রবিবার 21 জুমাদাল ছানী 1446 - 22 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

যৌন উত্তেজক ব্যবহারের বিধান

প্রশ্ন

সুখানুভূতি বাড়ানোর জন্য যৌন উত্তেজক ব্যবহার করার বিধান কী— রোযা ভঙ্গকালীন সময়ে। অবশ্যই রমযান মাসে।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

যৌন উত্তেজকসমূহ দুই ধরণের:

১। প্রাকৃতিক। যেমন– খাদ্যদ্রব্য ও নানাবিধ উদ্ভিদ ইত্যাদি। এগুলো গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই; যদি না এতে শারীরিক কোন ক্ষতি সাব্যস্ত না হয়। এমন কিছু সাব্যস্ত হলে সেটা থেকে বিরত থাকতে হবে। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “ক্ষতি করা উচিত নয়, আর ক্ষতির সম্মুখীন হওয়াও উচিত নয়।”[মুসনাদে আহমাদ, সুনানে ইবনে মাজাহ  (২৩৪১), আলবানী ‘সহিহ ইবনে মাজাহ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

‘আল-আদাব আল-শারইয়্যাহ’ গ্রন্থে (২/৪৬৩) বলা হয়েছে: “নাপাক জিনিস, পবিত্র কিন্তু হারাম জিনিস, ক্ষতিকর জিনিস ইত্যাদি ঔষধ হিসেবে ও সুরমা হিসেবে ব্যবহার করা হারাম।”[সমাপ্ত]

আলেমদের বই-পুস্তকে কিছু কিছু খাবারের উপকারিতা এবং এ খাবারগুলো যে যৌনশক্তি বাড়ায় ও সহবাসের শক্তি বৃদ্ধি করে এমন আলোচনা সুপ্রসিদ্ধ। যেমন– নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস: “তোমরা ভারতীয় এই চন্দন (আগর কাঠ) ব্যবহার করবে। কেননা তাতে সাতটি আরোগ্য রয়েছে। [সহিহ বুখারী (৫২৬০) ও সহিহ মুসলিম (৪১০৩)] এর ব্যাখ্যায় ইবনে হাজার (রহঃ) উক্তি। তিনি ভারতীয় চন্দনের উপকারিতার মধ্যে উল্লেখ করেন যে, “এটি পাকস্থলিকে উত্তপ্ত রাখে, কামোদ্দীপনা তৈরী করে, মুখের দাগ দূর করে”।[ফাতহুল বারী থেকে সমাপ্ত]

আলেমগণ মেথি, পেস্তা-বাদাম, carob, তরমুজের বীচি ইত্যাদির ব্যাপারেও একই ধরণের কথা উল্লেখ করেছেন।[দেখুন: আল-আদাব আল-শারইয়্যাহ, পৃষ্ঠা- (৩/৭), (২/৩৭০, ৩৭৫)]

তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- এসব জিনিস ব্যবহারের ক্ষেত্রে কেউ যেন মাত্রা ছাড়িয়ে না যান কিংবা এমন যেন না হয় যে, ব্যক্তি শুধু এসব নিয়ে পড়ে থাকে। কোন কোন খাবার ও পানীয় যৌনশক্তি বাড়ায় সেসব খুঁজে বেড়ানো তার নেশা হয়ে যায়।

২। এ উদ্দেশ্য ব্যবহৃত ঔষধ। এসব ঔষধের মূল বিধান হচ্ছে- হালাল বা বৈধ হওয়া; যদি না এতে হারাম কিছু না থাকে যেমন– নেশাকর কিছু কিংবা শরীরের জন্য ক্ষতিকর কিছু। যদি থাকে তাহলে পূর্বোক্ত হাদিসের কারণে সেগুলো ব্যবহার করা হারাম। কিন্তু, এগুলো তাদেরই ব্যবহার করা উচিত যাদের প্রয়োজন দেখা দেয়; যেমন– যৌন অক্ষমতা, অসুস্থতা কিংবা বার্ধক্য। নির্ভরযোগ্য বিশ্বস্ত ডাক্তারের পরামর্শের ভিত্তিতে এসব ব্যবহার করা উচিত। কেননা এসব ঔষধের কোন কোনটির এমন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে যার ফলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। আর কোন কোন ঔষধের এমন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই তবে যার প্রয়োজন নেই তার জন্যে এগুলো ব্যবহারে কোন কল্যাণ নেই; এমনকি এগুলো ব্যবহারের ফলে যদি সুখানুভূতি বেশি হয় যেমনটি প্রশ্নকারী ভাই বলেছেন তা সত্ত্বেও। সে ব্যক্তি কতই না সুন্দর বলেছেন: “ঔষধ হচ্ছে- সাবানের মত; কাপড় পরিস্কার করে বটে; তবে কাপড়কে নরম করে ফেলে”। তাই এ সকল ঔষধ যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলা ভাল।

আমরা একটা উদাহরণ দিয়ে বলতে চাই বর্তমান যামানায় সবচেয়ে বেশি প্রসারিত ঔষধ হচ্ছে ‘ভায়াগ্রা’। কেউ কেউ কোন প্রকার পরীক্ষা করা ছাড়া ও ডাক্তারের পরামর্শ করা ছাড়া ভায়াগ্রা ব্যবহার করে সাংঘাতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। যায়েয সামরিক হাসপাতালের হার্ট বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আব্দুল্লাহ্‌ আল-নাঈমি এক সেমিনারে যৌন উত্তেজক ঔষধ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন: “এ ঔষধের বহু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া খুব জটিল। কানাডাতে প্রায় ৮,৫০০ লোকের উপর একটি গবেষণা চালানো হয়েছে। এতে দেখা যায় যে, এদের মধ্যে প্রায় ১৬% লোক মাথা ব্যথায় ভুগেন। কেউ কেউ লালবর্ণ ধারণ করা ও তাপ বেড়ে যাওয়ার রোগে ভুগেন; বিশেষতঃ চেহারাতে। কেউ কেউ হজমির সমস্যায় ভুগেন। কারো কারো – বিশেষত যাদের নিম্ন রক্তচাপ আছে- রক্তচাপ এত নীচে নেমে যায় যে, তা ক্ষতিকর পর্যায়ে পৌঁছে যায়।”।

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, যে সব স্বাস্থ্যবান লোকের কোন রোগ নেই; তাদের ক্ষেত্রেও ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেয়া ভাল; এমনকি সেটা স্বল্পমেয়াদী সময়ের জন্যে হলেও। আর যারা নানা প্রকার রোগে আক্রান্ত; বিশেষতঃ হার্টের শিরা ব্লক হয়ে যাওয়া রোগে; তাদের উচিত প্রথমেই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা। কেননা এমন রোগীদের অনেকে ‘নাইট্রেট’ (nitrates) নামক একটা ঔষধ সেবন করে থাকেন যা ‘ভায়াগ্রা’ এর সাথে তীব্র প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে উঠে। ভায়াগ্রা এ ঔষধটিকে রোগীর শরীরে মিশতে বাধা দেয়। যার ফলে এ ঔষধটি কখনও কখনও দশগুণ পর্যন্ত বেড়ে তীব্র নিম্ন রক্ত চাপ তৈরী করে। যার কারণে কখনও কখনও মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে থাকে। কারণ আমরা অনেক মৃত্যুর কথা শুনেছি। অধিকাংশ মৃত্যু এ ধরণের ক্ষেত্রে ঘটেছে। কোন ব্যক্তি হয়তো হার্টের সমস্যায় ভুগছেন কিংবা হার্টের শিরা ব্লক হয়ে যাওয়ায় ভুগছেন এবং এজন্য তিনি নাইট্রেট (nitrates) সেবন করেন। এর সাথে তিনি যখন ভায়াগ্রা সেবন করেন তখন নাইট্রেট এর শক্তি কয়েকগুণ বেড়ে গিয়ে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তৈরী করে।”[সমাপ্ত]

দুই:

যৌন উত্তেজক এ ঔষধগুলো রমযানের রাতের বেলা সেবন করা কিংবা অন্য যে সময়ে পানাহার জায়েয সে সময়ে সেবন করার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। যেহেতু এগুলো সেবন করা বৈধ; সুতরাং যে কোন সময় সেবন করাই বৈধ। আর হারাম হলে যে কোন সময় সেবন করাই হারাম। আল্লাহ্‌ তাআলা রোযা ভাঙ্গার পর নিজের স্ত্রীর সাথে সম্ভোগ করা বৈধ করেছেন। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রী সহবাস হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য আচ্ছাদন এবং তোমরা তাদের জন্য আচ্ছাদন। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা নিজেদের সাথে খেয়ানত করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের তওবা কবূল করলেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন। অতএব, এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে রেখেছেন তা অনুসন্ধান কর। আর পানাহার কর যতক্ষণ না কালো সুতা থেকে ভোরের শুভ্র সুতা পরিস্কার ফুটে উঠে। তারপর রাতের আগমন পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর। আর তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়ো না। এটা আল্লাহর সীমারেখা। সুতরাং তোমরা এর নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবে আল্লাহ মানবজাতির জন্য নিজের আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন; যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারে।”[সূরা বাকারা, আয়াত:১৮৭]

আল্লাহ্‌ই অধিক জ্ঞাত।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব