আলহামদু লিল্লাহ।.
ঈদের নামাযের পদ্ধতি হচ্ছে- ইমাম মুসল্লিদেরকে নিয়ে দুই রাকাত নামায আদায় করবেন। উমর (রাঃ) বলেন: ঈদুল ফিতর এর নামায হচ্ছে- দুই রাকাত এবং ঈদুল আযহার নামায হচ্ছে- দুই রাকাত। আপনাদের নবীর বাণী অনুযায়ী এটাই পরিপূর্ণ নামায; কসর (রাকাত-সংখ্যা হ্রাসকৃত) নয়। যে ব্যক্তি মিথ্যা বলবে সে ব্যর্থ হবে।[সুনানে নাসাঈ (১৪২০), সহিহ ইবনে খুযাইমা এবং আলবানী ‘সহিহুন নাসাঈ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন] আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহের উদ্দেশ্য বের হতেন। তিনি সর্বপ্রথম যা দিয়ে শুরু করতেন সেটা হচ্ছে নামায।[সহিহ বুখারী (৯৫৬)]
প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরিমা দিবেন। তারপর ছয়টি কিংবা সাতটি তাকবীর দিবেন। দলিল হচ্ছে আয়েশা (রাঃ) এর হাদিস: “ঈদুল ফিতরের নামায ও ঈদুল আযহার নামাযে প্রথম রাকাতে সাত তাকবির ও দ্বিতীয় রাকাতে পাঁচ তাকবির; রুকুর দুই তাকবির ছাড়া”।[সুনানে আবু দাউদ, আলবানি ‘ইরওয়াউল গালিল’ গ্রন্থে (৬৩৯) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]
এরপর প্রথম রাকাতে ‘সূরা ফাতিহা’ ও ‘সূরা ক্বাফ’ পড়বেন। দ্বিতীয় রাকাতের জন্য তাকবির দিয়ে দাঁড়াবেন। দাঁড়ানো শেষ হলে পাঁচ তাকবির দিবেন এবং সূরা ফাতিহা পড়বেন। এরপর اقتربت الساعة وانشق القمر (সূরা ক্বামার) পড়বেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই ঈদের নামাযে এই সূরাদ্বয় তেলাওয়াত করতেন। আর ইচ্ছা করলে তিনি প্রথম রাকাতে ‘সূরা আ’লা’ ও দ্বিতীয় রাকাতে ‘সূরা গাশিয়া’ পড়তে পারেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি ঈদের নামাযে সূরা আ’লা ও সূরা গাশিয়া তেলাওয়াত করতেন।
ঈদের নামাযের ইমামের উচিত এই সূরাগুলো তেলাওয়াত করার সুন্নাহকে পুনর্জীবিত করা; যেন মুসলমানেরা এ সুন্নাহকে জানতে পারে এবং কাউকে আমল করতে দেখলে ভ্রু না-কুচকে না ফেলে।
ঈদের নামাযের পর ইমাম সাহেব মুসল্লিদেরকে উদ্দেশ্য করে খোতবা দিবেন। খোতবার মধ্যে নারীদেরকে উদ্দেশ্য করেও কিছু কথা বলা উচিত। নারীদের যা কিছু করা উচিত তাদেরকে সে নির্দেশনা দিবে এবং যা কিছু থেকে তাদের বিরত থাকা উচিত সে সম্পর্কে তাদেরকে নিষেধ করবে, যেমনিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন।
[দেখুন: শাইখ মুহাম্মদ বিন উছাইমীন এর ‘ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম’ পৃষ্ঠা-৩৯৮ এবং ‘ফাতাওয়াল লাজনাহ্ আদ-দায়িমা’ (৮/৩০০-৩১৬)]
খোতবা দেয়ার আগে নামায আদায় করা:
ঈদের হুকুমসমূহের মধ্যে রয়েছে খোতবার আগে নামায আদায় করা। যেহেতু জাবির বিন আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) এর হাদিসে এসেছে তিনি বলেন: “নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে বের হলেন। তিনি খোতবা দেয়ার আগে নামায শুরু করলেন”।[সহিহ বুখারী (৯৫৮) ও সহিহ মুসলিম (৮৮৫)]
খোতবা যে ঈদের নামায আদায় করার পূর্বে পেশ করতে হবে এর সপক্ষে প্রমাণের মধ্যে আরও রয়েছে আবু সাঈদ (রাঃ) এর হাদিস; তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হতেন। তিনি সর্বপ্রথম যা দিয়ে শুরু করতেন তা হল ঈদের নামায। এরপর নামায শেষ করে মানুষের মুখোমুখি এসে দাঁড়াতেন; তখন লোকেরা তাদের কাতারে বসে থাকত। তিনি তাদের উদ্দেশ্যে ওয়ায করতেন, তাদেরকে উপদেশ দিতেন, আদেশ-নিষেধ করতেন। যদি কোন অভিযান প্রেরণ করতে চাইতেন পাঠিয়ে দিতেন। যদি কোন নির্দেশ জারী করতে চাইতেন সেটা জারী করতেন। এরপর প্রস্থান করতেন”।
আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন: এভাবেই মানুষ চলে আসছিল। একবার আমি ঈদুল আযহা কিংবা ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মারওয়ানের সাথে বের হলাম- মারওয়ান তখন মদিনার গভর্নর। যখন আমরা ঈদগাহে পৌঁছলাম তখন দেখলাম যে, কাছির বিন সালত একটি মিম্বর বানিয়েছে এবং মারওয়ান নামাযের আগে সে মিম্বরে উঠতে যাচ্ছে। তখন আমি তার কাপড় টেনে ধরলাম সে আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। সে মিম্বরে উঠে গেল। এবং নামাযের আগে খোতবা দিল। তখন আমি তাকে বললাম: আল্লাহ্র শপথ আপনারা পরিবর্তন করে ফেলেছেন!!
তিনি বললেন: আবু সাঈদ আপনি যা জানেন সে দিন চলে গেছে।
আমি তাকে বললাম: আমি যা জানি সেটা আমি যা জানি না সেটার চেয়ে উত্তম।
তখন তিনি বললেন: নিশ্চয় লোকেরা নামাযের পর আমাদের খোতবা শুনার জন্য বসে থাকবে না। তাই আমি নামাযের আগে খোতবা দিয়েছি।[সহিহ বুখারী (৯৫৬)]