আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক দিতে পারে না। বরং তালাক কেবল স্বামীর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে তালাকের মাসআলাসমূহ ও তালাক্বের বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে স্বামীদেরকে সম্বোধন করেছেন; স্ত্রীদেরকে নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “আর যখন তোমরা স্ত্রীকে তালাক দাও অতঃপর তারা ইদ্দত পূর্তির নিকটবর্তী হয়, তখন তোমরা হয় বিধি অনুযায়ী তাদেরকে রেখে দিবে অথবা বিধিমত মুক্ত করে দিবে।” [বাকারা: ২৩১]
তিনি আরো বলেন: “যদি তোমরা স্ত্রীদেরকে স্পর্শ না করে অথবা মোহর নির্ধারণ না করেই তালাক দাও তবে তোমাদের কোন অপরাধ নেই।” [বাকারা: ২৩৬]
আল্লাহ তায়ালা বলেন: “হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা মুমিন নারীদেরকে বিয়ে করবে, তারপর তাদেরকে স্পর্শ করার আগে তালাক দিবে, তখন তোমাদের জন্য তাদের পালনীয় কোন ইদ্দত নেই যা তোমরা গুণবে।” [আহযাব: ৪৯]
আল্লাহ বলেন: “হে নবী! তোমরা স্ত্রীদের তালাক দিলে তাদের ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক দেবে এবং (ঠিকভাবে) ইদ্দত গণনা করবে। আর তোমাদের রব আল্লাহকে ভয় করো।” [তালাক: ১]
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তালাক দেয়া কেবল তার অধিকার যে (নারীর) পায়ের নলা ধরেছিল (অর্থাৎ সহবাস করেছিল; উদ্দেশ্য স্বামী)।”[হাদীসটি ইবনে মাজাহ (২০৮১) বর্ণনা করেন এবং আলবানী ‘ইরওয়াউল গালীল’ বইয়ে হাদীসটিকে হাসান বলেছেন (৭/১০৮)]
স্ত্রীর আগ্রহে স্বামীর সাথে যে বিচ্ছেদ ঘটে, যেটার বিনিময়ে স্ত্রী অর্থ পরিশোধ করে এর নাম— ‘খুলা’। খুলার সংজ্ঞা হল: স্ত্রী তার স্বামী থেকে প্রাপ্ত মোহরানা বা স্বামীর দাবিকৃত অর্থের বিনিময়ে নিজেকে মুক্ত করে নেওয়া। স্বামী এতে সম্মত হলে স্ত্রীকে বিচ্ছেদ করে দিবে। এটা হলো— ফাসখ (বিচ্ছেদ); যা তালাক নয়। ফাসখের ক্ষেত্রে নারীর ইদ্দত এক হায়েয।
ইতিপূর্বে (14569) নং প্রশ্নের উত্তরে এর বিবরণ গিয়েছে।
দুই:
‘খুলা’ হয়ে যাওয়ার পরপরই স্ত্রী স্বামীর কাছে বেগানা নারীতে পরিণত হবে। তার সাথে একাকী অবস্থান করা বৈধ হবে না। নতুন আকদ (বৈবাহিক চুক্তি) ও মোহারানা ছাড়া তাকে ফিরিয়ে আনাও যাবে না।
তার ইদ্দত তথা এক হায়েয শেষ হয়ে যাওয়ার পর কিংবা সে গর্ভবতী হলে সন্তান জন্ম দেওয়ার পর শরীয়তের শর্তাবলি তথা অভিভাবকের অনুমতি ও দুজন সাক্ষীর উপস্থিতি সাপেক্ষে যে কোনো পুরুষের সাথে সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।
পক্ষান্তরে স্বামী যদি তার স্ত্রীকে এক তালাক বা দুই তালাক দেয় তাহলে তার জন্য ইদ্দত চলাকালীন বাড়ি থেকে বের হওয়া জায়েয নয়। স্বামীর জন্যও ইদ্দত শেষ হয়ে বেগানা হওয়ার আগ পর্যন্ত স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া জায়েয নয়। এর মাঝে নিহিত গূঢ় রহস্য হল হয়তো এতে করে স্বামী স্ত্রীর প্রতি ঝুঁকে পড়বে এবং তাকে ফিরিয়ে নিবে। শরীয়ত ফিরিয়ে নেয়ার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “তোমরা তাদেরকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে বের করে দিও না এবং তারাও বের হয়ে যাবে না; যদি না তারা স্পষ্ট অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। আর এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা; যে আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করে সে নিজেরই উপর অবিচার করে। তুমি জানো না; হতে পারে এরপর আল্লাহ নতুন কোন কিছু ঘটাবেন।”[তালাক: ১]
ইদ্দত চলাকালীন স্ত্রীর জন্য স্বামীর সামনে নিজেকে উন্মোচন করা, স্বামীর জন্য সাজগোজ করা, কথাবার্তা বলা বা একা তার কাছে থাকা জায়েয। কিন্তু স্বামীর জন্য তাকে ফিরিয়ে আনা ছাড়া তার সাথে সহবাস করা জায়েয নয় কিংবা সহবাস করলে ফিরিয়ে আনার নিয়তে করতে হবে।
স্বামী যদি তার স্ত্রীকে তিন তালাক, দুই তালাক কিংবা এক তালাক দেয় আর স্ত্রীর ইদ্দত শেষ হয়ে যায় তাহলে স্ত্রী তার জন্য বেগানা নারীতে পরিণত হবে। তখন তার সাথে একাকী হওয়া, তাকে স্পর্শ করা ও তার দিকে তাকানো বৈধ হবে না।
ইতঃপূর্বে (21413) ও (36548) নং প্রশ্নোত্তরে বিষয়টার বিবরণ গিয়েছে। সে প্রশ্নোত্তরদ্বয় দেখা যেতে পারে।
ইতঃপূর্বে (12667 ) নং প্রশ্নের উত্তরে সব ধরনের ইদ্দতের বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্য রাখা জরুরী: মাসিক হয় এমন তালাকপ্রাপ্তা নারীর ইদ্দত তিন হায়েয; তিন মাস নয়। তিন মাস ইদ্দত হলো এমন কমবয়সী নারীর যার হায়েযের বয়স হয়নি। আর এমন বৃদ্ধা নারীর যার হায়েয হওয়ার আশা নেই। যে প্রশ্নের উত্তর দেখতে বলা হল তাতে আরো বিবরণ রয়েছে।
তিন:
নারীর জন্য বেগানা পুরুষের সাথে বের হওয়া কিংবা তাদের সাথে ইন্টারনেটে কথা বলা জায়েয নয়। এ ব্যাপারে দলীলসমূহের বিবরণ এবং আলেমদের ফতোয়া (34841), (6453) ও (10221) নং প্রশ্নোত্তরসমূহের ইতঃপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুতরাং নারীর জন্য সুন্দর জামাকাপড় পরা, সুগন্ধি লাগানো, অলংকার পরা ইত্যাদি নিষেধ নয়; যেমনিভাবে এগুলো স্বামীর মৃত্যুজনিত ইদ্দত পালনকারী নারীর জন্য নিষিদ্ধ। তবে হারাম হলো— রাজঈ তালাকের ইদ্দত চলাকালীন তার জন্য স্বামীর বাড়ি থেকে বের হওয়া। অন্যদিকে পুরুষদের সাথে বাহিরে বের হওয়া ও তাদের সাথে কথা বলা সকল অবস্থায় হারাম।
আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ।