আলহামদু লিল্লাহ।.
ইন্টারনেটে ক্রয় করার বিভিন্ন রূপ এবং বিলম্বে মূল্য পরিশোধ করা
ইন্টারনেটের মাধ্যমে লেনদেনের একাধিক রূপ হয়েছে। কোন কোন লেনদেনের ক্ষেত্রে দেরীতে পণ্য গ্রহণ করার সময় মূল্য পরিশোধ করা সঠিক; আর কোন কোন লেনদেনের ক্ষেত্রে সঠিক নয়। বিস্তারিত বিবরণ নিম্নরূপ:
১। সুনির্দিষ্ট একটি পণ্য ক্রয় করা। যেমন যে ব্যক্তি তার নির্দিষ্ট গাড়ী বা নির্দিষ্ট মোবাইল সেট বিক্রি করছে তার থেকে ক্রয় করা। তার জন্য উক্ত পণ্যটি নগদ মূল্যে বা বাকীতে বিক্রি করা জায়েয আছে। কেননা অগ্রগণ্য মতানুযায়ী নির্দিষ্ট কোন পণ্য অনুপস্থিত হলেও সেটি বিক্রি করা জায়েয; এমনকি সেই পণ্যের বিবরণ উল্লেখ না করা হলেও। পণ্যটি দেখার পর ক্রেতার অপশন থাকবে।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন: “অনুপস্থিত পণ্য বিক্রি সংক্রান্ত মাসয়ালা। ইমাম আহমাদ থেকে এই ব্যাপারে তিনটি উক্তি বর্ণিত আছে:
এক: কোনভাবে এই বেচাবিক্রি সঠিক নয়। এটি ইমাম শাফেয়ির নতুন অভিমতের মত।
দুই: বিবরণ না দিলেও বেচাবিক্রি সঠিক হবে। পণ্যটি দেখার পর ক্রেতার (হ্যাঁ বা না বলার) অপশন থাকবে। এটি ইমাম আবু হানিফার অভিমতের মত। আবার ইমাম আহমাদ থেকে: অপশন না থাকার কথাও বর্ণিত আছে।
তিন: এই অভিমতটি মশহুর। বিবরণ দেয়ার শর্তে সঠিক। বিবরণ ছাড়া সঠিক নয়। যেমন অনির্ধারিত কোন কিছু কারো যিম্মাদারিতে থাকা। এটি ইমাম মালেকের অভিমত।”[মাজমুউল ফাতাওয়া (২৫/২৯) থেকে সমাপ্ত]
এই আলোচনা হলো পণ্যটির বিবরণ না দেয়া হলে।
আর পণ্যটিকে জানার জন্য সেটার বিবরণ দেয়া হলে কিংবা ছবি দেয়া হলে এবং পণ্যটি সম্পর্কে জানার জন্য ছবিটি যথেষ্ট হলে; এমন বেচাবিক্রি সহিহ হওয়া দিক শক্তিশালী।
এক্ষেত্রে বাকীতে বিক্রির মূল্য নগদে বিক্রির মূল্যের চেয়ে বেশি হওয়া জায়েয। সেক্ষেত্রে এভাবে বলা যাবে: যে ব্যক্তি নগদ মূল্যে খরিদ করবে তার জন্য মূল্য ১০০। আর যে ব্যক্তি বাকীতে পণ্যটি গ্রহণ করার সময় মূল্য পরিশোধ করবে তার জন্য মূল্য ১২০। কিন্তু কোন একটি পদ্ধতিকে নিশ্চিত করা আবশ্যক। অর্থাৎ ক্রেতা কোন একটি পদ্ধতিতে ক্রয় করাকে নির্বাচন করতে পারে। যদি নির্বাচন না করে তাহলে লেনদেনকালে মূল্য অজ্ঞাত থাকার কারণে বেচাবিক্রি সহিহ হবে না।
২। বিবরণ প্রদেয় পণ্য ক্রয় করা; তবে পণ্যটি সুনির্দিষ্ট নয়। যেমন কোন কোম্পানী থেকে একটি মোবাইল সেট খরিদ করা; যার কাছে একই ডিজাইনের কিংবা একই ভার্সনের অনেকগুলো মোবাইল সেট রয়েছে। এটি হচ্ছে (গুণমানের) বিবরণ দেয়া একটি পণ্য ক্রয় করা। যদি তখন ক্রয় করা সম্পন্ন হয় তাহলে লেনদেনের মজলিসে এর মূল্য পরিপূর্ণভাবে পরিশোধ করা আবশ্যকীয়। কেননা এ ধরণের লেনদেন কেবল সালাম পদ্ধতি ছাড়া বৈধ নয়; আর সেটা কেবল সে সব পণ্যের ক্ষেত্রে সংঘটিত হতে পারে যেগুলোকে বিবরণ দেয়ার মাধ্যমে বিধিবদ্ধ করা যায়। তবে শর্ত হলো পরিপূর্ণ মূল্য লেনদেনের মজলিসে পরিশোধ করতে হবে; যেমন যদি ব্যাংক একাউন্টে ডিপোজিট করে দেয়া হয়।
এক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির কোন সুযোগ নেই; কেননা মূল্য যখন পরিশোধ করা হয় তখন পণ্যটি বিক্রেতার কাছেই থাকে।
৩। বিবরণ প্রদেয় পণ্য ক্রয় করা এই শর্তে যে, পণ্যটি গ্রহণ করার সময় মূল্য পরিশোধ করা হবে। এই লেনদেনে কোন আপত্তি নেই; যদি পণ্যটি গ্রহণ করার সময় ক্রয়বিক্রয়ের লেনদেন সম্পাদিত হয়; এর আগে নয়। আগে যেটা হয় সেটা হলো ক্রয় করার প্রতিশ্রুতি; ক্রয় নয়। যখন পণ্যটি ক্রেতার কাছে পৌঁছবে এবং ক্রেতা পণ্যটি দেখবে তখনই ক্রেতা পণ্যটি খরিদ করবে এবং মূল্য পরিশোধ করবে।
পণ্যটি ক্রেতার কাছে পৌঁছার পর সেটি বিক্রি করা: উপস্থিত পণ্য বিক্রি।
এক্ষেত্রে পণ্যটি ক্রেতার কাছে পৌঁছার আগে বিক্রি করা জায়েয হবে না। কেননা সেটা বিবরণ প্রদেয় পণ্য এবং এর মূল্য লেনদেনের মজলিসে পরিশোধ করা হয়নি। এমনটি হলে তখন সেটা ঋণকে ঋণ দিয়ে বিক্রি করার মধ্যে পড়বে।
ইবনে কুদামা বলেন:
ইবনুল মুনযির বলেছেন: “আলেমগণ এই মর্মে ইজমা করেছেন যে, ঋণ দিয়ে ঋণ বিক্রি করা নাজায়েয। ইমাম আহমাদ বলেন: এটি ইজমা। আবু উবাইদ তাঁর ‘আল-গারীব’ নামক গ্রন্থে বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম كالي কে كالي দিয়ে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। তিনি এর ব্যাখ্যা করেছেন ঋণকে ঋণ দিয়ে বিক্রি করা। তবে আছরাম ইমাম আহমাদ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: এ ব্যাপারে কি কোন হাদিস সহিহ? তিনি বলেছেন: না।[আল-মুগনী (৪/৩৭) থেকে সমাপ্ত]
অতএব, পণ্য যখন ক্রেতার কাছে হাজির হবে তখনই তারা উভয়ে কেনাবেচার লেনদেনটি সম্পন্ন করবেন।
পূর্বোক্ত আলোচনার মাধ্যমে পরিস্কার হয়ে গেল যে, কেবল প্রথম রূপটি ছাড়া অন্য রূপগুলোর ক্ষেত্রে মূল্য বৃদ্ধি করা কিংবা বিলম্ব ফি প্রদান করার কোন সুযোগ নাই; যেই রূপটিতে নির্দিষ্ট কোন একটি পণ্য নগদ মূল্যে কিংবা বাকীতে পরিশোধযোগ্য মূল্যে বিক্রি করা হয়; তবে লেনদেনের সময় দুটোর কোন একটি মূল্যকে নির্দিষ্ট করে নিতে হবে।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।