আলহামদু লিল্লাহ।.
হাঁচিদাতা ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা এবং যে তার জন্য রহমতের দোয়া করেছে তার জন্য দোয়া করা একাধিক ভাষ্যে বর্ণিত হয়েছে:
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “তোমাদের কেউ যখন হাঁচি দেয় সে যেন বলে: الْحَمْدُ لِلَّهِ (সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য)। তার ভাই বা সাথী যেন তাকে বলে: يَرْحَمُكَ اللَّهُ (আল্লাহ আপনার প্রতি রহমত করুন)। আর যখন সে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে তখন হাঁচিদাতা তাকে বলবে: يَهْدِيكُمُ اللَّهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ (আল্লাহ আপনাদেরকে সুপথে পরিচালিত করুন এবং আপনাদের অবস্থা সংশোধন করে দিন)।”[সহিহ বুখারী (৬২২৪)]
ইমাম বুখারী তার ‘আল-আদাবুল মুফরাদ’ বইয়ে (পৃ. ২৪৯) বলেন: এই হাদীসটা উক্ত অধ্যায়ে বর্ণিত সর্বাধিক শুদ্ধ সাব্যস্ত বর্ণনা।[সমাপ্ত]
আবু দাউদ (৫০৩৩) আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সনদে সংকলন করেছেন তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “তোমাদের কেউ যখন হাঁচি দেয় সে যেন বলে: الْحَمْدُ لِلَّهِ عَلَى كُلِّ حَالٍ (সর্বাবস্থায় সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য)। তার ভাই অথবা সাথী যেন বলে: يَرْحَمُكَ اللَّهُ (আল্লাহ আপনার প্রতি রহমত করুন)। তখন সে বলবে: يَهْدِيكُمُ اللَّهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ (আল্লাহ আপনাদেরকে সুপথে পরিচালিত করুন এবং আপনাদের অবস্থা সংশোধন করে দিন)।” শাইখ আলবানী সহীহ আবু দাউদে এ হাদিসকে সহীহ বলেছেন।
আবু দাউদ (৫০৩১) ও তিরমিযী (২৭৪০) সালেম ইবনে উবাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে সংকলন করেন যে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কেউ যখন হাঁচি দেয় তখন সে যেন বলে: الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (সকল প্রশংসা জগৎসমূহের প্রভু আল্লাহর জন্য)। যিনি জবাব দিবেন তিনি যেন বলেন: يَرْحَمُكَ اللَّهُ (আল্লাহ আপনার প্রতি রহমত করুন)। তখন সে যেন বলে: يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ (আল্লাহ আমাদেরকে ও আপনাদেরকে ক্ষমা করুন)।”[শাইখ আলবানী তার যায়ীফু আবী দাউদ কিতাবে হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন। তবে তিনি তার ‘সহীহুল আদাবিল মুফরাদ’ বইয়ে (৭১৫) হাদিসটিকে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বাণী হিসেবে সহিহ বলেছেন]
আবু জামরা (রাঃ) বলেন: ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর হাঁচির জবাব দেয়া হলে আমি তাকে বলতে শুনেছি: عَافَانَا اللهُ وَإِيَّاكُمْ مِنَ النَّارِ ، يَرْحَمُكُمُ اللهُ (আল্লাহ আমাদেরকে ও আপনাদেরকে জাহান্নাম থেকে নিরাপদে রাখুন, আল্লাহ আপনার প্রতি দয়া করুন)। শাইখ আলবানী তার সহীহুল আদাবিল মুফরাদ বইয়ে (৯৫৫) এই বর্ণনাটিকে সহীহ বলেছেন।
ইমাম মালেক তার মুয়াত্তা বইয়ে (১৮০০) বর্ণনা করেন নাফে থেকে তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে। ইবনে উমর হাঁচি দেওয়ার পর তাকে যদি বলা হত: يَرْحَمُكَ اللَّهُ (আল্লাহ আপনার প্রতি রহমত করুন) তিনি বলতেন: يَرْحَمُنَا اللَّهُ وَإِيَّاكُمْ، وَيَغْفِرُ لَنَا وَلَكُمْ (আল্লাহ আমাদেরকে ও আপনাদেরকে রহমত করুন। তিনি আমাদেরকে ও আপনাদেরকে ক্ষমা করুন)।
নববী তার ‘শারহু মুসলিম’ বইয়ে বলেন:
“কাযী বলেন: আলেমরা আলহামদুলিল্লাহ বলার পদ্ধতি ও এর জবাব দেওয়ার পদ্ধতির ব্যাপারে মতভেদ করেছেন। এ ব্যাপারে নানা রকম আছার (সাহাবীদের উক্তি, আমল) বর্ণিত হয়েছে। কারো কারো মতে সে বলবে: الْحَمْد لِلَّهِ (সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য)। কারো কারো মতে, الْحَمْد لِلَّهِ رَبّ الْعَالَمِينَ (সকল প্রশংসা সৃষ্টিকূলের রব আল্লাহর জন্য)। কারো কারো মতে, الْحَمْد لِلَّهِ عَلَى كُلّ حَال (সর্বাবস্থায় সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য)। ইবনে জারীর বলেন: তার জন্য সবগুলো থেকে যে কোনোটা বাছাই করার সুযোগ রয়েছে। এটাই বিশুদ্ধ মত। আলেমগণ সবাই এই মর্মে ইজমা করেছেন যে, সে আলহামদুলিল্লাহ বলার ব্যাপারে আদিষ্ট।
হাঁচির জবাবদাতার জবাবে হাঁচিদাতা কী বলবে সেটা নিয়ে তারা মতভেদ করেছেন। কারো কারো সে বলবে: يَهْدِيكُمْ اللَّه وَيُصْلِح بَالكُمْ (আল্লাহ আপনাদেরকে সুপথে পরিচালিত করুন এবং আপনাদের অবস্থা সংশোধন করে দিন)। কারো কারো মতে সে বলবে: يَغْفِر اللَّه لَنَا وَلَكُمْ (আল্লাহ আমাদেরকে ও আপনাদেরকে ক্ষমা করুন)। মালেক ও শাফেয়ী বলেন: এই দুটির মাঝে তাকে এখতিয়ার দেওয়া হবে। এটাই সঠিক। এ দুটোর ব্যাপারে সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে।”[সংক্ষেপে সমাপ্ত]
সারকথা হল: আল্লাহ্র প্রশংসা করণ বিভিন্ন ভাষ্যে বর্ণিত হয়েছে:
- আলহামদুলিল্লাহ।
- আলহামদুলিল্লাহি ‘আলা কুল্লি হাল।
- আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামীন।
জবাব প্রদানও বিভিন্ন ভাষ্যে বর্ণিত হয়েছে:
- ইয়াহদীকুমুল্লাহু ওয়া-ইউসলিহু বালাকুম।
- ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়া-লাকুম।
- আফানাল্লাহু ওয়া-ইয়্যাকুম মিনান্নার, ইয়ারহামুকুমুল্লাহ।
- ইয়ারহামুনাল্লাহু ওয়া-ইয়্যাকুম, ওয়া ইয়াগফিরু লানা-ওয়ালাকুম।
এই সবগুলো সহিহ ও সাব্যস্ত। একজন মুসলিম যেটা ইচ্ছা সেটা বাছাই করে নিতে পারেন।
আল্লাহ সর্বজ্ঞ।