শুক্রবার 21 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 22 নভেম্বর 2024
বাংলা

মুসাফিরের জন্য কখন রোযা ভঙ্গ করা হারাম

প্রশ্ন

মুসাফিরের জন্য কখন রোযা ভঙ্গ করা হারাম? কারণসহ।

আলহামদু লিল্লাহ।.

কুরআন-সুন্নাহ ও ইজমার দলিল প্রমাণ করছে যে, মুসাফিরের জন্য রমযানের দিনের বেলায় রোযা না-রাখা জায়েয। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “আরকেউঅসুস্থথাকলেকিংবা সফরে থাকলেঅন্যসময় এই সংখ্যা পূরণ করবে।”[সূরা বাক্বারা, ২ : ১৮৫]

আরও জানতে দেখুন 37717 নং প্রশ্নোত্তর।

ফিকাহবিদগণ উল্লেখ করেছেন যে, ঐ মুসাফিরের জন্য রোযা না-রাখা বৈধ যিনি নামায কসর করা যায় এমন দূরত্বে সফর করেন এবং সেটা যদি বৈধ সফর হয়। আর কারো সফর যদি নামায কসর করার মত দূরত্বে না হয় কিংবা তার সফর কোন গুনাহর কাজে হয় সেক্ষেত্রে রোযা ভঙ্গ করা বৈধ হবে না।

অনুরূপভাবে কেউ যদি রোযা না-রাখার জন্য সফর করে সেক্ষেত্রে তার জন্য সফর ও রোযা ভঙ্গ করা উভয়টা হারাম।

নামায কসর করার দূরত্ব অধিকাংশ আলেমদের মতে, চার মনজিল তথা প্রায় ৮০ কিঃমিঃ। কোন কোন আলেমের অভিমত হচ্ছে, দূরত্বটা বিবেচ্য নয়; বরং মানুষ যেটাকে সফর হিসেবে আখ্যায়িত করে সেটাই বিবেচ্য।

দেখুন 38079 নং প্রশ্নোত্তর।

গুনাহ্‌র ক্ষেত্রে সফরকারী ব্যক্তির জন্য সফরের ছাড়গুলো (যেমন- নামায কসর করা) গ্রহণ করা বৈধ হবে না– এটি মালেকী, শাফেয়ী ও হাম্বলী মাযহাবের অভিমত।[দেখুন: আল-মুগনী ২/৫২)]

তারা এ অভিমতের কারণ দর্শান এভাবে যে, রোযা না-রাখাটা একটা ছাড়। গুনাহর কাজে সফরকারী ব্যক্তি এ ছাড় পাওয়ার হকদার নয়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এ আয়াত দিয়ে দলিল দেন: “তবে যে ব্যক্তি নিরুপায় হয়ে অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘন ব্যতীত এগুলো গ্রহণ করে, তার কোন গুনাহ হবে না।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১৭৩] আয়াত থেকে তাদের মতের পক্ষে দলিল গ্রহণের প্রক্রিয়া হচ্ছে- নিরুপায় ব্যক্তি অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘনকারী হলে আল্লাহ্‌ তাআলা তার জন্যে মৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া হালাল করেননি। যেহেতু অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘনকারী হচ্ছে পাপী। তারা বলেন: باغ (অবাধ্য) হচ্ছে – খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী। আর عاد (সীমালঙ্ঘনকারী) হচ্ছে- ডাকাত।

আর হানাফি আলেমদের মতে, গুনাহগার হলেও তার জন্য সফরের ছাড় যেমন, রোযা না-রাখা, নামায কসর করা ইত্যাদি গ্রহণ করা বৈধ। এটি শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়ারও অভিমত।[দেখুন: আল-বাহরুর রায়েক (২/১৪৯), মাজমুউল ফাতাওয়া (২৪/১১০)।

এ মতাবলম্বীরা জমহুর বা অধিকাংশ আলেম যে আয়াত দিয়ে দলিল দিয়েছেন তা মেনে নেননি। তারা বলেন: আয়াতে الباغي (অবাধ্য) হচ্ছে সেই ব্যক্তি যার হালাল-খাদ্য খাওয়ার সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সে হারাম খাবার অন্বেষণ করে। আর المعتدي (সীমালঙ্ঘনকারী) হচ্ছে- যে ব্যক্তি সীমা অতিক্রম করে যতটুকু না হলে নয় এর চেয়ে বেশি পরিমাণ ভক্ষণ করে।

আর যে ব্যক্তি রোযা না-রাখার জন্য সফর করে সে তো ইসলামী শরিয়তের সাথে ছল-চাতুরী করে। এজন্য তার শাস্তি হচ্ছে, তার ছল-চাতুরীর বিপক্ষে বিধান দেয়া।

হাম্বলি মাযহাবের ‘কাশ্‌শাফুল ক্বিনা’ (২/৩১২) গ্রন্থে বলা হয়েছে:

“যদি কেউ রোযা না-রাখার জন্য সফর করে তার উপর উভয়টা হারাম হবে অর্থাৎ সফর করা ও রোযা ভঙ্গ করা। কারণ তার সফর করার আর কোন কারণ নেই; রোযা ভঙ্গ করা ছাড়া। রোযা ভঙ্গ করা হারাম হওয়ার কারণ হল যেহেতু তার রোযা ভঙ্গ করার বৈধ কোন ওজর নেই। আর সফর করা হারাম হওয়ার কারণ হল, কেননা সেটা রোযা ভঙ্গ করার একটা হারাম কৌশল।”[সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত]

মুসাফিরের জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত রোযা ভঙ্গ করা বৈধ হবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার শহরের দালান-কোঠা কিংবা নিজ গ্রামের সীমা অতিক্রম না করে। এর পূর্বে রোযা ভাঙ্গা হারাম। কেননা সে তখনও মুকীম। আরও জানতে দেখুন 48975 নং প্রশ্নোত্তর।

এই আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, মুসাফিরের জন্য নিম্নোক্ত স্থানে রোযা ভঙ্গ করা হারাম:

১। যদি তার সফর নামায কসর করার সমান দূরত্বে না হয়।

২। অধিকাংশ আলেমের মতে, যদি তার সফর কোন বৈধ কারণের পরিপ্রেক্ষিতে না হয়।

৩। যদি সে রোযা ভঙ্গ করার জন্য সফর করে।

৪। যদি সে সফর শুরু করে, কিন্তু তার গ্রামের বাড়ী-ঘর কিংবা তার শহর অতিক্রমের আগেই রোযা ভেঙ্গে ফেলতে চায়।

৫। অধিকাংশ আলেমের মতে, পঞ্চম অবস্থা হচ্ছে– যদি কেউ যে স্থানের উদ্দেশ্যে সফর করেছে সে স্থানে পৌঁছে যায় এবং সেখানে চারদিনের বেশি থাকার নিয়ত করে। অন্য একদল আলেমের মতে, মুসাফির ব্যক্তি যতদিন মুসাফির অবস্থায় থাকবে ততদিন তিনি সফরের ছাড়গুলো গ্রহণ করতে পারবেন, সে অবস্থান যত লম্বা সময় হোক না কেন। আরও জানতে দেখুন 21091 নং প্রশ্নোত্তর।

আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব