আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
কিছু ভাই আছেন তারা খুঁটিনাটি বিষয় চেয়ে দোয়া করেন। যেমন কেউ বলেন: ইয়া রব্ব! আমাকে একটি রঙিন টেলিভিশন দিন, একটি ফার্নিসড ফ্ল্যাট দিন, ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি বললাম: আমার আশংকা হচ্ছে যে, এটি দোয়াতে সীমালঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়বে। যখন কোন দোয়াকারী মক্কার হারামে থাকে; বিশেষতঃ রমযান মাসে তখনও দুনিয়া-আখিরাতের কল্যাণ চেয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত দোয়া দিয়ে দোয়া করা উত্তম হয় না? আমি দোয়াতে সীমালঙ্ঘনের বিষয়টি আপনাদের ওয়েবসাইটে খুঁজেও বিস্তারিত কোন উত্তর পাইনি। দয়া করে আপনারা এ বিষয়ে বিস্তারিত জবাব দিবেন।
আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
প্রশ্নকারী বোন, জেনে রাখুন (আল্লাহ্ আমাদেরকে ও আপনাকে তাঁর পছন্দনীয় ও সন্তুষ্টিমূলক আমলের তাওফিক দিন) দোয়া অনেক মানুষের পরিত্যক্ত একটি অস্ত্র। দোয়াই ইবাদত।
নোমান বিন বাশির (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “দোয়াই ইবাদত”। এরপর তিনি তেলাওয়াত করেন:
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ
[غافر: 60]
(তোমাদের প্রভু বলেন: তোমরা আমার কাছে দোয়া কর। আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব। নিশ্চয় যারা আমার ইবাদত থেকে অহংকার করে অচিরেই তারা অপদস্থ হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।)[সূরা গাফের, আয়াত: ৬০][আলবানী বলেছেন: সহিহ। দেখুন: সহিহ সুনানে তিরমিযি (২৬৮৫)]
আপনি যদি এটি জেনে থাকেন তাহলে দোয়ার ব্যাপারে যত্মবান হোন এবং বেশি বেশি দোয়া করুন।
দুই:
নিশ্চয় দোয়ার কিছু আদব রয়েছে এবং কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। নিম্নে আমরা এর কিছু উল্লেখ করব:
১। নিজেকে দিয়ে দোয়া শুরু করা।
২। দোয়া করার সময় হাতদ্বয় উঠানো মুস্তাহাব।
৩। দোয়াকারী পরিপূর্ণ পবিত্রতার উপরে থাকা।
৪। দোয়াকালে কিবলামুখী হয়ে দোয়া করা।
৫। আল্লাহ্র সামনে নিজের মিনতি প্রকাশ করা। ادْعُوا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً (তোমাদের প্রভুর কাছে মিনতিসহ ও সঙ্গোপনে দোয়া কর)[সূরা আরাফ, আয়াত: ৫৫] ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) ‘বাদায়িউল ফাওয়ায়েদ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, দোয়াতে মিনতি না করা সীমালঙ্ঘন।[বাদায়িউল ফাওয়ায়েদ (৩/১২)]
৬। আল্লাহ্র কাছে বারংবার চেয়ে দোয়া করা।
৭। অবিলম্বে দোয়া কবুল করার তলব না করা। সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমের হাদিসে এসেছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমাদের কারো দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাড়াহুড়া করে এবং বলে: আমি দোয়া করেছি; কিন্তু আমার দোয়া কবুল করা হয়নি।”[সহিহ বুখারী (৬৩৪০) ও সহিহ মুসলিম (২৭৩৫)] কোন মুসলিমের তার প্রভুর কাছে দোয়া করার অবস্থা তিনটি বিষয়ের কোন একটি হতে খালি হবে না। যে বিষয়গুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীতে উদ্ধৃত হয়েছে: “কোন মুসলিম আল্লাহ্র কাছে দোয়া করলে এবং তার দোয়াতে কোন পাপ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দোয়া না থাকলে আল্লাহ্ তাকে তিনটি বিষয়ের কোন একটি দান করেন। হয়তো তার দোয়াটি অবিলম্বে কবুল করেন। কিংবা আখিরাতের জন্য সেটি পুঞ্জিভূত করে রাখেন। কিংবা তার থেকে কোন অনিষ্ট দূর করেন। তারা (সাহাবীরা) বলল: তাহলে আমরা বেশি বেশি দোয়া করব। তিনি বললেন: আল্লাহ্ও বেশি বেশি দিবেন।”[মুসনাদে আহমাদ (১০৭৪৯), সুনানে তিরমিযি (৩৫৭৩); আলবানী ‘মিশকাতুল মাসাবীহ’ গ্রন্থে (২১৯৯) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
