শুক্রবার 21 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 22 নভেম্বর 2024
বাংলা

চর্মরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি কি তায়াম্মুম করতে পারবে?

প্রশ্ন

আমার চর্মরোগ (একজিমা) আছে। এর চিকিৎসা পুরোপুরি করা হয়নি। যার কারণে আমি দৈনিক মাত্র পাঁচবার ওযু করি। সকল উপায়ে আমি চেষ্টা চালিয়েছি; কিন্তু কোনো কাজে আসেনি। যদি ওযু করলে আমার চামড়ায় পাঁচড়া খুব বাজেভাবে বেড়ে যায়, তাহলে আমি কী করব?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

আল্লাহ তায়ালা বলেন: “আল্লাহ কোনো ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাহিরে দায়িত্ব দেন না।”[বাকারা: ২৮৬]

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আমি যদি তোমাদেরকে কোনো কিছু করতে নিষেধ করি তাহলে তোমরা তা পরিত্যাগ করো। আর যদি কোনো কিছুর আদেশ দিই তাহলে সাধ্যমত তা করো।”[বুখারী (৬৮৫৮), মুসলিম (১৩৩৭)]

পানি দিয়ে ওযু করার আবশ্যকতার ব্যাপারে আল্লাহর স্পষ্ট নির্দেশ থাকার পরও আল্লাহ তায়ালা অসুস্থ ব্যক্তির জন্য পানি দিয়ে ওযু করার বদলে তায়াম্মুমের সুযোগ দিয়েছেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন:

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাযের ধারেকাছেও যেয়ো না, যতক্ষণ না যা বল তা বুঝতে পারো এবং (দৈহিক) অপবিত্র অবস্থায়ও না, যতক্ষণ না গোসল করো, তবে সফরে থাকলে ভিন্ন কথা। আর যদি তোমরা অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাকো অথবা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে (মলমূত্র ত্যাগ করে) আসে কিংবা তোমরা নারী-সম্ভোগ করো এবং (গোসল করার জন্য) পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে এবং (যথারীতি) মুখমণ্ডল ও হাত মুছে নিবে। নিশ্চয় আল্লাহ মার্জনাকারী ও ক্ষমাশীল।”[নিসা: ৪৩]

শাইখ মুহাম্মাদ আস-সালেহ আল-উছাইমীন বলেন:

“তার বক্তব্য: “কিংবা এটি (পানি) ব্যবহার করলে বা অন্বেষণ করতে গেলে শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা করে” অর্থাৎ যদি পানি ব্যবহার করলে তার শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে সে অসুস্থ বলে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে সে আল্লাহর এই বাণীর সার্বিকতার অন্তর্ভুক্ত হবে: “যদি তোমরা অসুস্থ হও অথবা সফরে থাকো”[মায়েদা: ৬]

অনুরূপভাবে কারো ওযুর অঙ্গসমূহে যদি ক্ষত থাকে কিংবা গোসলের ক্ষেত্রে পুরো শরীরে ক্ষত থাকে এবং (পানির স্পর্শে) শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করে তাহলে সে তায়াম্মুম করতে পারবে।”[আশ-শারহুল মুমতি (১/৩৭৮, ৩৭৯) ইবনুল জাওযী প্রকাশনীর ছাপা]

যদি সে চামড়ার উপরে এমনভাবে পানি ব্যবহার করতে পারে যাতে করে চামড়া ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তাহলে সেটাই করবে। এক্ষেত্রে অঙ্গটি ঘষা বা প্রকৃষ্টভাবে ধৌত করা শর্ত নয়।

শাইখ মুহাম্মাদ আস-সালেহ আল-উছাইমীন বলেন:

“অনুরূপভাবে কারো নাকে যদি সাইনাসের কারণে অতিরিক্ত ফাঁপা অংশ থাকে তাহলে সে ব্যক্তি নাকে পানি দেওয়ার ক্ষেত্রেও বাড়াবাড়ি করবে না। কারণ বেশি পরিমাণে পানি দিলে সেখানে পানি জমে সেটা পঁচতে পারে। এর থেকে খারাপ গন্ধ সৃষ্টি হবে। সেই ব্যক্তি অন্য কোন রোগে আক্রান্ত হতে পারেন অথবা শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। এমন ব্যক্তিকে বলা হবে: আপনি নাকের দুই ছিদ্রের ভেতরে পানি প্রবেশ করানোর মাধ্যমে নাকে পানি নেয়ায় যথেষ্ট।”[আশ-শারহুল মুমতি (১/২১০), ইবনুল জাওযী প্রকাশনের ছাপা]

তিনি আরো বলেন:

“কারো নাকে যদি সাইনাস থাকে এবং সে যদি অতি মাত্রায় নাকে পানি দেয় তাহলে পানি সেখানে জমে ব্যথা করে কিংবা পানি পঁচে গিয়ে পুঁজ হয় কিংবা অন্য রোগ হয়; এমতাবস্থায় আমরা তাকে বলব: নিজের ক্ষতি রোধ করার জন্য আপনি অতিমাত্রায় পানি নিবেন না।”[আশ-শারহুল মুমতি (১/১৭২), ইবনুল জাওযী প্রকাশনের ছাপা]

সুতরাং যদি ওযু করলে আপনার চামড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা সুস্থ হতে দেরী হয় তাহলে আপনি তায়াম্মুম করবেন। এতে কোনো সমস্যা নেই।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব