আলহামদু লিল্লাহ।.
মুসলমানের জন্য অমুসলিমের ঘরে অবস্থান করা— সে ঘর ক্রয় করা কিংবা ভাড়া নেয়ার মাধ্যমে— জায়েয। সে ক্ষেত্রে ঐ মুসলমানের কর্তব্য হবে ঘরটিকে পবিত্র করে নেয়া; কেননা সে ঘরে শিরক ও পাপকর্মের আলামতগুলো থেকে যেতে পারে; যেমন হারাম ছবি থাকা কিংবা মদজাতীয় কোন নাপাকী থাকা।
আর যদি সে অবস্থান আতিথেয়তার সূত্রে, বন্ধুত্বের সূত্রে কিংবা পরিচিতির সূত্রে হয় তাহলে এমন অবস্থান একান্ত নিরুপায় অবস্থা ও প্রয়োজনের তাগিদে ছাড়া যেন না হয়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণভাবে বলেছেন: “তুমি মুমিন ছাড়া অন্য কারো সাথী হবে না। আর মুত্তাকী ছাড়া অন্য কেউ যেন তোমার খাদ্য না খায়”।[সুনানে তিরমিযি (২৩৯৫), আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীতে আরও এসেছে- “ব্যক্তি তার বন্ধুর ধর্মের অনুসারী হয়। কাজেই, তোমাদের দেখা উচিত— কার সাথে বন্ধুত্ব করছো।”[সুনানে আবু দাউদ (৪৮৩৩), আলবানী ‘সহিহ আবু দাউদ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে হাসান আখ্যায়িত করেছেন]
আওনুল মাবুদ গ্রন্থে বলা হয়েছে— ব্যক্তি যেন ভেবে-চিন্তে দেখে সে কার সাথে বন্ধুত্ব করছে: অতএব যার দ্বীনদারি ও চরিত্রের প্রতি সে সন্তুষ্ট হয় তার সাথে বন্ধুত্ব গড়বে। আর যদি তার দ্বীনদারি ও চরিত্রের প্রতি সন্তুষ্ট না হয় সে যেন তাকে পরিহার করে। কারণ মানব প্রকৃতি প্রভাবিত হয়ে থাকে।[সমাপ্ত]
আর অমুসলিমদের ঘরে নামায আদায় করতে সমস্যা নেই; যদি যে স্থানটিতে নামায পড়ছে সে স্থানটি পবিত্র হয় এবং সে স্থানে কোন ছবি বা মূর্তি না থাকে; যেগুলোকে তারা সম্মান করে থাকে, পূজা করে থাকে। যেহেতু এ সংক্রান্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীটি সাধারণ: “আমার জন্য গোটা জমিনকে সেজদার স্থান ও পবিত্র করা হয়েছে। সুতরাং আমার উম্মতের যে কোন ব্যক্তি যেখানে থাকুক না কেন নামাযের সময় হলে সে যেন নামায আদায় করে।”[সহিহ বুখারী (৩২৩) ও সহিহ মুসলিম (৮১০)]
অতএব, গোট পৃথিবী সেজদারস্থান। মুসলিমের জন্য গোটা পৃথিবীতে নামায পড়া জায়েয। তবে দলিল-প্রমাণে যদি বিশেষ কোন স্থানকে বাদ দেয় সেস্থানগুলো ছাড়া; যেমন- কবরস্থান, হাম্মামখানা ও উট বাঁধারস্থান ইত্যাদি। আরও জানতে দেখুন 13705 ও 140208 নং প্রশ্নোত্তর।
ইবনে আব্দুল বার্র ‘তামহীদ’ নামক গ্রন্থে (৫/২২৭) বলেন:
ইমাম বুখারী উল্লেখ করেছেন যে, ইবনে আব্বাস (রাঃ) বিধর্মীদের উপাসনালয়ে নামায পড়তেন; যদি সেখানে মূর্তি না থাকত। আইয়ুব, উবাইদুল্লাহ বিন উমর ও অন্যান্যরা নাফে থেকে তিনি উমর (রাঃ) এর আযাদকৃত দাস আসলাম থেকে বর্ণনা করেন যে, উমর (রাঃ) যখন শামে আসলেন তখন খ্রিস্টানদের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি তাঁকে নিমন্ত্রণ করল। তখন উমর (রাঃ) বললেন: আমরা তোমাদের গীর্জাগুলোতে প্রবেশ করি না ও সেখানে নামায আদায় করি না সেগুলোতে ছবি ও মূর্তি থাকার কারণে।
সুতরাং বুঝা গেল, উমর (রাঃ) ও ইবনে আব্বাস (রাঃ) কেবল মূর্তি থাকার কারণে সেখানে নামায আদায় করাকে মাকরূহ মনে করতেন।
অতএব, নামাযের স্থানে যদি মূর্তি বা এ জাতীয় কিছু না থাকে এবং স্থানটি পবিত্র হয় তাহলে সেখানে নামায পড়া জায়েয।
আল্লাহই ভাল জানেন।