৮। দোয়ার ক্ষেত্রে আরও যে বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত তা হলো আল্লাহ্র প্রশংসা করা ও তাঁর স্তুতি করা এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দুরুদ পড়া। ফাদালা বিন উবাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে নামাযের মধ্যে দোয়া করতে শুনলেন। কিন্তু সেই ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দুরুদ পড়েনি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: এই ব্যক্তি তাড়াহুড়া করে ফেলেছে। এরপর তাকে ডাকলেন এবং তাকে লক্ষ্য করে বা অন্যকে লক্ষ্য করে বললেন: তোমাদের কেউ যখন নামাযে থাকবে তখন সে আল্লাহ্র প্রশংসা ও স্তুতি দিয়ে শুরু করবে। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দুরুদ পড়বে। এরপর মনে যা ইচ্ছা দোয়া করবে।[আলবানী বলেন: সহিহ হাদিস
তিন:
পক্ষান্তরে, দোয়াতে সীমালঙ্ঘন কয়েকটি বিষয়ের মাধ্যমে হয়ে থাকে; যেমন:
১। দোয়াতে খুঁটিনাটি বিষয় উল্লেখ করা; যেমনটি প্রশ্নকারীর প্রশ্নে এসেছে যে, কেউ বলেন: হে আল্লাহ্! আমাকে ফার্নিসড ফ্ল্যাট দিন, একটি রঙিন টেলিভিশন দিন, ইত্যাদি, ইত্যাদি। বরং শরিয়তসম্মত হলো ব্যাপক অর্থবোধক বাণী দিয়ে দোয়া করা; যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করতেন। তিনি আল্লাহ্র কাছে দুনিয়া-আখিরাতের কল্যাণ চেয়ে দোয়া করতেন।
আব্দুল্লাহ্ বিন মুগাফ্ফাল থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি তার ছেলেকে বলতে শুনেছেন যে, সে বলছে: হে আল্লাহ্! আমি যখন জান্নাতে প্রবেশ করব তখন ডানপাশের সাদা প্রাসাদটি আমি প্রার্থনা করছি। তখন তিনি বললেন: ওহে বৎস! আল্লাহ্র কাছে জান্নাত চাও এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাও। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন: নিশ্চয় আমার উম্মতের মধ্যে এমন একদল লোক হবে যারা পবিত্রতা অর্জন ও দোয়া করার ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করবে।[সুনানে আবু দাউদ (০৯৬), আলবানী ‘সহিহ সুনানে আবু দাউদ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
২। আল্লাহ্ যা হারাম করেছেন তা চেয়ে কিংবা যা কিছু হারামের মাধ্যম তা চেয়ে দোয়া করা। কারণ “উদ্দিষ্ট কার্যাবলীর যে হুকুম কার্যের মাধ্যমসমূহেরও একই হুকুম” যেমনটি উল্লেখ করেছেন ইবনুল কাইয়্যেম তাঁর বাদায়েউল ফাওয়ায়েদ গ্রন্থে (৩/১২)।
সুতরাং যে জিনিস হারামের মাধ্যম সেটি হারাম।
টেলিভিশন ব্যবহারকারী অধিকাংশ মানুষ টেলিভিশনকে হারাম কিছু দেখা ও শুনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকে। তাই এই দোয়াকারী যদি এই শ্রেণীর মানুষ হয় তাহলে এটি দোয়ার ক্ষেত্রে তার সীমালঙ্ঘন। কেননা সেই ব্যক্তি আল্লাহর কাছে এমন কিছু চাচ্ছে যাতে করে এর দ্বারা সে আল্লাহ্র অবাধ্যতা করতে পারে।
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, প্রশ্নোক্ত দোয়াতে দুটো দিক থেকে সীমালঙ্ঘন রয়েছে:
১. খুঁটিনাটি বিষয় চেয়ে দোয়া করার দিক থেকে।
২। হারামের মাধ্যম প্রার্থনা করে দোয়া করার দিক থেকে। “উদ্দিষ্ট কার্যাবলীর যে হুকুম কার্যের মাধ্যমসমূহেরও একই হুকুম”
তবে এটি সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে; যদি দোয়াকারী এটাকে হারামে ব্যবহার করে; যেমনটি অধিকাংশ মানুষের অবস্থা।