শনিবার 20 শাওয়াল 1446 - 19 এপ্রিল 2025
বাংলা

হেলথ ইন্সুরেন্স ও হাসপাতালের ইন্সুরেন্স বিভাগে চাকুরী করার হুকুম

প্রশ্ন

আমি একটি প্রাইভেট হাসপাতালের বীমা (ইন্সুরেন্স) বিভাগে নারী চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। এখানে আমার কাজ হলো: যে রোগীকে পরীক্ষা অথবা অস্ত্রোপচার করা প্রয়োজন তার ডাক্তারি রিপোর্টগুলো বীমা কোম্পানিকে পাঠানো, যাতে করে ঐ কোম্পানি বীমা থেকে তার চিকিৎসার কাজগুলো সম্পন্ন করার ব্যাপারে সম্মতি প্রদান করে। এ কাজটি হারাম; নাকি হালাল? আপনাদের কাছ থেকে ব্যাখ্যা আশা করছি।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

বাণিজ্যিক বীমার সকল রূপ হারাম; সেটি জীবন বীমা হোক কিংবা স্বাস্থ্য বীমা হোক কিংবা সম্পদের উপর বীমা হোক। তবে দুই অবস্থায় বীমার মাধ্যমে লেনদেন করা জায়েয হবে:

প্রথম অবস্থা: যদি ব্যক্তিকে সেটি করতে বাধ্য করা হয়। যেমন: যদি কাউকে গাড়ির বীমা করতে বাধ্য হয় অথবা যদি কোনো কোম্পানি তার কর্মচারীদেরকে স্বাস্থ্য বীমা করতে বাধ্য করে। তখন আদেশদাতা ও বাধ্যকারীর পাপ হবে।

দ্বিতীয় অবস্থা: যদি ব্যক্তি এমন জরুরী (জীবন বিপন্ন) পরিস্থিতিতে পড়ে যে, স্বাস্থ্য বীমা ছাড়া কোন উপায় না থাকে কিংবা এমন তীব্র প্রয়োজনে পড়ে যে বীমা করা ছাড়া খরচ বহন করা তার জন্য সম্ভব না হয়; সেক্ষেত্রে একদল আলেমের মতে এমন প্রয়োজনে স্বাস্থ্য বীমায় লেনদেন করা বৈধ হয়ে যায়। যেহেতু এই বীমা হারাম হওয়ার কারণ হলো অনিশ্চয়তা ও জুয়া হওয়া; সুদ নয়। আর যে বিষয়টি এমন, সেটি প্রয়োজনের মুহূর্তে জায়েয।

অনিশ্চয়তার দিক হলো: বীমাকারী যে পরিমাণ অর্থ প্রদান করে সে জানে না যে, সে কি এ পরিমাণ অর্থের সমান চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করবে, নাকি এর চেয়ে বেশি, নাকি এর চেয়ে কম।

বীমার কিছু প্রকার রয়েছে যেগুলোতে একই সাথে অনিশ্চয়তা ও সুদ উভয়টা বিদ্যমান। যেমন: জীবনবীমা। কেননা যিনি এই বীমা করেন তিনি কত কিস্তি প্রদান করবেন এর সংখ্যা তিনি জানেন না। তবে তিনি যা প্রদান করেছেন এর বিপরীতে তিনি এর চেয়ে বেশি পাবেন।

প্রয়োজনের কারণে স্বাস্থ্য বীমার বৈধতার পক্ষে মত দিয়েছেন ড. আলী মুহিউদ্দীন আল-কাররাহ দাগী, ড. আব্দুর রহমান ইবনে সালেহ আল-আত্বরাম, ড. ইউসুফ আশ-শুবাইলী, ড. খালেদ আদ-দু’আইজী।

অনিশ্চয়তা বা প্রতারণা থাকার কারণে যে বিষয়টি হারাম, সেটি প্রয়োজনে বৈধ হয় এ মর্মে আলেমদের বক্তব্য নিম্নরূপ:

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘অনিশ্চয়তার বিক্রি জুয়ার অনুরূপ। প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে ও কল্যাণের প্রাবল্য থাকলে এর কিছু রূপ বৈধ হয়।’[মাজমুউল ফাতাওয়া (১৪/৪৭১)]

তিনি বলেন: ‘বাইয়ুল গারার (অনিশ্চয়তার বিক্রি) নিষিদ্ধ করা হয়েছে কেননা এটি জুয়ার এমন একটি প্রকার যা অন্যায়ভাবে সম্পদ ভক্ষণের দিকে নিয়ে যায়। যদি এর বিপরীতে আরো বড় ক্ষতি এসে পড়ে; তাহলে ঐ বড় ক্ষতি এটাকে বৈধ করে দেয়। যাতে করে ছোট ক্ষতি সহ্য করার মাধ্যমে বড় ক্ষতিকে প্রতিহত করা যায়। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।’[সমাপ্ত][মাজমুউল ফাতাওয়া (২৯/৪৮৩)]

তিনি আরো বলেন: ‘গারার তথা অনিশ্চয়তার ক্ষতি সুদের চেয়ে লঘু। তাই প্রয়োজন পড়লে এতে শিথিলায়ন করা হয়। কারণ এটাকে হারাম গণ্য করার ক্ষতি অনিশ্চয়তার ক্ষতির চেয়ে গুরুতর। যেমন:

  • বিল্ডিং কেনা; যদিও আপনি দেয়াল ও ভিত্তির ভেতরের জিনিসগুলো কী সেটা জানেন না।
  • গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারিণী প্রাণী বিক্রি করা; যদিও আপনি গর্ভস্থিত প্রাণীর ও দুধের পরিমাণ জানেন না। যদিও গর্ভের প্রাণীকে পৃথকভাবে বিক্রি করা এবং অধিকাংশের মতে (ওলানের) দুধ পৃথকভাবে বিক্রি করা নিষিদ্ধ।
  • ফল পরিপক্ক হওয়ার পর ফল বিক্রি করা (পাকার বিষয়ে অনিশ্চয়তা বিদ্যমান)। সুন্নাহর প্রমাণ অনুসারে এমন ফল গাছে রেখে দেওয়া লাগলেও বিক্রয় সঠিক। অধিকাংশ আলেমই এই মত পোষণ করেছেন। যেমন: মালেক, শাফেয়ী ও আহমদ। এমনকি পরিপক্কতার পূর্ণতার জন্য উপাদানগুলো যদি তখনও সৃষ্টি না হয় তদুপরি।
  • খেজুরের রেণু প্রবিষ্ট করানো হয়েছে এমন খেজুর গাছ যে ব্যক্তি বিক্রি করবে, তার কাছে এর ক্রেতা খেজুরও নেওয়ার শর্ত করতে পারবেন এমন বৈধতা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়েছেন। এ লেনদেনের ক্ষেত্রে ক্রেতা ফল পরিপক্ক হওয়ার আগেই যেন ফল কিনে ফেলল। কিন্তু সেটি মূল (গাছ) ক্রয় করার অনুবর্তী হিসেবে। এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, মূলের অনুবর্তী ও অধিভুক্তের ক্ষেত্রে যৎ সামান্য অনিশ্চয়তা বৈধ যা অন্য ক্ষেত্রে বৈধ নয়।’[আল-ফাতাওয়াল-কুবরা: (৪/২১)]

দুই:

হাসপাতালের বীমা বিভাগে চিকিৎসক হিসেবে চাকুরী করা বৈধ মর্মে আমাদের কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে। এটি হারাম কাজে সহায়তা বলে গণ্য হবে না। কারণ রোগীদের কারো কারো বীমা প্রয়োজনীয়, কেউ এটি করতে বাধ্য, কারো কোম্পানি তার ও তার পরিবারের জন্য বীমা নিতে বাধ্য করেছে। আর এদের সবার জন্য স্বাস্থ্য বীমা থেকে উপকৃত হওয়া বৈধ; যেমনটি ইতঃপূর্বে বলা হয়েছে। বাকি রইল এমন ব্যক্তি যে এর মুখাপেক্ষী নয়। আর এ ধরনের ব্যক্তিকে আলাদা করা দুরূহ। আমরা আল্লাহর প্রার্থনা করছি, তিনি যেন এমন ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব