রাজি নয়।

আমরা বলব: তারা ভুল করেছেন। যেহেতু তারা আল্লাহ্‌র দয়া ও আল্লাহ্‌র দেয়া ছাড়কে গ্রহণ করেননি এবং নিজেদের ক্ষতি করেছেন। অথচ আল্লাহ্‌ তাআলা বলছেন: "তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না"।[সূরা নিসা, ৪:২৯]”[আশ্‌-শারহুলমুমতি (৬/৩৫২)]

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব