বৃহস্পতিবার 6 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 7 নভেম্বর 2024
বাংলা

যে নারী নিফাসের রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কয়েক ফোঁটা রক্ত দেখেছেন এমতাবস্থায় তার রোযার কী হুকুম হবে?

প্রশ্ন

আমি শাবান মাসে সন্তান প্রসব করেছি। এরপর আমি এক রোগে আক্রান্ত হয়েছি। যার ফলে শুধু তিনদিন নিফাসের রক্তস্রাব হয়ে আর হয়নি। এরপর স্রাব বন্ধ হয়ে গেছে। তাই আমি গোসল করে নামায পড়া শুরু করেছি। শাবান শেষ হয়ে রমযান শুরু হয়েছে কিন্তু আর কোন রক্তস্রাব যায়নি। রমযান মাসের এক সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পর ডাক্তার আমাকে কিছু এন্টিবায়েটিক ঔষধ দিয়েছেন। আমি রোযা রাখতাম। সারাদিন কোন রক্ত যেত না মাগরিবের পূর্বে সামান্য কয়েক ফোঁটা স্রাব যেত। গোটা রমযান মাস এভাবে ছিলাম। আমি কি পবিত্র হয়েছি; নাকি হইনি তা জানতে পারিনি। কিন্তু আমি সারা মাস রোযা রেখেছি। আমি কি রোযাগুলো পুনরায় রাখব; নাকি রাখা লাগবে না?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

নিফাসের সর্বনিম্ন কোন সময়সীমা নেই। কোন নারী যদি সন্তান প্রসবের পর পবিত্র হয়ে যান এমন কি যদি সেটা কয়েক দিনের মধ্যেও হয় তাহলে তিনি গোসল করে নামায ও রোযা পালন করবেন।

শাইখ বিন উছাইমীন (রহঃ) বলেন:

"যদি কোন নারী সন্তান প্রসব করার একদিন পর বা কয়েক দিন পর পবিত্র হয়ে যান তাহলে তিনি পবিত্র; তার উপর নামায ফরয হবে, তিনি রোযা রাখলে সহিহ হবে এবং তার স্বামীর জন্য তার সাথে সহবাস করা জায়েয হবে।"[ফাতাওয়া নুরুন আলাদ- দারব থেকে সমাপ্ত]

হায়েয বা নিফাস থেকে পবিত্রতা দুটো পদ্ধতির যে কোন একটির মাধ্যমে জানা যায়:

১। সাদাস্রাব নির্গত হওয়া।

২। পূর্ণভাবে স্থানটি শুকিয়ে যাওয়া; যাতে করে রক্তস্রাব, হলদেটে স্রাব বা বাদামী স্রাবের কোন চিহ্ণ না থাকে।

দুই:

নিফাস থেকে পরিপূর্ণভাবে পবিত্র হয়ে যাওয়ার পর সামান্য কয়েক ফোটা রক্তপাত হওয়া 'নিফাস' হিসেবে গণ্য হবে না। সুতরাং এমতাবস্থায় সে নারী নামায পড়বেন ও রোযা রাখবেন।

স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্রতে (খণ্ড-২, ৪/২৫৯) এসেছে:

"তার স্ত্রী পবিত্র রমযানের ৯ তারিখে সন্তান প্রসব করেছে। সন্তান প্রসবের ৯ দিন পর রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে গেছে। তখন সে গোসল করে নামায ও রোযা পালন শুরু করেছে। কিন্তু সে খেয়াল করেছে যে, রাত হলে কয়েক ফোঁটা রক্ত বের হয়। দিনের বেলায় কিছু দেখে না। এমতাবস্থার হুকুম কী? তার নামায ও রোযা কি সহিহ?

জবাব: যদি এ নারী নির্মল পরিচ্ছন্নতা দেখতে পান তাহলে তার নামায ও রোযা সহিহ। কেননা তিনি পবিত্র নারীদের হুকুমের অধিভুক্ত। তিনি রাতের বেলা যে সামান্য কয়েক ফোঁটা রক্ত দেখেন সেটা নিফাস হিসেবে গণ্য হবে না এবং সেটাকে নিফাসের রক্তস্রাবও বলা হয় না। সুতরাং এ ক্ষেত্রে নিফাসের হুকুম প্রযোজ্য হবে না।"[সমাপ্ত]

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: "জনৈক নারী নিফাসের দুই মাস পর, পবিত্র হওয়ার পর তিনি কিছু ছোট ছোট রক্তের ফোঁটা দেখতে পান। এ নারী কি রোযা রাখবেন না এবং নামায পড়বেন না? নাকি কী করবেন?

জবাবে তিনি বলেন: যদি কোন নারী হায়েয ও নিফাস থেকে পবিত্র হন এবং নিশ্চিত পবিত্রতা দেখতে পান; হায়েয থেকে পবিত্রতা দ্বারা আমি বুঝাতে চাচ্ছি সাদাস্রাব নির্গত হওয়া। সাদাস্রাব হচ্ছে-- সাদা পানি যা নারীরা চিনতে পারেন; তাহলে এ সাদাস্রাব দেখা যাওয়ার পরে যদি বাদামী বা হলদেটে কিছু দেখা যায় কিংবা রক্তের ফোঁটা বা ভেজা স্যাতস্যাতে অনুভুত হয়-- এগুলোর কোনটি হায়েয নয়। এগুলো নামায ও রোযা পালনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক নয় এবং স্ত্রীর সাথে স্বামীর সহবাসের ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধক নয়। কেননা সেটা হায়েয নয়। উম্মে আতিয়্যা বলেন: 'আমরা হলদেটে ও বাদামী স্রাবকে কিছুই মনে করতাম না।'[সহিহ বুখারী, আবু সুনানে দাউদের আরেকটু বাড়তি টেক্স হল: "পবিত্রতার পরে"। হাদিসটির সনদ সহিহ]

পূর্বোক্ত আলোচনার আলোকে আমরা বলব: নিশ্চিত পবিত্রতা পর এ ধরণের কিছু ঘটলে তাতে কোন অসুবিধা নেই। এগুলো নারীর নামায, রোযা ও স্বামীর সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হবে না। তবে পবিত্রতা দেখার আগে তাড়াহুড়া করা যাবে না। কারণ কিছু কিছু নারী রক্ত শুকিয়ে গেছে দেখলেই পবিত্র হওয়ার আগে তাড়াতাড়ি গোসল করে ফেলেন। এ কারণে মহিলা সাহাবীগণ উম্মুল মুমেনীন আয়েশা (রাঃ) এর কাছে কুরসুফ পাঠাতেন। অর্থাৎ রক্তযুক্ত তুলা পাঠাতেন। তখন তিনি তাদেরকে বলতেন: আপনারা তাড়াহুড়া করবেন না; যতক্ষণ পর্যন্ত না সাদাস্রাব দেখতে পান।"[সমাপ্ত]

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব