আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
আমি flat effect নামক এক রোগে ভুগছি। এটি এমন এক রোগ যার ফলে আমি ভালোবাসা, ঘৃণা, রাগ, স্নেহ, মমতা ইত্যাদি মানবিক অনুভূতিগুলো অনুভব করি না। এগুলো ছাড়া অন্য অনুভূতিগুলোও আমি অনুভব করি না। যদি কখনও অনুভব করি সেটা একেবারে কদাচিৎ ও স্বপ্ল সময়ের জন্য। এমনকি আমি আমার পিতামাতার প্রতিও কোন অনুভূতি অনুভব করি না। ১৫ বছর বয়স থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আমার এ অবস্থা। আমার এ রোগের কোন চিকিৎসা নাই। আজীবন আমার এ অবস্থা চলমান থাকবে। আমার প্রশ্ন হলো: শরিয়ত অনুযায়ী আমি কি মুকাল্লাফ (শরয়ি দায়িত্বাধীন); নাকি নয়? আমার উপর কি নামায, রোযা ও যাকাত ফরয?
আলহামদু লিল্লাহ।.
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ও আপনাকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিন। জেনে রাখুন, সুষ্ঠু প্রতিক্রিয়া বা যেটাকে বিজ্ঞানের ভাষায় flat affect বলা হয় এটি নিজে কোন রোগ নয়; বরং একটি উপসর্গ।
এই উপসর্গ প্রকাশের ক্ষেত্রটি প্রশস্ত। এর প্রকাশ personality disorders (ব্যক্তিত্ব বিষয়ক ব্যাধি) এর মাধ্যমে শুরু হয়ে psychotic disorders (মানসিক ব্যাধি) পর্যন্ত পৌঁছতে পারে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে psychotic disorders হয় দূরারোগ্য।
কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার মাধ্যমে রোগের অধিকাংশ উপসর্গকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবপর; বিশেষতঃ মতিভ্রম ও শ্রাবণ হ্যালোসিনেশন এর মত positive symptoms (ইতিবাচক উপসর্গগুলো)-কে।
সাধারণ নীতি হচ্ছে personality disorders কিংবা psychotic disorders গ্রস্ত ব্যক্তি: যতটুকুর বোধ ও বিবেক রাখেন ততটুকুর ক্ষেত্রে তিনি মুকাল্লাফ (শরয়ি দায়িত্বপ্রাপ্ত)।
কেননা শরয়ি দায়িত্বারোপ ও নির্দেশ আরোপিত হওয়ার সম্পর্ক বিবেকের সাথে; অনুভূতির সাথে নয়। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তিন ব্যক্তি থেকে কলম তুলে নেয়া হয়েছে: ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ পর্যন্ত না সে না জাগে, নাবালগ যতক্ষণ পর্যন্ত না যুবক না হয় এবং জ্ঞানহারা ব্যক্তি যতক্ষণ পর্যন্ত না সে জ্ঞান ফিরে পায়”।[সুনানে তিরমিযি (১৪২৩), আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
সুতরাং ব্যক্তি যদি জ্ঞানবান হয় এবং নির্দেশের মর্ম বুঝার শক্তিসম্পন্ন হয় তাহলে সে মুকাল্লাফ (শরয়ি দায়িত্বাধীন); এমনকি সে যদি মানসিক রোগী হয় তবুও; এমনকি সে যদি তার অনুভূতিগুলো হারিয়ে ফেলে তবুও কিংবা কিছু অনুভূতি হারিয়ে ফেলে তবুও।
তাই যে ব্যক্তির রোগের অবস্থা হল অনুভূতিগুলো হারিয়ে ফেলা: তাকে অনুভূতি সম্বন্ধীয় যে দায়িত্ব আল্লাহ্ আরোপ করেছেন সেগুলো থেকে সে অব্যাহতি পাবে তার অক্ষমতার কারণে। যেমন- পিতামাতাকে ভালোবাসা, তাদের আনুগত্য করা কিংবা কাফেরদেরকে ও অন্যায় কাজকে ঘৃণা করা।
আর এই মানসিক ব্যাধির কারণে যদি রোগীর জ্ঞান ও বিবেক লোপ না পায়: তাহলে নামায-রোযা পালন করা তার উপর আবশ্যক। যেহেতু সে এখন পর্যন্ত মুকাল্লাফ (শরয়ি দায়িত্বধীন)।
আর যদি কিছু সময় সে পাগল (জ্ঞানহারা) হয়ে যায় এবং কিছু সময়ে জ্ঞান ফিরে পায়: তাহলে সে জ্ঞান হারানোর সময় ওজরগ্রস্ত (ক্ষমাপ্রাপ্ত)। আবার যখন জ্ঞান ফিরে পায় তখন তার ওজর দূর হয়ে গেছে বিধায় উপস্থিত সময়ের নামায আদায় করা তার উপর আবশ্যক এবং জ্ঞান হারানোর সময় ছুটে যাওয়া নামায কাযা পালন করা আবশ্যক। যেমন delusions ও mania এর মত তীব্র মানসিক উপসর্গের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সময় ঘটতে পারে।
আর জেনে রাখুন হানাফি মাযহাব ছাড়া অবশিষ্ট মাযহাবগুলোর মতে নাবালগ, পাগল ও সাময়িক জ্ঞানহারা ব্যক্তির উপর যাকাত ফরয। এবং ফরয বলা এটি শাইখ ইবনে উছাইমীন (রহঃ) এর অভিমত; যেমনটি আল-শারহুল মুমতি’ গ্রন্থে (৬/১৪) রয়েছে।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।