আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
রাজঈ তালাক্বপ্রাপ্তা নারীর স্বামীর বাসা থেকে স্বামীর অনুমতিক্রমে অন্যত্র স্থানান্তরিত হওয়া
রাজঈ তালাক্বের ইদ্দত পালনকারী নারীর স্বামীর বাসায় থাকা আবশ্যক। স্বামীর বাসা থেকে বের হওয়া নাজায়েয এবং স্বামীও তাকে তার বাসা থেকে বের করতে পারবে না। এক্ষেত্রে তাদের সন্তুষ্টি কিংবা তালাক্বের পর স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে অনুমতি দেয়া ধর্তব্য নয়। কেননা স্বামীর বাসায় থাকা এটি আল্লাহ্র অধিকার।
বাদায়েউ সানায়ে’ গ্রন্থে (৩/২০৫) বলেন:
“আল্লাহ্ তাআলার বাণী: ‘তোমরা যেখানে বাস কর তাদেরকেও সেখানে বাস করাও’। বাস করানোর নির্দেশ দেয়াটা বের করে দেয়া ও বের হয়ে যাওয়া থেকে নিষেধাজ্ঞা। কেননা রাজঈ তালাক্বের পরও সে নারী তার স্ত্রী। যেহেতু সবদিকের বিবেচনা থেকে বিবাহের মালিকানা বহাল রয়েছে। তাই তালাক্বের পূর্বের অবস্থার মত তার জন্য বের হওয়া বৈধ নয়। কিন্তু তালাক্বের পরে স্বামী বের হওয়ার অনুমতি দিলেও স্ত্রীর জন্য বের হওয়া জায়েয হবে না; তালাক্বের পূর্বের অবস্থার সাথে এটাই ব্যতিক্রম। কেননা তালাক্বের পরে বের হওয়ার নিষেধাজ্ঞা ইদ্দতের কারণে। আর ইদ্দতের মধ্যে আল্লাহ্র অধিকার রয়েছে। যা স্বামী বাতিল করার অধিকার রাখে না। কিন্তু তালাক্বের পূর্বের অবস্থা এর ব্যতিক্রম। কেননা সেখানে সেই নিষেধাজ্ঞা খাসভাবে স্বামীর অধিকারের সাথে সম্পৃক্ত। তাই স্বামী বের হওয়ার অনুমতি দিয়ে নিজের প্রাপ্য অধিকারকে বাতিল করতে পারেন।”[সমাপ্ত]
আল-ফাওয়াকেহ আদ-দানি (২/৯৮)-তে বলেন: “ইদ্দত পালনকারী নারীর জন্য জায়েয নয় (অর্থাৎ হারাম) তার ঘর থেকে বের হওয়া; যে ঘরে সে ইদ্দতের পূর্ব থেকে ছিল। বরং মৃত্যুর পূর্বে কিংবা তালাক্বের পূর্বে যদি স্বামী স্ত্রীকে অন্যত্র স্থানান্তর করে এবং এ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে স্বামীকে অভিযুক্ত করা যায়: তাহলে স্ত্রীর উপর ফেরত যাওয়া আবশ্যক। কিংবা মৃত্যুর পূর্বে বা তালাক্বের পূর্বে অন্যত্র থাকলে...।
খলিল বলেন: পূর্বে যেখানে থাকত সেখানেই থাকবে। যদি স্বামী স্ত্রীকে স্থানান্তর করে এবং এতে স্বামীকে অভিযুক্ত করা যায় কিংবা অন্যত্র থাকে তাহলে স্বামীর ঘরে ফিরে আসবে।[সমাপ্ত]
ক্বালয়ুবী ও আমিরার রচিত টীকাগ্রন্থে (৪/৫৬) আছে: “বিচ্ছেদের সময় যে ঘরে ছিল সে ঘরেই থাকবে। স্বামী বা অন্য কারো তাকে বের করে দেয়ার অধিকার নেই। আর সে নিজেও সে ঘর থেকে বের হয়ে যাবে না। যদি কোন প্রয়োজন ছাড়া অন্যত্র স্থানান্তরিত হওয়ার জন্য স্বামীর সাথে ঐক্যমত করে তাহলে সেটা জায়েয হবে না। শাসকের কর্তব্য এতে বাধা দেয়া। কেননা ইদ্দতের মধ্যে আল্লাহ্র অধিকার রয়েছে। যা ঐ আবাসটির সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: ‘তাদেরকে তাদের ঘরসমূহ থেকে বের করে দিবে না এবং তারাও বের হয়ে যাবে না।’ ঘরগুলোকে তাদের দিকে সম্বন্ধ করা হয়েছে এদিক থেকে যে, সেগুলো তাদের আবাসস্থল। আন-নিহায়াতে বলেন: রাজঈ তালাক্বপ্রাপ্তা স্ত্রী এ ক্ষেত্রে অন্য স্ত্রীদের মত।”[সমাপ্ত]
শারহু মুনতাহাল ইরাদাত গ্রন্থে (৩/২০৬) বলেন:
“রাজঈ তালাক্বপ্রাপ্তা নারী তালাক্ব প্রদানকারীর বাসায় অবস্থান করার ক্ষেত্রে —শোক পালনের ক্ষেত্রে নয়— বিধবা নারীর মত। এটি ইমাম আহমাদের সরাসরি উদ্ধৃতি। যেহেতু আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “তাদেরকে তাদের ঘরসমূহ থেকে বের করে দিবে না এবং তারাও বের হয়ে যাবে না।” [সূরা তালাক্ব, আয়াত:২] চাই তালাক্বপ্রদানকারী তাকে বের হয়ে যাওয়ার অনুমতি দিক কিংবা না দিক। কেননা এটি ইদ্দতের অধিকার। ইদ্দত আল্লাহ্র অধিকার। এই অধিকারের কোন কিছু স্বামী বাদ দেয়ার মালিক নয়; যেমনিভাবে স্বামী ইদ্দতকে বাদ দেয়ার মালিকও নয়।[সমাপ্ত]
দুই:
রাজঈ তালাক্বপ্রাপ্তা নারীর তালাক্বের পূর্বেই অন্য বাসায় স্থানান্তরিত হওয়া
যদি তালাক্বের পূর্বে স্ত্রী স্থায়ীভাবে থাকার জন্য —বেড়ানোর জন্য নয়— অন্য কোন বাসায় স্থানান্তরিত হয় এবং সেটা স্বামীর অনুমতি সাপেক্ষে হয়: তাহলে স্ত্রী সেখানেই ইদ্দত পালন করবে।
আর যদি সেখানে স্থানান্তর হওয়া স্বামীর অনুমতি সাপেক্ষে না হয়ে থাকে তাহলে তিনি স্বামীর বাসায় ফিরে আসবেন। তবে শাফেয়ি মাযহাবে: তালাক্ব দেয়ার পরেও যদি অনুমতি দেয় তাহলে সেটা আগে থেকে স্থানান্তরিত হওয়ার অনুমতি দেয়ার মত হওয়ায় ফিরতে হবে না।
শাফেয়ি (রহঃ) ‘আল-উম্ম’ গ্রন্থে (৫/২৪৩) বলেন: যদি স্বামী স্ত্রীকে নিয়ে যে ঘরে থাকত সেখান থেকে তাকে অন্যত্র স্থানান্তর করে; এরপর স্ত্রী সেই স্থানান্তরিত ঘরে থাকাবস্থায় স্বামী তাকে তালাক্ব দেয় কিংবা স্বামী মারা যায় তাহলে স্ত্রী সেই স্থানান্তরিত ঘরে ইদ্দত পালন করবেন কিংবা স্বামী যদি তাকে সেখানে স্থানান্তরিত হওয়ার অনুমতি দেয়...।
তিনি আরও বলেন: স্বামী তাকে নির্দিষ্ট কোন ঘরে স্থানান্তরিত হওয়ার অনুমতি দিক কিংবা বলুক যে, তুমি যেখানে ইচ্ছা সেখানে স্থানান্তরিত হও কিংবা স্ত্রী অনুমতি ছাড়াই স্থানান্তরিত হয়ে যায় পরবর্তীতে স্বামী তাকে ঐ ঘরে অবস্থান করার অনুমতি দিয়ে দেয়। স্ত্রীর ইদ্দত পালনের ক্ষেত্রে এই সকল অবস্থা সমান।
তিনি আরও বলেন: আর যদি স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্থানান্তরিত হয়; এরপর স্বামী তালাক্ব দেয়ার আগে কিংবা মৃত্যুর আগে আর কোন অনুমতি ইস্যু না করেন তাহলে স্ত্রী স্বামীর সাথে যে বাসায় থাকতেন সে বাসায় ফিরে এসে ইদ্দত পালন করবেন।”[সমাপ্ত]
‘তুহফাতুল মুহতাজ’ গ্রন্থে (৮/২৬৪) বলেন: “হ্যাঁ; স্ত্রী স্থানান্তরিত হওয়ার পর স্বামী যদি তাকে সেখানে অবস্থানের অনুমতি দেয় তাহলে সেটা অনুমতি নিয়ে স্থানান্তরের মত।”
শারওয়ানি রচিত ‘তুহফাতুল মুহতাজ’-এর টীকা-গ্রন্থে এসেছে: “‘আর-রওয’ ও এর টীকা-গ্রন্থের ভাষ্য এই মর্মে সুস্পষ্ট যে, তালাক্ব ও মৃত্যু দ্বিতীয় ঘরে স্থানান্তরিত হওয়ার পরে এবং অনুমতিপ্রদান এ দুটোর পরে সংঘটিত হওয়া ধর্তব্য।
গ্রন্থকারের কথা: সেটা যেন অনুমতি নিয়ে স্থানান্তরের মত: অর্থাৎ স্ত্রী দ্বিতীয় ঘরে ইদ্দতপালন করা ওয়াজিব।”[সমাপ্ত]
ইবনে কুদামা (রহঃ) বলেন: “যদি স্বামী তাকে অন্য কোন বাড়ীতে কিংবা অন্য কোন শহরে স্থানান্তরিত হওয়ার অনুমতি দেয় এবং স্ত্রী স্থানান্তরিত হওয়ার পর স্বামী মারা যায় তাহলে স্ত্রী যেই ঘরে রয়েছেন সেই ঘরে ইদ্দত পালন করা তার জন্য অনিবার্য। কেননা সেটাই তার বাসা। চাই মালামাল স্থানান্তরের আগে স্বামী মারা যাক কিংবা পূর্বে মারা যাক। কেননা সেটাই স্ত্রীর বাসস্থান; যতক্ষণ পর্যন্ত না স্ত্রী সেখান থেকে অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়।”[আল-মুগনী (৮/১৬৯) থেকে সমাপ্ত]
আরও দেখুন: আল-ইনসাফ (৯/৩০৯)
পূর্বোক্ত আলোচনার আলোকে প্রশ্নকারী বোন যদি তালাক্বের পূর্বে স্বামীর অনুমতি নিয়ে ছেলের বাসায় স্থানান্তরিত হন তাহলে তিনি তার ছেলের বাসায় ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব।
আর যদি স্বামীর অনুমতি না নিয়ে স্থানান্তরিত হন তাহলে স্বামীর বাসায় ফিরে যাওয়া ও সেখানে ইদ্দত পালন করা আবশ্যক। তবে যদি স্বামী তাকে তার ছেলের বাসায় ইদ্দত পালন করার অনুমতি দেন; যেখানে তিনি স্বামীর পূর্ব অনুমতি ছাড়া স্থানান্তরিত হয়েছিলেন; তাহলে সেটা হতে পারে।
তিনি তিন মাস ইদ্দত পালন করবেন। কেননা হায়েযের বয়স অতিক্রান্ত নারীর ইদ্দত তিন মাস।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।