আলহামদু লিল্লাহ।.
এক: তাকবীরের ফযিলত
যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিন মহান দিন। আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে এ দিনগুলোকে দিয়ে শপথ করেছেন। কোন কিছুকে দিয়ে শপথ করা সে বিষয়ের গুরুত্ব ও মহান উপকারিতার প্রমাণ বহন করে। আল্লাহ তাআলা বলেন: “শপথ ফজরের ও দশরাত্রির”। ইবনে আব্বাস (রাঃ), ইবনে যুবাইর (রাঃ) ও অন্যান্য পূর্ববর্তী ও পরবর্তী আলেম বলেন: এ দিনগুলো হচ্ছে- যিলহজ্জ মাসের দশদিন। ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন: “এটাই সঠিক”।[তাফসিরে ইবনে কাছির (৮/৪১৩)]
এ দিনগুলোর নেক আমল আল্লাহর কাছে প্রিয়। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “অন্য যে কোন সময়ের নেক আমলের চেয়ে এ দশদিনের নেক আমল আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। তারা (সাহাবীরা) বলেন: আল্লাহর পথে জিহাদও নয়?! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: আল্লাহর পথে জিহাদও নয়; তবে কোন লোক যদি তার জানমাল নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে এবং কোন কিছু নিয়ে ফেরত না আসে সেটা ভিন্ন কথা।”[সহিহ বুখারী (৯৬৯) ও সুনানে তিরমিযি (৭৫৭); হাদিসের এ ভাষ্যটি তিরমিযির, আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে (৬০৫) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]
এ দিনগুলোর নেক আমলের মধ্যে রয়েছে- তাকবীর (আল্লাহু আকবার) ও তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) উচ্চারণ করে আল্লাহর যিকির করা। দলিল হচ্ছে নিম্নরূপ:
১। আল্লাহ তাআলা বলেন: “যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে। এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহ্র নাম স্মরণ করতে পারে”[সূরা হজ্জ, আয়াত: ২৮] ‘নির্দিষ্ট দিনগুলো’ হচ্ছে- যিলহজ্জের দশদিন।
২। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনে আল্লাহকে স্মরণ কর...”[সূরা বাকারা, আয়াত: ২০৩] এগুলো হচ্ছে- তাশরিকের দিন।
৩। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “তাশরিকের দিনগুলো হচ্ছে- পানাহার ও আল্লাহকে স্মরণ করার দিন”[সহিহ মুসলিম (১১৪১)]
দুই: তাকবীর দেয়ার পদ্ধতি
আলেমগণ তাকবীর দেয়ার পদ্ধতি নিয়ে কয়েকটি মত পেশ করেছেন:
১. আল্লাহু আকবার.. আল্লাহু আকবার.. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার.. আল্লাহু আকবার..ওয়া লিল্লাহিল হামদ (অর্থ- আল্লাহ মহান..আল্লাহ মহান..আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই..আল্লাহ মহান..আল্লাহ মহান..সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য)।
২. আল্লাহু আকবার.. আল্লাহু আকবার.. আল্লাহু আকবার.. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার.. আল্লাহু আকবার.. আল্লাহু আকবার..ওয়া লিল্লাহিল হামদ (অর্থ- আল্লাহ মহান..আল্লাহ মহান..আল্লাহ মহান..আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই..আল্লাহ মহান..আল্লাহ মহান..আল্লাহ মহান..সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য)।
৩. আল্লাহু আকবার.. আল্লাহু আকবার.. আল্লাহু আকবার.. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার.. আল্লাহু আকবার.. ওয়া লিল্লাহিল হামদ (অর্থ- আল্লাহ মহান..আল্লাহ মহান..আল্লাহ মহান..আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই..আল্লাহ মহান..আল্লাহ মহান..সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য)।
যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে তাকবীর দেয়ার সুনির্দিষ্ট কোন ভাষা বর্ণিত হয়নি তাই এ ক্ষেত্রে প্রশস্ততা রয়েছে।
তিন: তাকবীর দেয়ার সময়
তাকবীর দুই প্রকার:
১। সাধারণ তাকবীর: যে তাকবীর কোন সময়ের সাথে সম্পৃক্ত নয়। এ তাকবীর সবসময় দেয়া সুন্নত: সকাল-সন্ধ্যায়, প্রত্যেক নামাযের আগে ও পরে, সর্বাবস্থায়।
২। বিশেষ তাকবীর: যে তাকবীর নামাযের পরের সময়ের সাথে সম্পৃক্ত।
সাধারণ তাকবীর যিলহজ্জ মাসের দশদিন ও তাশরিকের দিনগুলোর যে কোন সময়ে উচ্চারণ করা সুন্নত। এ তাকবীরের সময়কাল শুরু হয় যিলহজ্জ মাসের প্রথম থেকে (অর্থাৎ যিলক্বদ মাসের সর্বশেষ দিনের সূর্যাস্তের পর থেকে) তাশরিকের সর্বশেষ দিনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত (অর্থাৎ ১৩ ই যিলহজ্জের সূর্যাস্ত যাওয়া পর্যন্ত)।
আর বিশেষ তাকবীর দেয়া শুরু হয় আরাফার দিনের ফজর থেকে তাশরিকের সর্বশেষ দিনের সূর্যাস্ত যাওয়া পর্যন্ত (এর সাথে সাধারণ তাকবীর তো থাকবেই)। ফরয নামাযের সালাম ফেরানোর পর তিনবার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ পড়বে, এরপর ‘আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম, ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারাকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ বলবে, এরপর তাকবীর দিবে।
তাকবীরের সময়কালের এ বিধান যিনি হাজী নন তার জন্য প্রযোজ্য। আর হাজীসাহেব কোরবানীর দিন যোহরের সময় থেকে বিশেষ তাকবীর শুরু করবেন।
আল্লাহই ভাল জানেন।
দেখুন মাজমুউ ফাতাওয়া বিন বায (১৩/১৭) ও বিন উছাইমীনের ‘আল-শারহুল মুমতি’ (৫/২২০-২২৪)