আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
আমেরিকা ও কানাডাতে বসবাসকারী লোকেরা হাঁটু পর্যন্ত লম্বা কটন বা উলের তৈরী মোজা পরে; মোজার ওপরে জুতা পরে। কিন্তু জুতা টাখনুর উপরে উঠে না। ওজু করার সময় এমন জুতার উপরে মাসেহ করা জায়েয হবে কি? জুতা খুলে ফেলার পরও কি ওজু ঠিক থাকবে? যখন তারা নামাযে যায় তখন জুতা খুলে রাখে। সেক্ষেত্রে ওজু কি অটুট থাকবে?
আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
যদি কোন জুতা পায়ের টাখনু পর্যন্ত ঢেকে রাখে তাহলে সে জুতার উপর মাসেহ করা জায়েয আছে। কেননা সেটা চামড়ার মোজার সমতুল্য।
তবে, পায়ের যতটুকু স্থান ধৌত করা ফরয জুতা যদি ততটুকু স্থান আচ্ছাদিত না করে, সে স্থানটুকু হচ্ছে- পায়ের টাখনুসহ সম্পূর্ণ পায়ের পাতাদ্বয়; সেক্ষেত্রে জমহুর আলেমের মতে, মাসেহ করা জায়েয হবে না।[দেখুন: আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা আল-কুয়েতিয়্যা (৩৭/২৬৪)]
এটি শাইখ বিন বায ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির মনোনীত অভিমত।
শাইখ বিন বায বলেন: চামড়ার মোজা ও কাপড়ের মোজার ওপর মাসেহ করার শর্ত হচ্ছে– যতটুকু স্থান ধোয়া ফরয ততটুকু স্থানকে ঢাকতে হবে।[মাজমুউ ফাতাওয়া বিন বায (১০/১১১), দেখুন: ফাতাওয়াল লাজনা আদ-দায়িমা (৫/৩৯৬)]
দুই:
যদি কেউ যতটুকু স্থান ধৌত করা ফরজ ততটুকু স্থান আচ্ছাদিত করে এমন জুতার উপর মাসেহ করে, এরপর পবিত্র অবস্থায় জুতা খুলে ফেলে সেক্ষেত্রে আলেমগণের সঠিক মতানুযায়ী তার পবিত্রতা নষ্ট হবে না।
ইতিপূর্বে 100112 নং ও 26343 নং প্রশ্নোত্তরে এ মাসয়ালাটি উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে খেয়াল রাখতে হবে এ খুলে ফেলার মাধ্যমে মাসেহ করার যে রুখসত (শিথিলতা) সেটা শেষ হয়ে যাবে। যদি সে দ্বিতীয়বার জুতা পরে ওজু করার ইচ্ছা করে তাহলে তার কর্তব্য হবে জুতা ও মোজা খুলে ফেলা এবং পায়দ্বয় ধৌত করা।
তিন:
যদি সে মোজা পরে মোজার উপর খাটো জুতা পরে -যে জুতা টাখনু ঢাকে না- সেটার তিনটি অবস্থা হতে পারে:
১। শুধু জুতার ওপর মাসেহ করা; ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এটা জায়েয নেই।
২। শুধু মোজাদ্বয়ের ওপর মাসেহ করা। অর্থাৎ জুতা খুলে মোজাদ্বয়ের ওপর হাতদ্বয় দিয়ে মাসেহ করা। এরপর পুনরায় জুতা পরা। এটা জায়েয; এতে কোন অসুবিধা নেই। এ অবস্থায় তিনি জুতা খুলে ফেললেও তার ওজু ভাঙ্গবে না।
৩। জুতা ও মোজা উভয়টির ওপরে মাসেহ করা। এটাও জায়েয।
কেউ যদি খাটো জুতার ওপর মাসেহ করে অবশিষ্ট মাসেহ মোজাদ্বয়ের ওপর করার মাধ্যমে মাসেহ পরিপূর্ণ করে সেক্ষেত্রে এ দুটো জিনিসের সাথে বিধান সম্পৃক্ত হয়ে যাবে। যার ফলে সে ব্যক্তি যদি শুধু জুতা খুলে ফেলে কিংবা মোজাদ্বয়ের সাথে জুতা খুলে ফেলে তার পবিত্রতা ভঙ্গ হবে না; তার জন্য নামায পড়া জায়েয হবে। কিন্তু পরবর্তীতে পাদ্বয় ধৌত করে পরিপূর্ণ ওজু করা ছাড়া জুতা বা মোজার ওপর মাসেহ করা জায়েয হবে না।
স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্রে (৫/৩৯৬) এসেছে: ওজুকারী শুধু মোজার ওপরে মাসেহ করতে পারেন এবং শুধু বুট জুতার ওপরেও মাসেহ করতে পারেন; যদি বুট জুতা টাখনুদ্বয়কে আচ্ছাদন করে এবং পায়ের পাতার চামড়া দেখা না যায়।
আর যদি টাখনুদ্বয় আচ্ছাদন না করে কিন্তু টাখনু ঢেকে রেখেছে এমন মোজা পায়ে থাকে সেক্ষেত্রে ধৌত করার স্থান পর্যন্ত মোজাদ্বয়ের ওপরেও মাসেহ করে তাহলে এ জুতা ও মোজা পরে নামায পরতে পারবে।
শাইখ বিন বায বলেন:
যদি বুট জুতা সেন্ডেলের মত টাখনুসহ পায়ের পাতা না ঢাকে তখন কেউ যদি মোজাসহ বুটের উপর মাসেহ করে সেক্ষেত্রে এ দুটো জিনিসের সাথে হুকুম সম্পৃক্ত হয়ে যাবে...। সে যদি শুধু মোজার ওপর মাসেহ করত তাহলে সেটাই তার জন্য যথেষ্ট হত, তার যখন ইচ্ছা তখন বুট জুতা খুলে ফেলাও জায়েয হত, কিন্তু তার পবিত্রতা অব্যাহত থাকত। যেহেতু মাসেহ করার হুকুম শুধু মোজা এর সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে।[মাজমুউ ফাতাওয়া বিন বায (২৯/৭৩)]
আমরা প্রশ্নকারী ভাই এর এই দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি যে, অগ্রগণ্য মতানুযায়ী চামড়ার মোজার সাথে সম্পৃক্ত বিধি-বিধান কাপড়ের মোজা ও আচ্ছাদনকারী জুতার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।