শুক্রবার 10 শাওয়াল 1445 - 19 এপ্রিল 2024
বাংলা

বিতিরের নামায কি সালাতুল লাইল (রাতের নামায) থেকে আলাদা কিছু

প্রশ্ন

বিতিরের নামায ও রাতের নামাযের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

বিতিরের নামাযও এক প্রকার রাতের নামায। তবে, তারপরেও রাতের নামাযের সাথে বিতিরের নামাযের কিছু পার্থক্য রয়েছে।

শাইখ বিন বায (রহঃ) বলেন:

বিতিরের নামায একপ্রকার রাতের নামায, এটি আদায় করা সুন্নত এবং এটি রাতের নামাযের সর্বশেষ নামায। বিতিরের নামায এক রাকাত; যে একরাকাত নামায দিয়ে রাতের নামাযের সমাপ্তি টানা হয়। এটি রাতের শেষাংশে কিংবা মধ্যরাতে কিংবা এশার পর রাতের প্রথমাংশে আদায় করা হয়। যত রাকাত ইচ্ছা রাতের নামায পড়ার পর এক রাকাত বিতিরের নামায দিয়ে শেষ করা হয়।[সমাপ্ত]

[ফাতাওয়া বিন বায (১১/৩০৯)]

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:

সুন্নত হচ্ছে- কোন কথা কিংবা কাজের মাধ্যমে রাতের নামায থেকে বিতিরের নামাযকে আলাদা করা। অনুরূপভাবে আলেমগণ হুকুম ও পদ্ধতির দিক থেকে এ দুই নামাযের মধ্যে পার্থক্য করেছেন:

কোন কথার মাধ্যমে এ দুই নামাযের মধ্যে পার্থক্য করার দলিল হচ্ছে- ইবনে উমর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে এসেছে, একলোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলুল্লাল্লাহ রাতের নামাযের পদ্ধিত কী? তিনি বললেন: দুই রাকাত, দুই রাকাত। যদি তুমি ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা কর, তাহলে এক রাকাত বিতির পড়ে নাও।[সহিহ বুখারী, দেখুন: ফাতহুল বারী (৩/২০)]

কোন কাজের মাধ্যমে এ দুই নামাযের মধ্যে পার্থক্য করার দলিল হচ্ছে- আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায পড়তেন; আর আমি বিছানাতে আড়াআড়িভাবে শুয়ে থাকতাম। তিনি যখন বিতিরের নামায পড়তে চাইতেন তখন আমাকে জাগিয়ে দিতেন; তখন আমিও বিতিরের নামায পড়ে নিতাম।[সহিহ বুখারী, দেখুন: ফাতহুল বারী (২/৪৮৭), সহিহ মুসলিম (১/৫১) এর ভাষ্য হচ্ছে- “তিনি রাতের নামায পড়তে থাকতেন এবং আমি তাঁর সামনে আড়াআড়িভাবে শুয়ে থাকতাম। যখন বিতির বাকী থাকত তখন তিনি আয়েশাকে জাগিয়ে দিতেন এবং আমিও বিতির নামায পড়ে নিতাম।” আরেকটি বর্ণনা (১/৫০৮) এর ভাষ্য হচ্ছে- “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তের রাকাত রাতের নামায আদায় করতেন। এর মধ্যে পাঁচ রাকাত হচ্ছে- বিতিরের নামায। এ পাঁচ রাকাতের মধ্যে বসতেন না; শুধু শেষ রাকাতে বসতেন।”। আয়েশা (রাঃ) থেকে অপর বর্ণনায় (১/৫১৩) এসেছে- যখন সাদ বিন হিশাম বিন আমের তাঁকে বললেন: আমাকে রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিতিরের নামায সম্পর্কে অবহিত করুন। তখন তিনি বলেন: “তিনি নয় রাকাত বিতির নামায পড়তেন। অষ্টম রাকাতে গিয়ে তিনি বসতেন এবং যিকির আযকার পড়তেন, আল্লাহর প্রশংসা করতেন, দোয়া পড়তেন, এরপর সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে যেতেন। এরপর নবম রাকাত পড়তেন। অতঃপর যখন বসতেন তখন যিকির-আযকার পড়তেন, আল্লাহর প্রশংসা করতেন, দোয়া পড়তেন। এরপর আমাদেরকে শুনিয়ে সালাম ফিরাতেন।”

আলেমগণ কর্তৃক বিতিরের নামায ও রাতের নামাযের হুকুমের মধ্যে পার্থক্য করা: আলেমগণ বিতিরের নামায ওয়াজিব কি, ওয়াজিব না— এ নিয়ে মতপার্থক্য করেছেন। ইমাম আবু হানিফার মতে, ওয়াজিব। এটি ইমাম আহমাদ থেকেও বর্ণিত আছে; যা ‘আল-ইনসাফ’ ও ‘আল-ফুরু’ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে। আহমাদ বলেন: যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বিতিরের নামায ত্যাগ করে সে মন্দ লোক; তার সাক্ষ্য অগ্রাহ্য করা উচিত।

তবে, হাম্বলি মাযহাবের প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী, বিতিরের নামায সুন্নত। ইমাম মালেক ও ইমাম শায়েফিও এই অভিমত।

পক্ষান্তরে, রাতের নামায নিয়ে এসব মতানৈক্য নেই। ফাতহুল বারী গ্রন্থে (৩/২৭) এসেছে: রাতের নামায ওয়াজিব হওয়া মর্মে অন্য কারো কথা নয়; কিছু তাবেয়ীদের উক্তি উল্লেখ করছি। ইবনে আব্দুল বার্‌র বলেন: “কোন কোন তাবেয়ী ছাগলের দুধ দোহনের মত সামান্য সময়ের জন্যে হলেও রাতের নামায পড়া ওয়াজিব হওয়া মর্মে বিরল অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তবে, আলেমসমাজ রাতের নামাযকে মুস্তাহাব মনে করেন।[সমাপ্ত]

তবে, বিতিরের নামায ও রাতের নামাযের মধ্যে পদ্ধতিগত প্রার্থকের ব্যাপারে আমাদের হাম্বলি মাযহাবের আলেমগণ স্পষ্টভাবে প্রার্থক্যের কথা বলেন: তারা বলেন: রাতের নামায হচ্ছে- দুই রাকাত, দুই রাকাত। তাঁরা বিতিরের নামাযের ক্ষেত্রে বলেন: যদি কেউ পাঁচ রাকাত কিংবা সাত রাকাত বিতির নামায পড়ে তাহলে শুধু শেষ রাকাতে বসবে। আর যদি নয় রাকাত বিতির পড়ে তাহলে অষ্টম রাকাত শেষে বসবে, তাশাহুদ পড়বে, এরপর সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে এবং নবম রাকাত পড়বে। তারপর তাশাহুদ পড়ে সালাম ফিরাবে। ‘যাদুল মুসকাতনি’ গ্রন্থাকার এ কথা বলেছেন।[সমাপ্ত]

মাজমু ফাতাওয়া ইবনে উছাইমীন (১৩/২৬২-২৬৪)

এতে করে জানা গেল যে, বিতিরের নামাযও রাতের নামায। কিন্তু, বিতিরের নামাযের সাথে রাতের নামাযের কিছু প্রার্থক্য আছে। যেমন- পদ্ধতিগত প্রার্থক্য।

আল্লাহই ভাল জানেন।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব