শুক্রবার 21 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 22 নভেম্বর 2024
বাংলা

শাবান মাসের দ্বিতীয় অর্ধাংশে রমযানের কাযা রোযা পালনে কোন অসুবিধা নেই

প্রশ্ন

প্রশ্ন: রমযান মাসে গর্ভধারণ ও প্রসব করার কারণে আমার বেশ কিছু রমযানের রোযা কাযা ছিল। আলহামদুলিল্লাহ; আমি সে রোযাগুলো কাযা পালন করেছি; তবে অবশিষ্ট সাতদিন ছাড়া। এ সাতটি রোযার মধ্যে তিনটি শাবান মাসের অর্ধেক অতিবাহিত হওয়ার পর পালন করেছি। রমযানের আগেই আমি বাকী রোযাগুলোও পালন করতে চাই। আপনাদের ওয়েব সাইটে আমি পড়েছি যে, ঐ ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো জন্য শাবান মাসের দ্বিতীয় অর্ধাংশে রোযা রাখা জায়েয নেই; যে ব্যক্তির অভ্যাসগত রোযার মধ্যে এদিনগুলো পড়ে। আপনারা আমাকে জানাবেন (আল্লাহ আপনাদেরকে জ্ঞান দান করুন), আমার যে রোযাগুলো অবশিষ্ট আছে আমি কি এখন সে রোযাগুলো রাখব? যদি জবাব না-বোধক হয়; তাহলে আমি যে তিনদিন রোযা রেখেছি সে তিনটি রোযার কি হবে? সেগুলো কি দ্বিতীয়বার কাযা করতে হবে; নাকি কাযা করতে হবে না?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, “শাবান মাসের অর্ধেক পার হলে তোমরা রোযা রেখ না।” [সুনানে আবু দাউদ (৩২৩৭), সুনানে তিরমিযি (৭৩৮) ও সুনানে ইবনে মাজাহ (১৬৫১), আলবানি সহিহ তিরমিযি গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

এ নিষেধাজ্ঞার বাহিরে থাকবে:

১. কোন ব্যক্তির অভ্যাসগত রোযা। যেমন- জনৈক ব্যক্তি প্রতি সোমবার ও বৃহষ্পতিবারে রোযা রেখে থাকেন। তিনি তাঁর এ রোযাগুলো অব্যাহত রাখবেন; এমনকি সেটা যদি শাবান মাসের অর্ধেক অতিবাহিত হওয়ার পরে হয় তবুও। এর দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “তোমাদের কেউ রমযানের একদিন কিংবা কিংবা দুইদিন আগে রোযা রাখবে না। তবে, কেউ যদি কোন রোযা রেখে এসে থাকে তাহলে সে ব্যক্তি সে রোযা রাখতে পারে।”।[সহিহ বুখারী (১৯১৪) ও সহিহ মুসলিম (১০৮২)]

২. যে ব্যক্তি শাবান মাসের অর্ধেক পূর্ণ হওয়ার আগ থেকেই রোযা রেখে আসে এবং অর্ধেকের পরেও লাগাতার রোযা রেখে যায় তাহলে সে ব্যক্তিও এ নিষেধাজ্ঞার অধীনে পড়বে না। এর দলিল হচ্ছে- আয়েশা (রাঃ) এর বাণী: “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম গোটা শাবান মাস রোযা রাখতেন। অল্প কয়টি দিন ছাড়া বাকী শাবান মাস রোযা রাখতেন।”[সহিহ বুখারী (১৯৭০) ও সহিহ মুসলিম (১১৫৬) হাদিসের ভাষ্য ইমাম মুসলিমের]

ইমাম নববী বলেন:

আয়েশার বাণী: “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম গোটা শাবান মাস রোযা রাখতেন। অল্প কয়টি দিন ছাড়া বাকী শাবান মাস রোযা রাখতেন।” দ্বিতীয় কথাটি প্রথম কথাটির ব্যাখ্যাস্বরূপ। তিনি যে বলেছেন ‘গোটা’ শাবান মাস এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- ‘অধিকাংশ’ শাবান মাস।

এ হাদিসটি প্রমাণ করে যে, শাবান মাসের অর্ধেক অতিবাহিত হওয়ার পরও রোযা রাখা জায়েয; তবে যে ব্যক্তি অর্ধেকের আগে থেকেই রোযা চালিয়ে আসবে তার জন্য।

৩. অনুরূপভাবে এ নিষেধাজ্ঞার বাহিরে থাকবে রমযান মাসের কাযা রোযা।

ইমাম নববী (রহঃ) তাঁর ‘আল-মাজমু’ গ্রন্থে (৬/৩৯৯) বলেন:

আমাদের মাযহাবের আলেমগণ বলেন: রমযান মাসের অব্যবহিত পূর্বে ইয়াওমুশ শাক্ক বা সন্দেহের দিন রোযা রাখা সহিহ নয়; এ ব্যাপারে দ্বিমত নেই। তবে কেউ যদি কাযা রোযা, কিংবা মানতের রোযা কিংবা কাফফারার রোযা রাখে তাহলে জায়েয হবে। কেননা, এ দিনে কারণ সম্বলিত নফল রোযা রাখা যদি জায়েয হয়; তাহলে ফরজ রোযা রাখা জায়েয হওয়া অধিক উপযুক্ত। কেননা, সে ব্যক্তির উপর যদি রমযানের শুধু একটি রোযা কাযা থাকে তাহলে সেটা কাযা পালন করা তার উপর ফরযে আইন বা সুনির্দিষ্ট ফরজ হয়ে যায়। যেহেতু কাযা পালন করার সময় একেবারে সংকীর্ণ হয়ে গেছে।[সমাপ্ত]

সন্দেহের দিন হচ্ছে- শাবান মাসের ত্রিশ তারিখ; যদি মেঘের কারণে কিংবা ধুলির কারণে কিংবা এ জাতীয় অন্যকোন কারণে এইদিন চাঁদ দেখা না যায়। এ দিনকে এজন্য সন্দেহের দিন বলা হয় যেহেতু এ দিনটি কি শাবান মাসের শেষ দিন; নাকি রমযান মাসের প্রথম দিন এ বিষয়টি সন্দেহপূর্ণ।

উত্তরের সারাংশ হচ্ছে-

শাবান মাসের দ্বিতীয় অর্ধাংশে রমযানের কাযা রোযা রাখতে কোন অসুবিধা নেই। শাবান মাসের অর্ধেক অতিবাহিত হয়ে গেলে রোযা না রাখার যে নিষেধাজ্ঞা সেই নিষেধাজ্ঞা এই রোযাকে অন্তর্ভুক্ত করবে না।

অতএব, আপনার তিনদিন রোযা রাখা সহিহ এবং রমযান মাস শুরু হওয়ার আগে বাকী দিনগুলোর কাযা রোযা পালন করা আপনার উপর কর্তব্য।

আল্লাহই ভাল জানেন।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব