আলহামদু লিল্লাহ।.
ঈদও ঈদের খুশি অত্যাসন্ন। তাই কিছু বিষয়ে মুসলমানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেতে পারে।আল্লাহরশরিয়ত ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহনাজানার কারণে কিছু মানুষযে কাজগুলো করেথাকেন।যেমন : ১. ঈদের রাত জেগে থেকে ইবাদতকরাকে শরিয়তসম্মত আমল হিসেবে বিশ্বাসকরা: কিছু কিছুমানুষবিশ্বাসকরেযে,ঈদের রাতজেগে থেকে ইবাদত করাটাশরিয়তসম্মত আমল।অথচ এটিএকটিনতুনপ্রবর্তিতবিষয় তথা বিদ‘আত।এই আমলনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিতনয়। বরংএকটিদুর্বলহাদীসেএ বিষয়টি বর্ণিতহয়েছে।যাতেএসেছে“যেব্যক্তি ঈদেররাতজেগেইবাদত করবে; যেদিনসবহৃদয়মরেযাবে সেদিন তারহৃদয়মরবেনা।” এটিসহীহহাদিস হিসাবে প্রমাণিত নয়।এ হাদিসটিদুইটিসনদেরমাধ্যমে বর্ণিতহয়েছে। এরএকটিমাওজু (বানোয়াট) এবংঅপরটিহলজয়িফ জিদ্দান (খুবইদুর্বল)।দেখুন আলবানীর“সিলসিলাতুল আহাদিস আদ্দায়িফা ওয়াল মাওজুআ (৫২০,৫২১)। তাই অন্য রাতগুলোকে বাদ দিয়ে বিশেষভাবে ঈদের রাতে নফল নামায পড়া শরিয়তসম্মত নয়। তবে যাদের তাহাজ্জুদ নামায পড়ার অভ্যাস আছে তারা ঈদের রাতে তাহাজ্জুদ নামায পড়তে কোন দোষ নেই। ২.দুই ঈদেরদিন কবর যিয়ারত করা: এই আমল ঈদের উদ্দেশ্য-লক্ষ্য তথা আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও খুশি প্রকাশের সাথে সাংঘর্ষিক এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সলফে সালেহীনদের আমলের বিপরীত। উপরন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে, কবরকে উৎসবস্থল বানাতে নিষেধ করেছেন এটি সেই সাধারণ নিষেধাজ্ঞার অধীনে পড়ে যায়।যেমনটি আলেমগণ উল্লেখ করেছেন যে, বিশেষ কিছু মুহূর্তে ও বিশেষ কিছু মৌসুমে কবর যিয়ারত করাটা হচ্ছে- কবরকে উৎসবস্থল হিসেবে গ্রহণ করা। দেখুন আলবানীর ‘আহকামুল জানায়িয ওয়া বিদাউহা’ (পৃঃ ২১৯ ও২৫৮)। ৩.নামাযের জামাত বর্জন করা এবং নামায না পড়ে ঘুমিয়ে থাকা: এটি খুবই দুঃখজনক। আপনি দেখবেন যে কিছু মুসলিম নামায নষ্ট করে এবং নামাযের জামাত ত্যাগ করে। অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:“আমাদেরও অমুসলিমদের মাঝে (পার্থক্য সূচিত করে) নামাজের অঙ্গীকার, যে ব্যক্তি নামাজ ত্যাগ করল, সে কুফরী করল।” [জামে তিরমিযী (২৬২১) ও সুনানে নাসা’ঈ (৪৬৩, আলবানীসহীহ আততিরমিযী গ্রন্থে হাদিসটিকেসহীহবলেছেন।] এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন:“মুনাফিকদের জন্য সবচেয়ে কঠিন নামায হচ্ছে- এশাওফজর। তারা যদি জানত এ নামাযদ্বয়ের মধ্যে(কী কল্যাণ)আছে, তবে তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এই দুই সালাতে উপস্থিত হত। একবার আমি মনস্থ করেছিলাম যে নামায শুরু করার নির্দেশ করব; নামাযের ইকামত দেয়া হবে এবং এক ব্যক্তিকে আদেশ করব যে লোকদের নিয়ে (ইমাম হিসেবে)সালাতআদায় করবে। আর আমি আমার সাথে কিছু লোক নিয়ে বের হব। তাদের সাথে কাঠের বাণ্ডিল থাকবে। সেই সমস্ত লোকদের কাছে যাব যারা নামাযের জামাতে উপস্থিত হয়নি। এরপর তাদের বাড়িঘর আগুনে জ্বালিয়ে দিব।”[সহীহ মুসলিম(৬৫১)] ৪. ঈদগাহে, রাস্তাঘাটে কিংবা অন্য কোন স্থানে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা এবং পুরুষদের মাঝে নারীদের ভিড় জমানো: এটি বড় ধরনের ফিতনা ও খুব বিপদজনক।এ ব্যাপারে ওয়াজিব হল নারী-পুরুষ উভয়কে সাবধান করাএবং যতটুকু সম্ভব প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। নারীরা পুরোপুরি চলে যাবার আগে পুরুষ ও যুবকদের কখনো সালাতের স্থান বা মসজিদ ত্যাগ করা উচিত নয়। ৫. কিছু কিছু মহিলার সুগন্ধি মেখে, সাজগোজ করে পর্দা ছাড়া বের হওয়া: বর্তমানে এই সমস্যাটি ব্যাপক আকার ধারন করেছে।কিছু কিছু মানুষ এই ব্যাপারটিকে খুব হালকা ভাবে নিচ্ছে। আল্লাহুল মুস্তাআন (এ ব্যাপারে আমরা আল্লাহর সাহায্য কামনা করি)। কিছু কিছু নারীতারাবীর নামায, ঈদেরনামায অথবা এ জাতীয় অন্য কোন উপলক্ষ্যে বের হওয়ারসময় সবচেয়ে সুন্দর পোশাকটি পরিধান করেন এবং সবচেয়ে উত্তম সুগন্ধি ব্যবহার করে; আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েত করুন। অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যেনারীসুগন্ধিব্যবহারকরেকোন কওমেরপাশদিয়েএমনভাবেহেঁটে যায়যাতেতারাসুগন্ধিরসৌরভপেতে পারেসেএকজনব্যভিচারিণী।”[হাদিসটি বর্ণনাকরেছেননাসাঈ (৫১২৬; তিরমিযি (২৭৮৬);আলবানী সহীহআত্তারগীবওয়াত তারহীব’ (২০১৯)গ্রন্থেএই হাদিসকেহাসানহিসেবেউল্লেখকরেছেন।] আবু হুরায়রারাদিআল্লাহু আনহু থেকেবর্ণিতযে,তিনি বলেন: “আল্লাহর রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “জাহান্নামের অধিবাসী এমন দু’টো শ্রেণী আছে যাদেরকে আমি দেখিনি। (১) তারা এমন মানুষ যাদের কাছে গরুর লেজের মত চাবুক থাকবে যা দিয়ে তারা মানুষকে মারবে এবং (২) এমন নারী যারা কাপড় পরা সত্ত্বেও বিবস্ত্র, অন্যদেরকে পথভ্রষ্টকারিনী এবং নিজেরাও পথভ্রষ্ট,তাদের মাথার চুলের অবস্থা উটের ঝুলে পড়া কুঁজের ন্যায়।তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না; এমনকি জান্নাতের সৌরভও পাবে না। যদিও জান্নাতের সৌরভ এত এত দূর থেকে পাওয়া যায়।”[সহীহ মুসলিম (২১২৮)] নারীদের অভিভাবকদের উচিত তাদের অধীনে যারা আছেতাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা এবং আল্লাহ তাদেরউপরকর্তৃত্বের যে দায়িত্ব ওয়াজিব করেছেন তা সম্পাদন করা। আল্লাহ বলেছেন: “পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যকে প্রাধান্য দান করেছেন”[৪ আন-নিসা:৩৪ ]
সুতরাং নারীদের অভিভাবকদের উচিত নারীদেরকে অবশ্যই সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়া। হারাম থেকে বাঁচার মাধ্যমে যে পথে তাদেরদুনিয়া ও আখিরাতের নাজাত ও নিরাপত্তারয়েছে, সে পথে তাদেরকে পরিচালিত করা এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের ব্যাপারে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করা।
৬- হারাম গান শোনা: বর্তমানে যে মন্দ কাজগুলো সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে এর মধ্যে গান-বাজনা অন্যতম। গান-বাজনা এত ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পরেও মানুষ এটাকে খুব হালকাভাবে নিচ্ছে। গান-বাজনা এখন টিভিতে, রেডিওতে,গাড়িতে,ঘরে, মার্কেটে সর্বত্র। লা হাওলা ওয়া লা ক্বুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ (এর থেকে পরিত্রাণের কোন শক্তি ও ক্ষমতা নেই আল্লাহ ছাড়া)। এমনকি মোবাইল ফোনও এই মন্দ ও খারাপ জিনিস থেকে মুক্ত নয়। অনেক কোম্পানি আছে যারা মোবাইল ফোনে সর্বাধুনিক মিউজিক টিউন দেওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করে।এভাবে গান এখন মসজিদে পর্যন্ত ঢুকে পড়েছে (আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন)...। আল্লাহর ঘরে মিউজিক কানে আসা এর চেয়ে বড় মুসিবত, মহা-অন্যায় আর কি হতে পারে। এ বিষয়ে প্রশ্ন নং- (34217) দেখুন। এ যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের বাস্তবপ্রমাণ, “আমারউম্মতেরমধ্যেকিছুলোকএমনথাকবেযারাব্যভিচার, রেশম, মদ এবংবাদ্যযন্ত্রকেহালালগণ্যকরবে।”[সহীহ বুখারী (৫৫৯০)] আরো জানতে দেখুন প্রশ্ন নং-(5000) ও(34432)। তাই একজন মুসলিমের আল্লাহকে ভয় করা উচিত এবং তার জানা উচিত -তার উপর আল্লাহর যে নেয়ামতআছে এর জন্য তার শোকর করা কর্তব্য।স্বীয় প্রতিপালকের অবাধ্য হওয়াটা নেয়ামতের শোকর নয়। কিভাবে সে তাঁর অবাধ্য হবে যিনি তার উপর অসীম নেয়ামত বর্ষণ করে যাচ্ছেন। একবার এক দ্বীনদার ব্যক্তি কিছু লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যারা ‘ঈদেরআনন্দে মত্ত হয়ে গর্হিত কাজ করছিল।তখন তিনি তাদেরকে বললেন, “যদি তোমরা রমজানে ভালো আমল করে থাকো তাহলে ভাল আমল করতে পারার শোকর তো এটি নয়। আর যদি তোমরা রমজানে খারাপ আমল করে থাকো,তাহলে রহমানের সাথে খারাপ সম্পর্ক করার পর তো কেউ এমন আমল করতে পারে না।” আল্লাহইসবচেয়েভালোজানেন।